হামলাকারী ছাত্রলীগের হলে প্রমাণ দিন: কাদের

ই-বার্তা।।  শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ জড়িত থাকলে তালিকাসহ তার প্রমাণ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।সোমবার বিকালে ঢাকার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তাকে প্রশ্ন করা হলে প্রমাণ দিতে বলেন তিনি।

 

রোববার দুপুরে ধানমণ্ডির ২ নম্বর সড়কে শিক্ষার্থী ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় সেখানে কর্তব্যরত সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয় হেলমেট পরা এক দল যুবক। কিরিচ, রড হাতে ওই যুবকরা ধরে ধরে সাংবাদিক বিশেষ করে আলোকচিত্রীদের বেধড়ক পেটায়।এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, “আপনি আমাকে বলেন, ছাত্রলীগের কারা কারা জড়িত? আপনি আমাকে তালিকা দিন।”শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে অনুপ্রবেশ ঘটেছে দাবি করে তিনি বলেন, “এ ধরনের হামলায় এই লোকগুলো তো জড়িত থাকতে পারে।”

 

সংবাদ সম্মেলনে একটি ছবি দেখিয়ে কাদের বলেন, “গতকালের যে আন্দোলন, এটি ছাত্রছাত্রীদের ছিল না। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর আহ্বানে সারা দেশে সিক্রেটলি (গোপনে) প্রচার হয়েছে। এ কারণে সারা দেশ থেকে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা ঢাকায় আসে।“শিবির-ছাত্রদলের ক্যাডাররা অস্ত্র নিয়ে শাহবাগ থেকে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত পরে সায়েন্স ল্যাব থেকে বিজিবি গেট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কার্যালয় হামলার টার্গেট করে এসেছিল।”গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজ শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার পর স্কুল ও কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে নামার পর রাজধানীর সড়ক অচল হয়ে পড়ে।

 

আন্দোলনের সপ্তম দিনে গুজব শুনে একদল শিক্ষার্থী ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে এগোলে দলটির কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে ধানমণ্ডির দিকে এগোলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে।কাদের বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না সাধারণ শিক্ষার্থীরা অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই, আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা করার কোনো এজেন্ডা নেই। এই এজেন্ডা তাদের, যারা এই আন্দোলনের ওপর ভর করে তাদের রাজনৈতিক দাবা খেলায় মেতে উঠেছে।”তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে কোনো আন্দোলনকারী (সড়কে) নেই। এই আন্দোলনে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। যখনই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর উসকানিমূলক বক্তব্যকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছেন, তখনই এটি দিবালোকের মতো সত্য হয়েছে।”

 

শিক্ষার্থীদের নয়টি দাবির সব কয়টি পূরণের ঘোষণা সরকার দেওয়ার পর সোমবার সড়ক পরিবহন আইন মন্ত্রিসভায় পাস হয়েছে। এটি এখন সংসদে যাবে।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, “সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত হবে, সেখান থেকে যাচাই-বাছাই শেষে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হবে। সকল স্টেকহোল্ডার ও সকলের সঙ্গে আলোচনা করে আইনটি জাতীয় সংসদে পাস করা হবে।”তিনি বলেন, আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে পাঁচ বছরের একটি বিধান রাখা হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তির যে কথা বলা হয়েছে, সেটা অপরাধের মাত্রার ওপর নির্ভর করবে।“আইনে পেনাল কোডের ৩০২ ধারা মোতাবেক মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকবে, যদি সেটা হত‍্যার উদ্দেশ্যে বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়। বিমানবন্দর সড়কে দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ৩০২ ধারার বিধান প্রযোজ্য হতে পারে।”

 

কাদের জানান, আগামী শনিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশের বিআরটিএ কার্যালয়ে গাড়ির লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়ন কার্যক্রম প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এ কে এম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, নির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি, গোলাম রাব্বানী চিনু, ইকবাল হোসেন অপু উপস্থিত ছিলেন।