হায়রে জীবন!

লাল-সাদা-কালো-নীল প্লাস্টিকের বাটিতে সড়কের পাশের ফুটপাতে তখন খাবার খাচ্ছিলো একটি পরিবার। কালো হয়ে যাওয়া সাদা প্লাস্টিকের বোতলে পানিতে কয়েক ঢোক দিয়েই আবার খাওয়া শুরু। সবার সমস্ত মনোযোগ ওই প্লাস্টিকের বাটিতে, এত তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছিল, খাওয়া ছাড়া যেন পৃথিবীর সব-ই বৃথা। রাস্তার ধূলা-ময়লা, গাড়ির হর্ণ, চেচামেচি-হইচই, সড়কে মানুষের ভিড়ের মধ্যেই চলছিল অস্থায়ী, ছিন্নমূল পরিবারটির ফুটপাতে ভোজন। বাচ্চাগুলো মনে হয় বেশ কিছুদিন ধরেই গোসল-ই করেনি। চুলগুলো উস্কখুস্ক, গায়ে কালি-ধুলাবালি লেগে আছে আর পড়নের জীর্ণ পোশাকগুলোও মনে হয় ধোয়া হয়নি, অনেকদিন। অথচ শহরের অন্য বাচ্চাগুলো কেমন সাবান-শ্যাম্পু মেখে তেলে-জলে চকচক করে।

…পাশেই একটি পোটলার দিকে চোখ চলে যায়, পুরোনো কাঁথা দিয়ে কয়েকটা বালিশ পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে। ওপরের গাছের ডালে একটি মশারি বাঁধা। তারমানে এখানেই ঘুমায় ওরা। কিন্তু কিভাবে? আরও খটকা লাগে, আচ্ছা ওরা গোসল করে কোথায়, আশেপাশে তো কোনো বাথরুম দেখলাম না, তাহলে কিভাবে…? আরও কত প্রশ্ন জাগে, ওরা কোথায় থেকে এসেছে, ওরা এখানে কেন, এভাবে আর কতদিন থাকতে হবে ওদের?

শহরের রাস্তায় পাশে যারা থাকে, খায়, ঘুমায় তাদের জীবনযাপনের চিত্র নিজ চোখে দেখে মনের ভেতর হা হা করে ওঠেনি এমন মানুষের সংখ্যা মনে হয় খুব কম। মনে হয়, ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ মানুষ-ই যখন তাদের যাপিত জীবনের সাথে রাস্তার মানুষের জীবনের বৈষম্যগুলো, পার্থক্যগুলো গভীরভাবে উপলব্ধি করে তখন গোপনে গোপনে মন খারাপ হয় তাদের। কেউ কেউ মনে হয় বলেই ফেলে, হায়রে জীবন!
এসব ভাবতে ভাবতে রিক্সায় চুপচাপ চলে গেল বেসসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথশ বর্ষের ছাত্রী মণিকা।

লেখকঃ তারিকুল হাসান, সাংবাদিক