১০ বছর আগে করোনার পূর্বাভাস দিয়েছিল যে চলচ্চিত্র

সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ জন।

চীনের এই রহস্যময় ভাইরাসের গল্প নিয়ে ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটি মোটামুটি সফলতা পেয়েছিল। আর ২০২০ সালে এসে সেটি ‘হিট’ হয়ে ওঠে। চলচ্চিত্রটির গল্প আর বাস্তবতার সঙ্গে অবিশ্বাস্য মিল দেখা গেছে।

২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র কনটেজিয়নকে কোনোভাবেই ব্লকবাস্টার বা ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র বলা যাবে না। যদিও বেশ কয়েকজন তারকাকে নিয়ে চলচ্চিত্রটি তৈরি হয়েছিল।

যাদের মধ্যে রয়েছেন- ম্যাট ডেমন, গিনেথ প্যালট্রো, জুডি ল, কেট উইনস্লেট এবং মাইকেল ডগলাস। তার পরও সেটি ওই বছরের ব্যবসায়ের দিক থেকে ৬১তম হয়েছিল।

৯ বছর পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফিরে এসেছে ‘কনটেজিয়ন’। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপল আইটিউন স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া ছবির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চলচ্চিত্রটি। সেই সঙ্গে গুগল সার্চের তালিকায় শীর্ষে চলচ্চিত্রটির নাম খোঁজার প্রবণতাও বাড়ছে।

কনটেজিয়ন চলচ্চিত্র তৈরি করেছে ওয়ার্নার ব্রাদারস। তারা বলেছে, চীনে যখন প্রথম করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তখন বিশ্বের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের তালিকায় এটির অবস্থান ছিল ২৭০তম।

তিন মাস পর কনটেজিয়নের জায়গা হয়েছে নবম অবস্থানে। তার সামনে রয়েছে শুধু হ্যারি পটার সিরিজের আটটি চলচ্চিত্র। এর একমাত্র কারণ হলো– করোনাভাইরাস। প্রায় এক দশক আগে তৈরি চলচ্চিত্রটির কাহিনির সঙ্গে বর্তমান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের অনেক মিল রয়েছে।

চলচ্চিত্রটিতে একজন নারী ব্যবসায়ী (গিনেথ প্যালট্রো অভিনয় করেছেন) একটি রহস্যময় এবং মারাত্মক ভাইরাসে মারা যান। চীনে সফরের সময় তিনি ওই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় পর্যন্ত ওই ভাইরাসের ব্যাপারে কোনো সতর্কতা জারি করা হয়নি।

কনটেজিয়নের দর্শকরা বলছেন, বর্তমান বাস্তব জীবনের ভাইরাস সংক্রমণ যেমন চীন থেকে শুরু হয়েছিল, তেমনি চলচ্চিত্রটির এ রকম কাহিনির মিলের কারণেই সেটির জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

সেই আগ্রহ আরও বেড়েছে গিনেথ প্যালট্রোর একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টের কারণে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়ার সময় বিমানে বসে তিনি মুখে মাস্ক পরা একটি ছবি পোস্ট করেন।

সেখানে তিনি লিখেছেন– আমি এই চলচ্চিত্রটিতে আছি। নিরাপদ থাকবেন। করমর্দন করবেন না। নিয়মিত হাত ধোবেন।

কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রের মতো চীনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, মানব শরীরে কোভিড-১৯ রোগের বিস্তার হয়েছে পশু থেকে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ডিসেম্বর মাস নাগাদ চীনের উহান শহরে পশু থেকে মানব শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি ছড়াতে শুরু করে।
এটিও ধারণা করা হয় যে, করোনাভাইরাস বাদুড়ের মাধ্যমে বিস্তার ঘটেছে। যেমনটি ঘটেছিল সার্স মহামারীর ক্ষেত্রে ২০০২-০৩ সালে। যেভাবে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে, চলচ্চিত্রের কল্পিত ভাইরাসটিও একে অপরকে স্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

কল্পিত ভাইরাস ও বাস্তবের ভাইরাসের মধ্যে একটি মিল হলো– উভয়ের বিস্তারই বাদুড় থেকে ঘটেছে। কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রে এমইভি-ওয়ানে আক্রান্ত হয়ে এক মাসের মধ্যেই বিশ্বে দুই কোটি ৬০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। তবে চীনে তিন মাস আগে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটার পর এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা চার হাজার হয়নি।

কনটেজিয়নের এই ফিরে আসার ব্যাপারটি অবাক করেছে চিত্রনাট্যকার স্কট যি বার্নসকে।

তবে ফরচুন ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রের মূল আইডিয়াটি ছিল এটিই তুলে ধরা যে, এ ধরনের প্রাদুর্ভাবের জন্য আধুনিক সমাজ কতটা অসহায় হয়ে পড়ে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা