একটি অত্যাধুনিক বিশ্বকাপ আয়োজনে প্রায় প্রস্তুত কাতার!

ই-বার্তা।। উদ্বোধনের দিনক্ষণ নিয়ে শুরুতে কিছুটা ধোঁয়াশা থাকলেও ইতিমধ্যে সেটা চূড়ান্ত করে দিয়েছে ফিফা। ঘোষিত সিডিউল অনুযায়ী ২১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১৮ ডিসেম্বর শেষ হবে টুর্নামেন্টটি। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে বিশ্বকাপের আসরগুলো হলেও কাতারের বৈরী আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে ফিফা শীতকালে বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ গ্রীষ্ফ্মকালে দেশটিতে তাপমাত্রা সাধারণত ৪০ ডিগ্রির মধ্যে থাকে। আর শীতকালে সেটা নেমে আসে ২৫ ডিগ্রির মধ্যে।

 

দু’দিন আগে শেষ হয়েছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে’র একুশতম আসর।চার বছর পর মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশ কাতারে গড়াবে ২০২২  বিশ্বকাপ । বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে ঘোষণা করার পর পরই উঠেছিল সমালোচনার ঝড়। এ নিয়ে ফিফার তৎকালীন অফিসিয়ালদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। শোনা যায়, মোটা অর্থের বিনিময়ে কাতারের কাছে তারা হোস্ট বিক্রি করেছে। পাশাপাশি নির্মাণ কাজে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের নানা ক্ষেত্রে অবহেলার নালিশ করে বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। ইংলিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনেও উঠে আসে ভয়াবহ কিছু চিত্র। তাদের দাবি, ‘বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দেশি-বিদেশি অনেক শ্রমিক কাতারে কাজ করছেন। যাদের ঠিকমতো খাবার ও বেতন দেওয়া হচ্ছে না। তাড়াহুড়ার মধ্যে কাজ শেষ করতে গিয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না নিয়ে অনেকে কাজ করছেন। যে কারণে এ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার শ্রমিক মারা গেছেন।

 

এদিকে কাতার বিশ্বকাপের আয়োজক কমিটি বলছে, ‘শ্রমিকের স্বার্থ বিবেচনা করে নতুন চুক্তি করেছে কাতার। যেখানে এসব বিষয় গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তবে সব সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে সময়ের আগে পুরোপুরি প্রস্তুত হতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে কাতার। ইতিমধ্যে আটটি স্টেডিয়াম বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করছে তারা। যেগুলো সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবে। ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খেলতে পারার নিশ্চয়তা দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।জার্মান আর্কিটেক্ট আলবার্ট স্পিনারের নকশা অনুযায়ী আট স্টেডিয়ামের মধ্যে সবচেয়ে বড় লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম। যার দর্শক ধারণক্ষমতা ৮৬ হাজার ২৫০ জন। ২০২১ সালের মধ্যে এই স্টেডিয়ামের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে আয়োজক কমিটি। এরপরে আছে আল-বাইত স্টেডিয়াম, যার ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার। বাকি ছয় স্টেডিয়াম অনেকটা একই মাপের।

 

আটটি স্টেডিয়ামের মধ্যে খলিফা ইন্টারন্যাশনার স্টেডিয়ামের কাজ শেষ। প্রায় ৪৮ হাজার দর্শক একসঙ্গে বসে খেলা দেখতে পারবে এই ভেন্যুতে। পাঁচটির কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। বাকি দুটির মধ্যে একটি বিশ্বকাপের জন্য সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। অবশ্য আপাতত আটটি স্টেডিয়াম ফিফার কাছ থেকে গ্রিন সিগনাল পেলেও এই সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। এ প্রসঙ্গে ভেন্যুর নির্বাহী পরিচালক ঘানিম আল কুয়ারি বলেছেন, ‘প্রথম ভেন্যু হিসেবে খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের কাজ আমরা শেষ করেছি। যার মাধ্যমে ২০২২ বিশ্বকাপ আয়েজনের নতুন একটা দ্বার উন্মোচন হলো। বাকি সাতটির কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। আশা করি সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। প্রথমবারের মতো কোনো উপসাগর রাষ্ট্রে হবে বিশ্বকাপের মতো আসর। এ কথা চিন্তা করে প্রাকৃতিকভাবে সৌন্দর্য আনার চেষ্টা করছে আয়োজক দেশটি। গাছ রোপণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সজ্জায় মনোযোগ দিচ্ছে তারা। বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটির প্রধান হাসান আল-থাওয়াহাদি আশ্বস্ত করেছেন, ‘সবাই মন দিয়ে কাজ করছে।

 

যত দ্রুত সম্ভব এটা শেষ করা যায়। আমরা চাই সবাইকে চমকে দিতে। দারুণ একটা আয়োজন ফুটবল বিশ্বকে উপহার দিতে। আয়োজক দেশটির পাশে রয়েছে এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনও। গতকাল এএফসির প্রেসিডেন্ট শেখ সালমান বিন ইবরাহিম আল-খলিফাও একই সুরে কথা বলছেন, ‘ফুটবল বিশ্ব অনেক দিন মনে রাখবে কাতার বিশ্বকাপকে। সেই লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে আয়োজকরা।’ রাশিয়ার আয়োজনকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার আয়োজনটা সত্যিই সবার নজর কেড়েছে। এশিয়া অঞ্চলের পক্ষ থেকে আমি তাদের ধন্যবাদ দিচ্ছি। আমি জানি ২০২২ বিশ্বকাপের জন্য এশিয়া প্রস্তুত, বিশ্বকে একটা চমৎকার আয়োজন দেখাতে প্রস্তুত কাতার। প্রতিটি বিশ্বকাপেই কিছু না কিছু নতুনত্ব, কিছু ম্যাজিক থাকে। আমরাও সেটার ব্যতিক্রম হতে চাই না। আমার মনে হচ্ছে, মনোমুগ্ধকর একটা বিশ্বকাপ দেখার অপেক্ষায় আছে সবাই।

 

 

ই-বার্তা/ডেস্ক রিপোর্ট