দাউদ ইব্রাহিমকে চেনা যাবে তো?

 

 

তাকে ধরা কঠিন। চেনা বোধহয় আরও কঠিন।

কথা হচ্ছে দাউদ ইব্রাহিমকে নিয়ে। ১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণের অন্যতম চাঁইকে লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশে ফিরিয়ে আনতে চায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু প্রশ্ন হল, দাউদকে চেনা যাবে তো? গত দেড় দশকের উপরে কার্যত লোকচক্ষুর আড়ালে রয়েছে দাউদ। গোয়েন্দাদের একাংশের আশঙ্কা প্লাস্টিক সার্জারি করে নিজের মুখও বদলে ফেলে থাকতে পারে ওই ডন।

 

ঠিক দশ বছর আগে মুম্বই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মুম্বই মামলায় অভিযুক্ত তথা দাউদ ঘনিষ্ঠ আব্দুল কায়েম শেখ। দাউদের ছেলের বিয়েতে আমন্ত্রিত থাকলেও সে যাত্রায় করাচি যায়নি শেখ। পুলিশকে শেখ জানায়, বিয়েতে না গেলেও দুবাইতে একাধিক বার দাউদের সঙ্গে দেখা করেছে সে। শেখের দাবি, ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্লাস্টিক সার্জারি করায়নি দাউদ। কেবল নিজের যে মোটা গোঁফ ছিল, সেটা কামিয়ে ফেলেছে সে। ডন ওজনও কমিয়েছে অনেকটা।

 

তবে গত দশ বছরে গঙ্গা-সিন্ধুতে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। দাউদ প্রশ্নে পাকিস্তানের উপরে আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। তাই প্লাস্টিক সার্জারি করার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দাদের একাংশ। ফলে সংশয় রয়েছে তার নতুন চেহারা নিয়েও। কেন্দ্রের একটি শীর্ষ সূত্রের মতে, দাউদকে দেশে ফেরাতে সর্বাত্মক ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। মার্কিন প্রশাসনের পাশাপাশি পাকিস্তানের উপরে চাপ বাড়াতে সৌদি আরবের সঙ্গেও প্রত্যর্পণের প্রশ্নে আলোচনা চালাচ্ছেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কথায়, ‘‘গত চার বছর ধরে আমরা এ ব্যাপারে সক্রিয় রয়েছি। আশা করি এ কাজে আমরা সফল হব।’’

 

নির্বাচনে রাজনৈতিক ফায়দা নিতেই বিজেপি দাউদকে ফেরাতে চাইছে। কিন্তু ফারুক টাকলার মতো ডন সঙ্গীদের দেশে ফেরানো গেলেও জীবিত দাউদ ইব্রাহিমকে ইসলামাবাদ ভারতের হাতে তুলে দেবে, এমন আশা করতে রাজি নন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরই অনেক কর্তাও। দাউদকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার অর্থ হল নয়াদিল্লি এ যাবৎ তাকে নিয়ে যে একাধিক নথি পাক সরকারকে দিয়েছে তার সত্যতা প্রমাণ হওয়া। এমনিতেই পাক পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদিরের লিবিয়া, ইরানকে পরমাণু বোমা বানাতে সাহায্য করা এবং হাফিজ সইদ, মাসুদ আজহারের মতো জঙ্গি নেতাদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি নিয়ে গোটা বিশ্বের কাছে অস্বস্তিতে পাকিস্তান। এরই মধ্যে দাউদকে নিয়ে নতুন করে হাত পুড়িয়ে মোদীকে সুবিধে করে দিতে চায় না ইসলামাবাদ।

 

অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী আমেরিকার কাছে পাক জঙ্গিদের একটি তালিকা তুলে দিয়েছিলেন। তারপরেই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় দাউদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু ভারত মনে করে, ওসামা বিন লাদেনের মতো দাউদকে ধরার প্রশ্নে ততটা আন্তরিক নয় আমেরিকা। এই ছবিটি বদলাতে চায় ভারত। প্রশ্ন হল দাউদ কোথায় রয়েছে। ভারতের দাবি, পাকিস্তানেই ডেরা পাল্টে পাল্টে রয়েছে দাউদ। আগ্রা শীর্ষ বৈঠকে তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ আডবাণীকে জানিয়েছিলেন, দাউদ পাকিস্তানে নেই। দেড় দশক পরে আজও পাকিস্তানের সরকারি অবস্থান হল, দাউদ তাদের দেশে নেই।