দীপ্তিময়ী দীপা


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২৫শে মে ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার  | বিকাল ০৩:১৮ গদ্য

রাকিবুল ইসলাম।।

সকালে দীপার ডাকে ঘুম ভাঙলো। চোখ খুলে আমি কিছু বলার আগেই বলল, কি ব্যাপার! এত বেলা করে ঘুমালে কাজে যাবেন কখন?
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম ৯ টা ৫।

কয়েকদিন হলো আমার কি যেন হয়েছে। কাজ কর্ম কিছুই ভালো লাগছেনা। ঘুম এখন আর কোনভাবেই যেন ক্লান্তি কাঁটাতে পারছেনা।
বললাম, না দীপা, কাজ আর ভালো লাগেনা আমার। সব বাদ দিয়ে এখন শুধু শুয়ে বসেই দিন পার করব।
তা বললে কিভাবে হবে? বলেই মুখ বেঁকিয়ে অভিনয়ের ভাব করল দীপা। ওর আচরণই যে এমন! সহজ, প্রাণচঞ্চল। আর হাসি তো চিরকাল উন্মুক্ত!

ছয় মাস আগে দীপা যেদিন প্রথম কাজের মেয়ে হয়ে এসেছিল, সেদিন অনেকটা অবাক হয়েছিলাম। মনে কেবল একটাই ভাবনা, এত সুন্দরী কেউ কাজের মেয়ে হয় কিভাবে! এটা ঠিক না।

আরও কয়েকদিন যেতেই ওর কথায় কথায় আমি শুধু অবাকই হতে থাকলাম। বিষয়টা মুগ্ধতার!
অল্প বয়সেই পান চিবিয়ে চিবিয়ে দাঁত পুরো লাল করে ফেলেছে। আমি একদিন শুধু বললাম, দাঁত যদি এত লাল হয় তবে তো বিয়ের সময় কোন ছেলে পছন্দই করবেনা।
দীপা যেন কথাটা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিল। সাথে বলল, হুঁহ্, ও আপনি ভাববেন না, যে ছেলে আমার লাল দাঁত পছন্দ করবেনা, আমিই ওকে বিয়ে করবনা।

দীপার এই উদাসীনতা আমাকে বেশ হাসিয়েছিল। অনেকটা ভাবিয়েছিলোও বটে। তবে আসলে কি ভেবেছিলাম তা আমি জানিনা।

দীপার অনেক গুণ! যে বিষয়টা সবচেয়ে দৃশ্যমান তা হলো ওর কোমরে শক্তভাবে শাড়ি প্যাঁচানো। দেখলেই মনে হয় কতটা দায়িত্ব এমন সহজেই দুমড়ে মুচড়ে পেঁচিয়ে ফেলতে পারে। আস্থা যেন পরিপূর্ণ!
ও যখন রান্নাঘরে বসে সবজি কাটতে সময় বিরতিহীন ঘামতে থাকে তখন জানালার আলোতে উজ্জ্বল ঐ মুখ দেখলে কেবল মনে হয় যেন একটু একটু করে মোম গলে যাচ্ছে।
ততদিনে মনে মনে আমার একটা প্রশ্ন জমেছে বিধাতার প্রতি। আচ্ছা! দীপা যদি কোন বড়লোকের ঘরে জন্মাতো তবে কি বিধাতার বিন্দুমাত্রও ক্ষতি হতো?
যদি তেমন হতো তবে দীপা ওর রুপের অনেকটা যত্ন করতে পারতো, মনের মতো সাজতে পারতো।

আমার হঠাতই যেন মনে হতে থাকলো আমি দীপাকে কিছু বলতে চাই, কিন্তু আসলে কি বলতে চাই সে আমার ভাবনায় হারিয়ে যেতে থাকলো। বলা আর হলো না।
অবশ্য দীপা একদিন নিজেই কিছু বলল।

খুব তো বলছিলেন, আমার লাল দাঁত দেখে নাকি কোন ছেলে পছন্দ করবেনা! কিন্তু কি হলো! বিয়ে তো ঠিক হয়ে গেল।

কথাগুলো শুনে আমার ভেতরে কেমন যেন অদ্ভুত রকমের ভারী অনুভূতি হতে থাকলো। কিন্তু এমন কেন?

নাকি যে দীপাকে আমি কিছুই বলতে পারিনি, সে ঠিকই নিরবে আমার মন- প্রাণ আক্রমণ করে বসে আছে। তবে শেষ শুধু একটা কথাই মনে হয়, দীপার মতো মেয়েদের জন্মই হয় রুপ দিয়ে রাজত্ব করবার জন্য। যে রাজত্বে আমাকে চিরকাল ক্রীতদাস করে রাখতে পারে নির্দ্বিধায়।

সর্বশেষ সংবাদ

গদ্য এর আরও সংবাদ