চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল,মাদ্রিদ-জুভেন্টাস?


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৩রা জুন ২০১৭, শনিবার  | রাত ১১:৫৪ ফুটবল

পুরো ইংল্যান্ডে চলছে উৎসবের আমেজ। একদিকে চলছে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। অন্যদিকে আজ রাতে কার্ডিফে বসছে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল। আর তাই ফুটবলবিশ্ব আছে এক ধ্রুপদী ফাইনালের অপেক্ষায়। বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১টায় ফাইনালে মাঠে নামছে রিয়াল মাদ্রিদ-জুভেন্টাস। খেলাটি সরাসরি সম্প্রচার করবে সনি সিক্স, সনি ইএসপিএন ও টেন২।

অতীত ইতিহাস
ইউরোপিয়ান ফুটবলে ফাইনালের রাজা রিয়াল মাদ্রিদ। স্পেনের ক্লাবটি ফাইনালে যেন হারতে জানে না। টুর্নামেন্টজুড়ে নৈপুণ্য যা-ই থাকুক ফাইনালে তারা হয়ে ওঠে দুর্ধর্ষ। ক্লাব ফুটবলে ইউরোপের সেরা লড়াই উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমের আগে এই লড়াইয়ের নাম ছিল ইউরোপিয়ান কাপ। ১৯৫৫ সাল থেকে শুরু হওয়া ইউরোপিয়ান এ লড়াইয়ে প্রথম পাঁচবারের টানা শিরোপা জেতে রিয়াল মাদ্রিদ। আর এখন পর্যন্ত মোট মিলিয়ে সর্বাধিক ১১ বারের শিরোপাজয়ী দল তারা।

জুভেন্টাস এবার যে নৈপুণ্য দেখাচ্ছে তাতে শিরোপার জন্য তাদের পক্ষে বাজি ধরার লোকের অভাব হবে না। কিন্তু ফাইনালে যখন প্রতিপক্ষের নাম রিয়াল মাদ্রিদ তখন একটু ভাবনা মাথায় আসতে বাধ্য। ইউরোপের কয়েকটি মিডিয়া রিয়াল মাদ্রিদকে ‘কিং অব দ্য ফাইনালস’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

চ্যাম্পিয়ন্স লীগে এই নিয়ে তারা ১৫বার ফাইনালে উঠলো। ইউরোপের কোনো দল এত বেশিবার ফাইনালে ওঠেনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১বার ফাইনালে উঠেছে ইতালির এসি মিলান। কিন্তু তারা ৭ শিরোপার বিপরীতে হেরেছে ৪ বার। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ ১৪ বার ফাইনালে উঠে হেরেছে মাত্র তিনবার। সেগুলো ছিল ১৯৬২, ১৯৬৪ ও ১৯৮১ সালে। এরপর তারা ফাইনালে উঠেছে পাঁচবার। প্রতিবার শিরোপা জিতেছে তারা। ১৯৯৭-৯৮ সালে জুভেন্টাস, ১৯৯৯-২০০০ সালে ভ্যালেন্সিয়া আর ২০০১-০২ সালে বাার লেভারকুসেনকে ফাইনালে হারায় তারা। আর সর্বশেষ ২০১৩-১৪ ও ২০১৫-১৬ মৌসুমে তারা নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে শিরোপা জেতে তারা। এতে শেষ পাঁচবারের ফাইনালে প্রতিবার জিতেছে স্পেনের এ ক্লাবটি। জুভেন্টাসের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে এর আগে মাত্র একবার খেলেছে রিয়াল মাদ্রিদ। সেটা ছিল ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে। ১৯ বছর আগে সেবার জুভদের হারিয়ে শিরোপা জেতে রিয়াল মাদ্রিদ। এরপর জুভেন্টাস আরো দুইবার ফাইনালে উঠেছে। শিরোপার লড়াইয়ে দুইবারই হারে তারা।

২০০২-০৩ মৌসুমে এসি মিলান আর ২০১৪-১৫ মৌসুমে বার্সেলোনার কাছে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে রিয়াল যেমন দুর্ধর্ষ ঠিক তার বিপরীত অবস্থা জুভেন্টাসের। ইউরোপ সেরা এ আসরে তারা মোট ৮বার ফাইনালে উঠেছে। কিন্তু শিরোপা জিতেছে মাত্র দুইবার। তাদের সর্বশেষ শিরোপা আসে ১৯৯৬ সালে আয়াক্সকে হারিয়ে। এরপর তিনবার ফাইনালে উঠলেও প্রতিবার হতাশ হতে হয় তাদের।

এবারের লড়াই
চ্যাম্পিয়নস লিগে ফাইনালে দুই দলের সামনেই আছে অনেক সমীকরণ। যেমন আজ রিয়াল জিতলে প্রথম দল হিসেবে গড়বে শিরোপা ধরে রাখার রেকর্ড। আবার প্রথম দল সর্বোচ্চ ১২ বার শিরোপা জয়েরও রেকর্ড গড়বে গ্যালাকটিকোসরা। জিদান একবার এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন “রিয়ালের হয়ে আমি লা ডেসিমা, উনডেসিমা ও দূয়োডেসিমা জিততে চাই”। অর্থাৎ দশম, একাদশ, দ্বাদশ ট্রফি। আজ জিদানের সেই আশাও পূরণ হতে পারে।
সেই সঙ্গে আর মাত্র এক গোল করলেই ইউরোপিয়ান প্রতিযোগীতায় ৫০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করবে রিয়াল মাদ্রিদ।
রোনালদো (১০)চলমান মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। শীর্ষে থাকা মেসির(১১) থেকে মাত্র এক গোল পিছিয়ে আছেন সিআরসেভেন। আর মাত্র এক গোল করলেই টানা পাঁচবার শীর্ষ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড গড়বেন তিনি। তাই আজ ট্রফি জয়ের পাশাপাশি সেদিকেও চোখ থাকবে রোনালদোর।

বুফনেও দিকেও থাকবে সবার নজর। শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা বাদে, সম্ভাব্য সব ট্রফিই জয় করছেন এই ইতালিয়ান লিজেন্ড।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোনালদো-বুফনের পাশাপাশি আরও কিছু চরিত্র ঝলসে উঠবেন এখানে। রিয়ালের সাফল্য নির্ভর করছে মডরিচ, ক্রুস, ইস্কোর মাঝমাঠে কর্তৃত্বের উপর। জুভেন্টাস তাদের বিখ্যাত ডিফেন্স ছাড়া তাকিয়ে থাকবে দুই আর্জেন্টাইন দিবালা ও হিগুয়াইনের দিকে। কিন্তু বুফন সম্ভবত সবচেয়ে চাপে থাকবেন। কারণ হয়তো এটাই তার শেষ সুযোগ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার। ক্যারিয়ার বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে অনেক ট্রফি জেতা হয়েছে বুফনের। এই একটি ট্রফিই বাকি তার শো-কেসে ওঠার। সেটাও শেষ বেলায় এসে জিততে চান তিনি।

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে লড়াইটা হবে হাড্ডা-হাড্ডি। তাই যেই জিতুক লড়াইটা যে জমজমাট হবে তা বলাই যায়।

সর্বশেষ সংবাদ

ফুটবল এর আরও সংবাদ