ফিরে দেখা তেরো বছর আগের এই দিন


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২১শে আগস্ট ২০১৭, সোমবার  | দুপুর ০২:৪১ দেশ

ই-বার্তা।। সেদিন যা ঘটেছিল

২১ আগস্ট ২০০৪, শনিবার। বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল সেদিন। সমাবেশ শেষেই সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল হওয়ার কথা। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করতে বলেন শেখ হাসিনা নিজেই। সমাবেশে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা বক্তব্য দিতে শুরু করেন।

সময় বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” বলে বক্তৃতা শেষ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির দিকে। ঠিক তখনই শুরু হল নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগল একের পর এক গ্রেনেড। শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় ঘাতকরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তেরোটি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই রক্ত-মাংসের স্তুপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। মুহূর্তেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হলো বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। রক্তগঙ্গা বয়ে যায় এলাকাজুড়ে।

ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য বুঝতে পেরে ট্রাকে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতারা ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে মানব ঢাল রচনা করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। নেতা ও দেহরক্ষীদের আত্মত্যাগ ও সৃষ্টিকর্তার রহমতে প্রাণে রক্ষা পান শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যপুরি ১৩টি গ্রেনেড মেরেই ক্ষ্যান্ত হয়নি ঘাতকরা, গ্রেনেডের আঘাতে প্রাণ কেড়ে নিতে না পেরে ঐদিন শেখ হাসিনার গাড়িতে বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়েছিল তারা। শেখ হাসিনাকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স কর্পোরাল (অবঃ) মাহবুবুর রহমান। পরিকল্পিত ও টার্গেট করা ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গুলি ভেদ করতে পারেনি শেখ হাসিনাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাচ। তবে গাড়ির চাকায় গুলি লেগে পাংচার হয়ে গেছিল চাকা। নারকীয় এ হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে বাম কান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শেখ হাসিনার। শ্রবণশক্তি হারান তিনি। দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার


এতদিন পরেও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারনেনি।

পরিকল্পিত হামলায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে শেখ হাসিনা ফিরে এলেও সেদিন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এ ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলার পর সেদিন ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন বহু মানুষ। অসংখ্য মানুষের হাত-পা সহ মানবদেহের বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। কারোও হাত নেই, কারোও পা উড়ে গেছে। রক্তে ভিজে লাল হয়ে যায় পিচঢালা কালো পথ। সেদিন যেন আরেকটি ১৫ আগস্ট ইতিহাসের লজ্জার পাতায় যোগ হোলো।

সেদিন শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া-

খোলা ট্রাকে তৈরি মঞ্চে চেয়ার দেয়া হলেও সচরাচর টেবিল পাতা হয় না। কিন্তু সেদিন শেখ হাসিনা ট্রাকে ধাক্কাধাক্কিতে কেউ যাতে পড়ে না যায় এজন্য একটি টেবিলও পেতে দিতে বলেছিলেন। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার সময় সেই টেবিলের নিচে মাথা গুঁজে প্রথম কিছুক্ষণ জীবন রক্ষা করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। মুহূর্তের মধ্যেই নেতা-কর্মীরাও মানব প্রাচীর তৈরি করে গ্রেনেডের আঘাত থেকে নেত্রীকে অক্ষত রাখলেন। পরের মুহূর্তেই অন্য রকম প্রতিক্রিয়া দেখালেন শেখ হাসিনা। একদিকে নেতা-কর্মীরা ওই স্থান থেকে নেত্রীকে সরাতে মরিয়া কিন্তু নেত্রীর তাতে আপত্তি। তিনি একা কিছুতেই সেখান থেকে সুধাসদনে যাবেন না। সবাইকে দেখে তারপর যাবেন। একপ্রকার জোর করেই তাঁকে দ্রুত তোলা হয় তাঁর ব্যক্তিগত মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতে। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নেতা-কর্মীদের অবস্থা দেখতে তিনি ছিলেন অস্থির। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে ধানমন্ডির সুধাসদনে পৌঁছা পর্যন্ত পথে বারবারই শেখ হাসিনা বলছিলেন, “গাড়ি থামাও, আমি যাবোনা, সবাইকে দেখে তারপর যাবো”।

মানব প্রাচীর তৈরি করে নেতা-কর্মীরা যেমন প্রিয় নেত্রীর জীবন রক্ষা করেছিলেন, তেমনি শেখ হাসিনাও ছিলেন নেতা-কর্মীদের জন্য ভীষণ উদ্বিগ্ন।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মৃত্যুকূপ থেকে সেদিন শেখ হাসিনাকে সুধাসদনে ফিরিয়ে নিতে রাস্তায় আবারও কোনো হামলা হয় কিনা, সে আশঙ্কাও তাড়া করছিল নেতা-কর্মীদের মনে। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শেখ হাসিনার তখনকার নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও বর্তমান সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মেজর সোয়েব, মামুন ও জাহাঙ্গীর মিলে শেখ হাসিনাকে সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে সুধাসদনে রেখে আসেন।

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ এর আরও সংবাদ