ছোট্ট সোনামণির অসুস্থতায় করণীয়- পর্ব 8


ই-বার্তা প্রকাশিত: ১৮ই অক্টোবর ২০১৭, বুধবার  | বিকাল ০৫:০৫ মেডিকেল

ই-বার্তা।। বড়দের তুলনায় শিশুরা বেশি সংবেদনশীল হয়। বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় কম হয়। যার কারণে খুব দ্রুত তারা জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শিশুদের সাধারণ ঠান্ডা, জ্বর, কাশি হলে সহজে বোঝা যায়। কিন্তু বদহজম হলে তা বোঝা কিছুটা কষ্টকর। বড়দের মত শিশুরা তাদের শারীরিক সমস্যার কথা ভাষা প্রকাশ করতে পারে না। তবে তাঁদের বিভিন্ন লক্ষণ ও কান্নার ধরণ থেকে তা অনুমান করা যায়।
যেমন-

১। সাধারণত বদহজম হলে শিশুরা পা টান টান করে কান্না করা, পেট শক্ত হয়ে যাওয়া, খাওয়ার পর কান্না করা, অতিরিক্ত নড়াচড়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ করে থাকে।
২। পেটে অতিরিক্ত মাত্রায় গ্যাস জমে জিহ্বা বিস্বাদ হয়ে যায়। জিহ্বা পরীক্ষাকালে সাদা প্রলেপ চোখে পড়ে। মুখ দিয়ে দুর্গন্ধ আসে।
৩। শিশু কিছু খেতে চায় না। এই অবস্থায় শিশুর বমি বমি ভাব থাকে। কখনো বমি করে।

শিশুর বদহজমের কারণ-
শিশুকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার খাওয়ালে, বাসি খাবার খাওয়ালে, অতিরিক্ত ফ্রিজের খাবার খাওয়ালে, বারবার খাওয়ালে, খাবার চিবানোর সুযোগ না দিয়ে আবারো মুখে খাবার পুরে দিলে শিশু অস্বস্তি বোধ করে। এমনকি কান্নাকাটি করে। এতে শিশুর পেটে খাবার হজম হওয়ার সুযোগ পায় না। পেটে গ্যাস জমে। যখন শিশুর মুখে খাবারের বড় বড় টুকরা তুলে দেয়া হয় তখন তার গলাধঃকরণ সমস্যা ছাড়াও পাকস্থলিতে তা হজম হতে সমস্যা দেখা দেয়। কারণ এতে পাকস্থলিতে প্রচণ্ড রকম পরিশ্রম করতে হয়। তাতে প্রচুর হাইড্রোক্লোরিক এসিডের নিঃসরণ ঘটে। এতে খাবারের বেশি অংশ হজম না হয়ে বদহজম দেখা দেয়।

বাচ্চাদের বদহজম কমানোর উপায়-
মূলত পেটের গ্যাস থেকে শিশুর বদহজম হয়। শিশুকে ডাক্তারের কাছে নেবার আগে বা কোন ঔষধ খাইয়ে দেয়ার আগে ঘরোয়া উপায়ে শিশুর বদহজম কমানোর চেষ্টা করুন। ঘরোয়া এই উপায়গুলো বেশ কার্যকর।

১। গ্যাস বের করুন
নবজাতক শিশুর পেটের গ্যাস কমানোর জন্য খাওয়ার পর পর পেট থেকে বাতাস বের করে দিতে হবে। দুধ খাওয়ানোর সময় লক্ষ্য রাখবেন, ফিডারে নিপল অথবা স্তনবৃন্ত যেন শিশুর মুখে সম্পূর্ণভাবে প্রবেশ করে। মুখের ভিতর যেন বাতাস ঢুকতে না পারে। দুধ খাওয়ানোর পর মায়ের ঘাড়ের বাঁ পাশে বা ডান পাশে নিয়ে শিশুর পিঠের ওপর থেকে নিচের দিকে হাত বুলিয়ে দিতে হবে। এতে পেটের গ্যাস বের হয়ে যাবে।

২। ব্যায়াম করান
ব্যায়াম শব্দটি শুনে ঘাবড়ে গেলেন? ভাবছেন এত ছোট শিশুকে কীভাবে ব্যায়াম করাবেন? শিশুর পা দুটি সাইকেল চালানোর মত আগা পিছনে করুন। এটি শিশুর পেটে চাপ সৃষ্টি করবে, যা গ্যাস বের করতে সাহায্য করে। এক ঘন্টা পর পর এটি করুন। এছাড়া শিশুর পেটে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। শিশুকে উপর করে পিঠেও আলতো ম্যাসজ করতে পারেন। এটিও শিশুর পেট থেকে গ্যাস বের করে দিবে।

৩। সরিষা তেল
সরিষা তেলে কয়েক কোয়া রসুন দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বাল দিন। চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। কুসুম গরম অবস্থায় তেলটি শিশুর পেটে ম্যাসাজ করুন। সরিষার তেল পেটে রক্ত চলাচল সচল রাখে এবং পেটের গ্যাস ও ব্যথা কমিয়ে দেয়।

৪। গরম তোয়ালে
একটি তোয়ালে কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে নিন। তোয়ালে থেকে ভাল করে পানি বের করুন। এবার এটি শিশুর পেটে উপরে রাখুন। এটি শিশুর বদহজমজনিত ব্যথা দূর করে দেয়। তবে অব্যশই লক্ষ্য রাখবেন তোয়ালে যেন বেশি গরম না হয়।

এগুলো ছিলো নবজাতকের বদহজম বা গ্যাসের সমস্যা দূর করার উপায়। এইবার জেনে নিন ছয় মাস পার করা বাচ্চাদের বদহজম দূর করার ঘরোয়া উপায়।

১। আদা, লেবু এবং মধুর মিশ্রণ
দুই টেবিল চামচ লেবুর রস, আদা বা আদার রস এবং মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে নিন। এটি শিশুকে পান করতে দিন। আদা বদহজমের সমস্যা দূর করে দেয়।

২। প্রচুর পানি পান
খাবার হজমের সমস্যা কারণে পেটে গ্যাস জমা হয়। পানি খাবার হজম করতে সাহায্য করে। তাই শক্ত খাবার খাওয়ার পর শিশুকে অব্যশই প্রচুর পরিমাণ পানি পান করার অভ্যাস করুন।

৩। মৌরির পানি
এক মুঠো মৌরি পানিতে সিদ্ধ করে নিন। এই পানিটি শিশুকে বার বার খাওয়াতে থাকুন। এটি ৬ মাস এবং এর উপরের বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

৪। আদা
বদহজম বা পেটের গ্যাস দূর করতে আদা বেশ কার্যকর। শিশুর খাবারে আদা যোগ করুন। সরাসরি শিশুকে আদা খেতে দিবেন না। ৮ মাস বা তার উপরের বাচ্চাদের খাবারে সাথে আদা দিতে পারেন।

৫। জিরা
এক গ্লাস পানিতে আধা চা চামচ জিরা দিয়ে জ্বাল দিন। এটি শিশুকে কিছুক্ষণ পর পর পান করতে দিন। জিরাতে থাকা ভাল এনজাইম শিশুর বদহজমের সমস্যা দূর করে দেয়। ছয় মাস বা তার উপরে বয়সের শিশুকে এটি দিন।

৬। এলাচ
শিশুর খাবারে এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে দিন। এলাচে রয়েছে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন সি যা পেট থেকে গ্যাস বের করে দেয়।

৭। হিং
কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি হিং মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি শিশুর পেটের চারপাশে ম্যাসাজ করুন। এটি গ্যাস বের করে দিবে। এক বছর বয়সের বড় বাচ্চার খাবার সাথে এক চিমটি হিং মেশাতে পারেন।

৮। ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাবার খাওয়া নয়
ঘুমাতে যাওয়ার আগে অনেক বেশি খাওয়া হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি শুধু হজমের সমস্যা করে তা নয়, অনেক সময় পেট ব্যথার কারণ হিসেবে দেখা দেয়। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পেট ভরে খাওয়া থেকে বিরত রাখুন আপনার শিশুকে।

ছবি- নুসাইবা

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ