বয়স হলেই সমাজবিচ্ছিন্ন নয়


ই-বার্তা প্রকাশিত: ১৮ই অক্টোবর ২০১৭, বুধবার  | বিকাল ০৫:৫০ দেশ

ই-বার্তা।। আপনার বাসায় জমকালো কোন ডিনারের অনুষ্ঠান চলছে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন দিয়ে বাড়ি গমগম করছে। আপনারা সবাই খুব হৈ চৈ করছেন, আনন্দ করছেন আর দূর থেকে বসে সেগুলো হাসিমুখে দেখছে আপনার বৃদ্ধ বাবা অথবা মা অথবা দুজনেই। আপনি ভাবছেন, বয়স হয়েছে, এখন তো তাঁরা আর হৈচৈ করতে পছন্দ করবেনা। তাই তাঁদের বললেন নিজের ঘরে গিয়ে আরাম করতে। কিন্তু আপনি বুঝতেই পারলেন না যে আসলে আপনাদের কাছাকাছি থেকে আপনাদের আনন্দ দেখে তাঁরাও খুব আনন্দ পাচ্ছিলেন। যদিও তাঁরা নিজেরা আপনাদের সাথে যোগ দিচ্ছেন না তাঁর মানে এই নয় যে তাঁরা আনন্দ করতে আর পছন্দ করেন না। বয়সের সাথে সাথে তাঁদের স্পৃহা কমে গেলেও কমেনা ইচ্ছা ও অনুভুতি।

সুন্দর সামাজিক জীবন যেমনি আনন্দময়, তেমনি তা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার পরিজনের সবার সাথে হেসে খেলে থাকতে কে না ভালোবাসে? কিন্তু একটা বয়সে এসে থাকেনা সেই আগের মত উদ্দাম, আগের মত চঞ্চলতা। কমে যায় হৈ চৈ করার আগ্রহ ও শক্তি। কিন্তু কমেনা ভালোলাগা ও ভালোবাসার ক্ষমতা। এই বয়সে এসেই মানুষ নিজেকে সবথেকে বেশি গুটিয়ে ফেলে। যেন খাপ খাইয়ে নিতে পারেনা নিজেকে ছেলে-মেয়ে, নাতী-নাতনীদের সাথে।

মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে শারীরিক কারণেই কমে আসে কর্মতৎপরতা। বয়স হওয়ার কারণেই একা হয়ে পড়েন বেশিরভাগ মানুষ। একজন মানুষ যখন বুড়ো হয় যায়, তাঁর রোগ বেশি হয়, সঙ্গী কিংবা কোনো ঘনিষ্ঠজনের মৃত্যুশোক সইতে হয়, চলাফেরার ক্ষমতা আগের মতো থাকে না, চাকরি থেকেও অবসর নিতে হয়, এভাবে পুরনো বন্ধুত্ব জিইয়ে রাখা কিংবা নতুন বন্ধু তৈরি করাও কঠিন


হয়ে যায়। তাই বলে যে সেই মানুষটির পরিবারের সাথে আনন্দ করার ইচ্ছা কমে যায় তা নয়, বরং আরো বেরে যায়। কিন্তু ছেলে-মেয়েরা অনেক সময় ব্যাপারটি না বুঝেই বৃদ্ধ বাবা-মা কে আলাদা করে দেন সমস্ত হৈ চৈ থেকে। তাঁরা ভাবেন বয়স হলে তো মানুষ আর মজা করতে চায়না, একা একা শান্তিতে থাকতে চায়, ধর্ম পালন করতে চায়। এমনটি ভেবে আরো দূরে ঠেলে দেন বয়স্ক মানুষদের। সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তাঁরা।


ব্যায়াম না করার ফলে শরীরের যে ক্ষতি হয়, তার থেকেও বেশি ক্ষতিকর হোলো একাকীত্ব বা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা। এটি শারীরিক এবং মানসিক দুভাবেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন-
১। হতাশা, উদ্বিগ্নতা এবং অল্পতেই আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি
২। সহজে ঘুম না আসা কিংবা অতিরিক্ত ঘুমানো
৩। হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া কিংবা বেড়ে যাওয়া
৪। মাদকাসক্তি
৫। অল্পতেই ক্লান্তি কিংবা অনুপ্রেরণার অভাব।

দীর্ঘদিন সমাজবিচ্ছিন্ন অবস্থায় একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর যেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তেমনি প্রভাব ফেলে শারীরিক অবস্থায়ও। তাই বয়স হয়ে গেলেই যে তাঁদের আলাদা জগত দিতে হবে। একা থাকতে দিতে হবে, এমন চিন্তা থেকে দ্রুত বেড়িয়ে আসতে হবে ছেলে-মেয়েদের। বরং বয়স হলে সেই মানুষটিকে আরো বেশি সময় দিন কারণ তখন বয়স্ক মানুষের করার তেমন কিছুই থাকেনা। সর্বক্ষণ সময় দেয়া তো সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে তাঁদের বই পড়তে, পেপার পড়তে উৎসাহ দিন। পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানই তাঁদের বাদ দিয়ে করবেন না। বরং আয়োজনে তাঁদের পরামর্শ নিন। এতে তাঁরা খুশিও হবে, আবার নিজেদের সমাজ বিচ্ছিন্নও মনে করবে না।

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ এর আরও সংবাদ