যে ১০ জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট গুপ্তসংঘের সাথে জড়িত ছিলেন


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৭ই নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার  | সন্ধ্যা ০৭:৫০ আন্তর্জাতিক

ই-বার্তা।। শুনতে অদ্ভুত শোনালেও সত্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১০ জন প্রেসিডেন্ট সরাসরিই যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন গুপ্তসংঘের সাথে। আর ভ্রু আরো কুঁচকে যায়, যখন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলে ওঠেন, ভার্সিটিতে তিনি যে গোপন সংঘের সাথে যুক্ত ছিলেন, সেটার কার্যাবলী এতটাই গোপন যে নাম ছাড়া আর কিছুই জানানোর অনুমতি নেই তার!

জর্জ ওয়াশিংটন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন গুপ্তসংঘ ফ্রিম্যাসনের সদস্য। এদিক থেকে চিন্তা করলে তিনি দেশটির প্রথম ম্যাসনিক প্রেসিডেন্টও বটে। রন চার্নোর লেখা Washington: A Life বইতে লেখক মন্তব্য করেছেন, সম্ভবত সংগঠনটির সংস্কারমুক্ত মনোভাবই ওয়াশিংটনকে ম্যাসনিক অর্ডারের প্রতি আকৃষ্ট করেছিলো। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি এই গুপ্তসংঘের সদস্য হয়েছিলেন। এরপর বাকিটা জীবন এর বিশ্বস্ত সদস্য হিসেবেই কাটিয়ে দেন তিনি। তার স্মরণে স্থাপিত জর্জ ওয়াশিংটন ম্যাসনিক ন্যাশনাল মেমোরিয়াল-এর কাজ শেষ হয় ১৯৭০ সালে।

থমাস জেফারসন
কলেজ অফ উইলিয়াম এন্ড মেরির শিক্ষার্থী থাকাকালে এফ. এইচ. সি. সোসাইটি নামে এক গুপ্তসংঘের সদস্য ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম এ স্থপতি। তিনি দেশটির তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এফ.এইচ.সি ছিলো ল্যাটিন Fraternitas, Humanitas, et Cognitio এর পূর্ণরুপ, যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ভ্রাতৃত্ব, মানবতা, এবং জ্ঞান। এর সদস্যরা নিজেদের মাঝে বিশেষভাবে করমর্দন করতো। এছাড়া তাদের পোশাকে আটকানো থাকতো একটি ব্যাজ, যাতে খোদাই করা ছিলো stabilitas et fides কথাটি। এর অর্থ স্থায়িত্ব এবং বিশ্বাস।

অ্যান্ড্রু জ্যাকসন
সৈনিক থেকে রাজনৈতিক নেতা হয়ে পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন। তিনি ফ্রিম্যাসনের মামুলি কোনো সদস্য ছিলেন না, বরং সংঘটিতে তার পদমর্যাদা ছিলো বেশ উঁচু স্থানে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার শাসনামলেই বেশ প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়েছিলো ফ্রিম্যাসনকে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো নিউ ইয়র্কের এক ব্যক্তিকে অপহরণ সংক্রান্ত, যে কিনা সংঘের বিভিন্ন গোপন বিষয়াদি ফাঁস করে দিবে বলে হুমকি দিয়েছিলো। এমনকি ফ্রিম্যাসনের উপর বিদ্বেষকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তৃতীয় রাজনৈতিক দলের উত্থানও ঘটেছিলো তখনই।

জেমস কে. পক
১৮২০ সালে পক যখন ফ্রিম্যাসনে যোগদান করেন তখন তার বয়স ছিলো ২৫ বছর। ১৮৪৫ সালে তিনি যখন দেশটির একাদশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন, তখন তার বয়স ৫০ বছর চলছিলো।

জেমস বুকানন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের একমাত্র চিরকুমার প্রেসিডেন্ট বুকানন। ম্যাসনিক এ মানুষটি প্রেসিডেন্টের তালিকায় আছেন পঞ্চদশ স্থানে। ইতিহাস বলে, তিনি দেশটির নিকৃষ্টতম প্রেসিডেন্টদের মাঝেও শীর্ষস্থানীয়।

অ্যান্ড্রু জনসন
প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন আততায়ীর হাতে নিহত হবার সময় দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন অ্যান্ড্রু জনসন। ফলে লিঙ্কনের মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব বর্তায় জনসনের কাঁধে। সপ্তদশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি প্রেসিডেন্টের আসন অলঙ্কৃত করেন। নিজের ম্যাসনিক সত্ত্বা নিয়ে আজীবন বেশ গর্ববোধ করতেন প্রেসিডেন্ট জনসন। তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে স্থানীয় ম্যাসনিক টেম্পলও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো।

ইউ. এস. গ্র্যান্ট
গৃহযুদ্ধের সময় আর্মি জেনারেল এবং যুদ্ধের শেষের দিকে কমান্ডিং জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ইউ. এস. গ্র্যান্ট ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আঠারোতম প্রেসিডেন্ট। তিনি যে গুপ্তসংঘটির সাথে যুক্ত ছিলেন, তার নাম অনেকের কাছেই অপরিচিত ঠেকতে পারে। ইউরোপ থেকে যাত্রা শুরু করেছিলো এ সংগঠনটি। ১৮১৯ সালে বাল্টিমোরে কার্যপরিচালনার মধ্য দিয়ে আমেরিকায় তারা কার্যক্রম শুরু করে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো বিভিন্ন দাতব্য কার্যাবলী পরিচালনা করা। কালক্রমে নারী-পুরুষ উভয়েই তাদের সদস্য তালিকায় নাম লেখাতে শুরু করে।

রাদারফোর্ড বি. হায়েস
১৮৫০ থেকে ১৮৮৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্ডার অফ অড ফেলোসের বিভিন্ন সম্মেলনে পাঁচবার বক্তব্য রেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট হায়েস। উদাহরণ হিসেবে ১৮৮৭ সালে ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যের ফ্রিমন্টে সংঘের নতুন অফিসারদের বরণ করে নেয়ার সময় তিনি এই সংঘ।

জেমস আব্রাম গারফিল্ড
আততায়ীর বুলেট প্রাণ কেড়ে নেয়ার আগপর্যন্ত মাত্র মাস ছয়েকের মতো দায়িত্ব পালন করতে পেরেছিলেন দেশটির বিংশতম এ প্রেসিডেন্ট। অবশ্য অনেক আগে থেকেই ফ্রিম্যাসনের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৮৬৪ সালে তিনি সংগঠনটির পূর্ণ সদস্য হন।

উইলিয়াম ম্যাককিনলে
দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় আততায়ীর বুলেটে প্রাণ হারান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পঁচিশতম এই প্রেসিডেন্ট। আজকের লেখায় এখন পর্যন্ত যতজন প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, তারা সবাই যেকোনো একটি গুপ্তসংঘের সদস্য ছিলেন। এদের মাঝে ব্যতিক্রমের শুরু প্রেসিডেন্ট ম্যাককিনলেকে দিয়ে। কারণ তিনি ফ্রিম্যাসন ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্ডার অফ অড ফেলোস উভয় সংঘের সাথেই জড়িত ছিলেন।

সর্বশেষ সংবাদ

আন্তর্জাতিক এর আরও সংবাদ