আমাদের শ্রবণযন্ত্র


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২২শে নভেম্বর ২০১৭, বুধবার  | বিকাল ০৪:৩৪ মেডিকেল

আমাদের ইন্দ্রিয়তন্ত্রের মধ্যে কান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কান এবং এর ভেতরে অবস্থিত কিছু শব্দ স্নায়ুর দ্বারা শ্রবণযন্ত্র গঠিত। কানের তিনটি অংশ। বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ। কানের বাইরের দৃশ্যমান পুরো অংশটি হলো বহিঃকর্ণ। বহিঃকর্ণের দৃশ্যমান যে অংশটিতে সচরাচর কান ফুটো করা হয় (কানের দুলের জন্য) তাকে লোবিউল বলে। লোবিউল থেকে কিছু ওপরে তরুণাস্থি (হাড়ের প্রাথমিক ও নরম স্তর) বহিঃকর্ণের পুরো ধারকে ঘিরে রাখে। এই ধারকে বলে হেলিক্স। আজকাল অতি আধুনিক ছেলেমেয়েরা হেলিক্সে একসঙ্গে অনেক ছিদ্র করে। এতে অনেকের স্নায়ুর সংবেদনশীলতা নষ্ট হয়ে যায়।

মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় প্রতিটি মানুষের কান তৈরি হয়। কানের ছিদ্রটি বাইরে থেকে ভেতরের দিকে চলে গেছে। এই ছিদ্রের সাহায্যে বহিঃবর্ণ থেকে শব্দ মধ্যবর্ণ হয়ে অন্তঃকর্ণে পৌঁছায়। এই ছিদ্রপথে অনেক গ্রন্থি ও চুল রয়েছে। বাইরে থেকে প্রবেশ করা ধুলাবালিকে বাধা দেওয়ার জন্য এই চুলগুলো সাহায্য করে। এই স্তরে ধুলা ও ঘাম জমে খৈল তৈরি হয়। বহিঃকর্ণের শেষের দিকে স্বচ্ছ, পাতলা ও সূক্ষ্ম একটা পর্দা থাকে। একে বলে টিমপ্যানিক মেমব্রেন বা কানের পর্দা। বহিঃকর্ণের শব্দতরঙ্গকে মধ্যকর্ণ অন্তঃকর্ণে পাঠায়। মধ্যকর্ণে ছোট ছোট হাড়, বাতাস ও ক্ষুদ্র মাংসপেশি রয়েছে। মধ্যকর্ণের পরের স্তরের নাম অন্তঃকর্ণ। অন্তঃকর্ণে ‘করোটি’ নামক অঙ্গ রয়েছে। এই অঙ্গ অজস্র শব্দ স্নায়ুর দ্বারা গঠিত। কানে পৌঁছানো শব্দকে স্নায়ু গ্রহণ করে মস্তিষ্কে পাঠায় এবং মস্তিষ্ক নির্ধারণ করে শব্দটি কিসের।

কানের জন্য সতর্কতা-

১. অতিরিক্ত শব্দদূষণ এলাকায় না থাকাই ভালো।
২. মানুষের স্বাভাবিক শব্দসীমা ৮৫ ডেসিবেল আর সর্বোচ্চ ৯০ ডেসিবেল। অনবরত ১০০ ডেসিবেল শব্দে মানুষ বধির হয়ে যায়। ৪০০০ থেকে ৬০০০ হার্টজের শব্দে মানুষ স্থায়ী বধির হয়। আর ১৬০ ডেসিবেলে মানুষের কানের পর্দা ছিঁড়ে যায়। তাই এ বিষয়ে কলকারখানা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক হওয়া উচিত। সংবাদ মাধ্যমকে হতে হবে আরো সোচ্চার।
৩. শিশুদের কানে তুলা দিয়ে গোসল করানো উচিত। নির্দিষ্ট বয়সে তুলা পরিহার করুন।
৪. রাস্তার সস্তা উপকরণ দিয়ে কান পরিষ্কার করবেন না।
৫. কানে পানি ঢুকলে নরম কাপড় বা তুলার সাহায্য নিন।
৬. কোনো কিছু দিয়ে কান খোঁচানো বা চুলকাবেন না।
৭. স্বাভাবিক স্বরে কথা বলুন। দীর্ঘ বছরের হতাশা মানুষের শ্রবণশক্তি কমিয়ে দেয়। তাই সর্বদা প্রফুল্ল থাকুন।
৮. ছোট পোকামাকড় ছাড়াও অণুজীব মানুষের কানে বাসা বাঁধতে পারে। তাই মশারি ব্যবহার করুন। বেডশিট পরিচ্ছন্ন রাখুন।
৯. অতিরিক্ত শব্দে গান শুনবেন না। উচ্চশব্দ, উচ্চরক্তচাপ, মাইগ্রিন ও অস্থিরতা তৈরি করে।
১০. আমাদের কানের ময়লা আপনাআপনি বেরিয়ে যায় এরকম ব্যবস্থা আমাদের শরীরে রয়েছে। তাই কানের ময়লা পরিষ্কার করা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। তবে অতিরিক্ত ময়া জমে কানে ব্যথা হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যান। নিজে থেকে কানে খোঁচাখুঁচি করলে ফল আরো ভয়াবহ হতে পারে।


ডাঃ ফারহানা মোবিন
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।
এম.পি.এইচ, সিসিডি (বারডেম হাসপাতাল)
সি-কার্ড (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন)
কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট (কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন)

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ