‘সারাদেশে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে চাই’- ডাঃ ফারহানা মোবিন


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২৬শে এপ্রিল ২০১৭, বুধবার  | বিকাল ০৩:২৫ মেডিকেল

আফিফা মোহসিনা অরণি।। ছোট থেকেই শান্ত শিষ্ট এবং পড়াশুনায় মনোযোগী একটি মেয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন চোখে লালন করতেন, সেইসাথে একজন লেখক হওয়ারও সুপ্ত বাসনা ছিল তাঁর মনে। জন্ম রাজশাহীতে এবং পরিবারের সাথে বেড়ে ওঠা সেখানেই। খুব ছোট থেকেই তিনি কবিতা আর গল্প লিখতেন। লিখতেন অসহায় মানুষদের নিয়ে তাঁর কষ্টের কথা। আজ সেই মেয়েটিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে দাঁড়িয়েছেন অনেক অসহায় মানুষের পাশে। তাঁর স্বপ্ন দেশের প্রতিটি কোণায় উন্নত চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়া। আজ তিনি একজন চিকিৎসক, একজন লেখক, একজন সমাজসেবক, একজন মা। বলছি ডা. ফারহানা মোবিন এর কথা।

শিকদার মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। বর্তমানে রাজধানীর স্কয়ার হসপিটালে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগে কর্মরত আছেন। কিন্তু শুধুমাত্র তাঁর কর্মক্ষেত্রে থেমে নেই তিনি। নিজের স্বপ্ন পুরণে নেমে পড়েছেন ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পিং এ। যে সমস্ত রোগীরা অর্থের অভাবে ভালো ডাক্তারদের কাছে পৌঁছাতে পারেন না, ডাঃ ফারহানা মোবিন নিজেই চিকিৎসা সেবা নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন তাদের কাছে।

২০১৫ সালে তিনি প্রথম ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প শুরু করেন। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা প্রদান এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে সাহায্য করা হয় তাঁর এই ক্যাম্পে। তিনি বলেন, “আমরা এখনো টেকনোলোজির দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছি।আমাদের দেশে অনেক অসহায় মানুষ আছেন যারা অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে পারেন না। ঢাকার বাইরে এমন অনেক গ্রাম আছে যেখানে এখনো উন্নত চিকিৎসা সেবা পৌঁছায়নি। তাঁদের কথা ভেবেই আমি ২০১৫ সালে প্রথম ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের জন্য দেশের সকল ডাক্তার কে আহ্বান করি। প্রতি মাসে অন্তত একটি ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প করার অনুরোধ করি তাঁদের”। সমগ্র বাংলাদেশে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প করার ইচ্ছা ফারহানা মোবিনের।
ফারহানা মোবিন তাঁর স্বপ্ন নিয়ে ই-বার্তাকে বলেন, তিনি একটি ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্র চালু করতে চান, যেটি বাংলাদেশের সেই সমস্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা পৌঁছে দিবে, যেখানে এখনো মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। তিনি মনে করেন বাংলাদেশের তরুণ ডাক্তারদের নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে এসব এলাকায় গিয়ে চিকিৎসা প্রদাণ করা উচিত।
শুধুমাত্র চিকিৎসা নয়, সামাজিকভাবে বাংলাদেশের উন্নতি নিয়েও চিন্তা করেন তিনি। বাংলাদেশের নারীদের নিয়ে তাঁর ভাবনা সুদূরপ্রসারী। তিনি মনে করেন তীব্র মনোবল থাকলে এবং সচেতন হলে এই দেশের নারীরা অনেক উন্নতি করতে পারবে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের কিছু ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী নারীদের নিয়ে বর্তমানে একটি রিসার্চ করছেন তিনি। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “শীতকালে তাঁরা শীতের পিঠা বানিয়ে বিক্রি করে, অন্যসময় চা। যেহেতু নারীদের রাস্তায় বসে চা বিক্রি করাকে কেউ স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেনা, তাই এই নারীদের অনেক ধরণের বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। এ অবস্থায় অনেকেই কাজ ছেড়ে দেয়, আবার অনেকে এসব কথা সহ্য করে জীবিকার তাগিদে কাজ করতে থাকে। এই নারীদের জন্য কিছু করতে চাই”।

স্বাস্থ্য বিষয়ক তাঁর বিভিন্ন লেখা অনেক পত্রিকায় এবং দুইটি বই একুশে বইমেলায় ইতোমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়াও ছোটদের জন্য অনেক গল্প, ছড়া, কবিতা লিখে থাকেন তিনি।
ডাঃ ফারহানা মোবিন মানবসেবায় তাঁর মরণোত্তর চক্ষু, কিডনী, লিভার, ফুসফুস এবং হার্ট দান করেছেন। তিনি বলেন, “আমার ছেলের চোখের অপারেশন হওয়ার পর আমি সিন্ধান্ত নিলাম বাংলাদেশ আই হসপিটাল কে আমার দুই চোখ দান করে দিবো। মৃত্যুর পর আমার শরীরের কোন একটি অংশ যেন আরেকজন মানুষের উপকার করে বা মেডিক্যাল রিসার্চে কাজে দেয় এটিই আমার চাওয়া”।
প্রতি মাসে অন্তত একটি আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল রোগীর বিনামূল্যে অস্ত্রোপচার করতে চান ডাঃ ফারহানা মোবিন।

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ