কন্ঠশিল্পী আবদুল জব্বার আর নেই


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৩০শে আগস্ট ২০১৭, বুধবার  | দুপুর ১২:৫৭ সংগীত

ই-বার্তা ।। বরেণ্য কন্ঠশিল্পী আবদুল জব্বার আর নেই। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

গত সাড়ে ৩ মাস ধরে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন এ কিংবদন্তি শিল্পী। গত শনিবার দুপুরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার পর থেকে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়েছিল।

হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক দেবব্রত বণিক ওই সময় জানিয়েছিলেন, আবদুল জব্বারের দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকার্যকর হয়ে পড়ছে। তার শরীর এখন আর কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করছে না।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিক কালজয়ী এ শিল্পী কিডনি, হার্ট, প্রস্টেটসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।

তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন শোক প্রকাশ করেছেন।

আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সাল থেকে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন। তিনি ১৯৬২ সালে প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি বিটিভির নিয়মিত গায়ক হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হান পরিচালিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম রঙ্গিন চলচ্চিত্র সংগমের গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৬৮ সালে এতটুকু আশা ছবিতে সত্য সাহার সুরে তার গাওয়া "তুমি কি দেখেছ কভু" গানটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

১৯৬৮ সালে পীচ ঢালা পথ ছবিতে রবীন ঘোষের সুরে "পীচ ঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি" এবং ঢেউয়ের পর ঢেউ ছবিতে রাজা হোসেন খানের সুরে "সুচরিতা যেওনাকো আর কিছুক্ষণ থাকো" গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৭৮ সালে সারেং বৌ চলচ্চিত্রে আলম খানের সুরে "ও..রে নীল দরিয়া" গানটি দর্শকপ্রিয়তা পায়। তার প্রথম মৌলিক গানের অ্যালবাম কোথায় আমার নীল দরিয়া ২০১৭ সালে মুক্তি পায়। অ্যালবামটির গীতিকার আমিরুল ইসলাম, সুরকার গোলাম সারোয়ার।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা যুগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সালাম সালাম হাজার সালাম ও জয় বাংলা বাংলার জয়সহ অংসখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তাঁর গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া যুদ্ধের সময়কালে তিনি প্রখ্যাত ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে কাজ করেন। তৎকালীন সময়ে কলকাতাতে অবস্থিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধাদের ক্যাম্প ঘুরে হারমোনি বাজিয়ে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেছেন যা মুক্তিযুদ্ধাদের প্রেরণা যুগিয়েছে। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে সেসময় বিভিন্ন সময় গণসঙ্গীত গেয়ে প্রাপ্ত ১২ লাখ রুপি দান করেছিলেন।

তাঁর গাওয়া তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়, সালাম সালাম হাজার সালাম ও জয় বাংলা বাংলার জয় গান তিনটি ২০০৬ সালে মার্চ মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দুটি সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক (১৯৮০) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (১৯৯৬) ভূষিত হন।

সর্বশেষ সংবাদ

সংগীত এর আরও সংবাদ