আজকের হেলথ টিপস- ফুসফুস, নিঃশ্বাসে বিশ্বাস


ই-বার্তা প্রকাশিত: ১৩ই নভেম্বর ২০১৭, সোমবার  | বিকাল ০৩:১৪ মেডিকেল

মানবদেহের ফুসফুস নামের অঙ্গটি দেয় নিঃশ্বাসের ভরসা। প্রতিটি মানুষের দেহে লালচে বাদামি রঙের এই অঙ্গটি জোড়ায় অবস্থিত। হৃদপিন্ডের দুপাশে এই অঙ্গদ্বয়ের অবস্থান। পেটের ওপর থেকে বুকজুড়ে এদের বিস্তৃতি। ইংরেজিতে এদের বলে লাংস। একবচনে লাং, ব্রংকাসও বলা হয়। আর বাংলায় বলে ফুসফুস। শ্বাস-প্রশ্বাস চালনাকারী অঙ্গগুলোর মধ্যে এরা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। অর্ধকোণাকৃতির বেলুনের মতো এই অঙ্গ দুটো রয়েছে বুকের সামনে। বাঁ দিকে হৃদপিন্ডের অবস্থানের জন্য ডান ফুসফুস বাম ফুসফুসের তুলনায় বড়। ফুসফুসের প্রতিটি ভাগকে বলে লোব। ডান ও বাম ফুসফুস তিনটি ও দুটি লোবে বিভক্ত। ফুসফুস স্পঞ্জের মতো। হাত দিয়ে চাপলে চুপসে যায়।

গর্ভাবস্থায় এবং পৃথিবীতে মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস চলতেই থাকে। পরিবেশ থেকে বাতাস গ্রহণ করাকে বলে শ্বাস আর বাতাস ছেড়ে দেওয়াকে বলে প্রশ্বাস। শ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেনযুক্ত বায়ু নেওয়া হয় আর কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত বায়ু ত্যাগ করা হয়। মানুষের নাকের ছিদ্র দিয়ে বাতাস মুখে যায়, মুখ থেকে ট্রাকিয়া নামের অঙ্গের মাধ্যমে বাতাস সারা বুকে ভ্রমণের পর ফুসফুসে যায়। ফুসফুসের মাধ্যমে অক্সিজেনযুক্ত বাতাস রক্তে মিশে হৃদপিন্ডের মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে যায়। আর দূষিত বায়ু দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। ফুসফুসের মধ্যে অ্যালভিওলি বা ব্রংকাই নামের গাছের ডালপালার মতো অসংখ্য ছোট নালি রয়েছে। ফুসফুসের দেয়ালেও রয়েছে অজস্র জালিকা শিরা। এদের মাধ্যমে বাতাস সারা দেহে ছড়িয়ে যায়। ঘুমন্ত অবস্থায়ও ফুসফুস বিরামহীনভাবে কাজ করতে থাকে। শ্বাস নিলে ফুসফুস ফুলে ওঠে আর প্রশ্বাসে চুপসে যায়। এই শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের বুক ওঠানামা করে। মানুষ মারা যাওয়ার সাঙ্গে সঙ্গেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতি মিনিটে শ্বাস নেয় ১২ থেকে ১৮ বার। বাচ্চারা নেয় প্রতি মিনিটে প্রায় ২০-৩০ বার। তবে মানসিক অবস্থার পরিপ্র্রেক্ষিতে এ সংখ্যা বেড়ে যায়। মানুষ অতিরিক্ত রেগে গেলে, ভয় পেলে, হাই ব্লাড প্রেসার, অনেক জ্বর ও শরীরচর্চায় এর গতি বৃদ্ধি পায়। মানুষের শ্বাস গ্রহণে লাগে দুই সেকেন্ড আর প্রশ্বাসে তিন সেকেন্ড।

ফুসফুসের কাজ-
১. শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেনযুক্ত বায়ু গ্রহণ করে আর কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত দূষিত বায়ু দেহের বাইরে বের করে দেয়।
২. কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়াও দেহে ক্ষতিকর বিভিন্ন গ্যাস তৈরি হয়, যা বাইরে বের করতে সাহায্য করে।
৩. গ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে দূষিত পানিও বাইরে বের করে দেয়। ফলে দেহে পানির পরিমাণ সাম্যাবস্থায় থাকে।
৪. নাকের ছিদ্রের দ্বারা ঢুকে যাওয়া ধুলোবালিকে ফুসফুস গ্যাস ও পানির মাধ্যমে বাইরে বের করে দেয়। এভাবে ফুসফুস দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বজায় রাখে।
৫. মস্তিষ্কে বিশুদ্ধ বায়ু প্রেরণ করে, মানুষকে অধিক পরিমাণে কর্মক্ষম করে তোলে।

ফুসফুসের যত্নে আমাদের করণীয়
১. ধূমপান, অ্যালকোহল, মাদক বর্জনীয়।
২. গৃহের প্রতিটি কক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রাখুন, ধুলোবালির সংস্পর্শে থাকলেই নাকে ও মুখে রুমাল চেপে ধরুন।
৩. মুক্ত আকাশের নিচে, প্রচুর গাছপালায় প্রাণভরে নিঃশ্বাস গ্রহণ করুন।
৪. প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন। এতে রক্ত পরিষ্কার হবে এবং সারা দেহে রক্ত সঞ্চালিত হওয়ার জন্য বিশুদ্ধ বায়ু রক্তের সঙ্গে সারা দেহে যাবে। ফলে আপনার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আয়ুও বাড়বে।
৫. নিয়ন্ত্রণহীন দেহের ওজন, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার ফুসফুসের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। তাই এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৬. প্রচুর গাছ লাগান। জায়গার অভাব থাকলে বাড়ির ব্যালকনিতেই গাছ লাগান। এতে গৃহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়বে।
৭. গৃহের নোংরা ফেলার পাত্রটিতে সর্বদা ঢাকনা ব্যবহার করুন। টয়লেটের দরজা সব সময় বন্ধ রাখুন। টয়লেটের গ্যাস বের হওয়ার জন্য ভেন্টিলেশনের সুব্যবস্থা অপরিহার্য।
৮. যেখানে-সেখানে কফ, থুথু ফেলবেন না। প্রয়োজন শেষে গ্যাসের চুলা নিভিয়ে দিন। জ্বলন্ত আগুন বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

ডাঃ ফারহানা মোবিন
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।
এম.পি.এইচ, সিসিডি (বারডেম হাসপাতাল)
সি-কার্ড (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন)
কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট (কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন)

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ