মৃৎ শিল্পের ব্যবসা করে শ্রমিক থেকে লাখপতি


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৩০শে নভেম্বর ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার  | রাত ০২:১৬ শিল্প

তারিকুল হাসান, ঢাকা: রায়েরবাজার আধুনিক মৃৎ শিল্প বিতানের স্বত্বাধিকার মনির হোসেন। তিনি মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত ১৫ বছর ধরে। ১১ বছর শ্রমিকের কাজ করলেও২০১৩ সালে ১ লাখ টকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন মাটির তৈজসপত্রের ব্যবসা।

মনির হোসেন বলেন,“শ্রমিকের কাজ করে খরচ বাদে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা থাকত। মাল নামাতাম, ডেলিভারি দিতাম, মালের ভ্যান চালাতাম। মহাজন মাঝে মাঝে খারাপ ব্যবহার করত। একদিন মনে খুব ব্যথা পাই, চিন্তা করি নিজেই ব্যবসা করবো। নিজের পুঁজি ৫০ হাজার টাকা, বউয়ের গহনা বিক্রি ৩০ হাজার টাকা এবং আরও ২০ হাজার টাকা সুদে নিয়ে রায়ের বাজারে দোকান নেই। শুরু করি মৃৎ শিল্পের ব্যবসা।”

৪ বছরে মাটির তৈজসপত্রের ব্যবসায় লাভ করে ২ টা পপকর্ণের ভ্যান কিনছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মনির, ঋণ পরিশোধ করেবছরে আয় করছেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা এবং ছোট ছেলে ইয়াসিনকে পড়াশুনা করাচ্ছেন রায়ের বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। দুই সন্তানের জনক মনির বলেন, “দোকানে ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকা বিক্রি হলে খরচ বাদে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মত থাকে।বড় ছেলে শরীফ পপকর্ণের গাড়ির ব্যবসা দেখাশুনা করে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দেয়।ব্যবসা ভাল হলে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা টিকে। মৃৎ শিল্পের ব্যবসা করে আমার অনেক উন্নতি হয়েছে।”

আধুনিক মৃৎ শিল্প বিতানে ঘুরে দেখা যায় মাটির তৈরী বিভিন্ন রকমের তৈজসপত্র। হাঁড়িপাতিল, বাসনকোসন, কলসি, ফুলেরটব, শোপিস, ফুলদানি, মাটিরব্যাংক, দইয়েরহাড়ি, হালিমেরবাটি, পেয়ালা, সুরাই, জালা, মটকা, টালি,


ঢাকনা, প্রদীপ, ছাঁচ, পুতুল, গহনা, খেলনা, প্রতিকৃতি সহ বিভিন্ন মাটির ফলক সাড়ি সাড়ি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বাঁশের বেত দিয়ে তৈরি ছোট ছোট খোপের মধ্যে। মাটির এসব পন্যের মান, আকার-আকৃতির উপর বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা এবং পাইকারি।

আধুনিক মৃৎ শিল্প বিতানেফুলের টবের ক্রেতা হস্তশিল্পি সামীম হোসেন সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, “আমি রায়ের বাজার থেকে পাইকারী ফুলের টব কিনি ১২ থেকে ৫০ টাকায়। রঙ এবং কারুকাজ করার পরে বিক্রি করি ২৫ থেকে ১০০ টাকায়।”

শুধু রায়ের বাজারের মনির হোসেন নয় রাজধানী সহ দেশের হাজারো মানুষের জীবন জড়িয়ে আছে কুমারের দক্ষ হাতে মাটিও পানির সংমিশ্রণে গড়া মৃৎ শিল্প এর উৎপাদন, বহন এবং বাজারজাতকরণের কাজে।

দেলু মিয়া রাজধানির বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্যানে করে মাটির তৈজসপত্র পোঁছে দেন। তিনি শুধু মৃৎ শিল্প বহনের কাজ-ই করেন। তিনি বলেন,“রায়ের বাজার ছাতা মসজিদ থেকে কাওরান বাজার পাতিল নিয়ে যাচ্ছি ৪০০ টাকা ভাড়ায়। কোন দিন ১ খেপই দেই, আবার কোন কোন দিন ২-৩ খেপ হয়।”

শিল্পীর সৃজনশীলতা দিয়ে গড়া মাটির এসব শিল্প পাওয়া যায় শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, ধানমণ্ডি, কলাবাগান, মোহাম্মাদপুর, মিরপুর, নয়াবাজার, বকশীবাজার, সদরঘাট, নিউমার্কেট, উত্তরার ফুটপাত সহ বিভিন্ন স্থানে খুচরাওপাইকারিদামে। কুমারের নিখুঁত হাতে পূর্ণরুপ পাওয়ার পরে এসব মৃৎ পাত্র হাত বদল হয়ে রাজধানীতে আসে ফরিদপুর, মাদারিপুর, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা, সাভার ও ধামরাই, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা সহ দেশের নানান অঞ্চল থেকে।

সর্বশেষ সংবাদ

শিল্প এর আরও সংবাদ