এবার আরেক কৃষকের পাকা ধানে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ
ই-বার্তা।। টাঙ্গাইলে ধানের দাম নাম মাত্র মূল্যে ও ধান কাটার শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় দিশাহারা হয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এক কৃষকের পর এবার বাসাইলের আরেক কৃষক তার নিজের পাকা ধান ক্ষেতে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ করেছেন।
সোমবার ১৩ মে বিকেলে বাসাইল উপজেলার কাশিল গ্রামের নজরুল ইসলাম খান নামের এক কৃষক নলী বিলের বোরো ধান ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেন। এর আগে রবিবার ১২ মে দুপুরে জেলার কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা গ্রামের আব্দুল মালেক তার রোপনকৃত পাকা ধানে আগুন ধরিয়ে এ প্রতিবাদ করেন।
বাসাইলের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ধান কাটার শ্রমিকের মূল্য প্রায় এক হাজার টাকা। তারপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে এক মণ ৫শ’ টাকা করে।
এছাড়াও ধান ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষ চিটা হয়ে শুকিয়ে গেছে। বারবার স্থানীয় কৃষি অফিসে জানালেও তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়া প্রায় ৫৬ শতাংশের ধান কেটেছি। এই ৫৬ শতাংশ জমিতে মাত্র ৪মণ ধান হয়েছে। ৫৬ শতাংশ জমিতে আমার প্রায় ২৫ হাজার টাকার ঘাটতি হয়েছে। তাই দিশাহারা হয়ে ২০ শতাংশ পাকা ধান ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিলে স্থানীয়রা এসে নিভিয়ে দেয়। আমি এবার ১২ পাকি জমিতে বোরো আবাদ করেছি। এর ৮ পাকি জমির ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে চিটা হয়েছে। এবার বোরো আবাদে অনেক টাকা ঘাটতি হবে।
বাসাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রুপালী খাতুন বলেন, ধানে আগুন দেয়ার বিষয়টি শুনে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। শ্রমিকের দাম বেশি ও ধানের দাম কম হওয়ায় ওই কৃষক দিশেহারা হয়ে ধান ক্ষেতে আগুন দেন। এতে ওই কৃষকের ৬টি গোছা পুড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলায় এবার ১১হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েকজন কৃষকের ৯ হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। পরে তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হলেও তারা দুইবার স্প্রে করেনি। এর ফলে কয়েকজন কৃষকের ধান নষ্ট হয়।
উল্লেখ্য, এবার টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় এক লাখ ৭১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। স্থানীয় হাটবাজারে বর্তমানে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকায়। একজন শ্রমিক দিনে দুই থেকে আড়াই মণ ধান কাটতে পারে। শ্রমিকের মজুরি ও খাওয়া খরচের পর কৃষক লোকসানের মুখে পড়ছে। এ অবস্থায় প্রতি বিঘা জমিতে ধান আবাদে কৃষকের লোকসান গুনতে হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। ক্ষেতে ধান পেকে পড়ে আছে। শ্রমিকের অভাবে কৃষক ধান কাটতে পারছেন না। কেউ কেউ ক্ষোভে, দুঃখে ধান ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।