কৃষকের দুরবস্থা দূর করতে বিএনপির ৯ দফা দাবি

ই- বার্তা ডেস্ক।।   কৃষকদের দুরবস্থা দূর করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে জোর দাবি জানিয়েছে বিএনপি। 

আজ শনিবার (২৫ মে) দুপুরে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান।

 সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো-

১. কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে সরকার ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী কৃষককে কমপক্ষে ৩ মাসের জন্য সমপরিমাণ টাকা বিনা সুদে প্রদান করা।

২. সরকারি পর্যায়ের ধান-চাল গুদামজাত করণের ক্ষমতা প্রায় ২১.৮ লাখ মেট্রিন টন। এ ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে বেশি পরিমাণে সরকারকে ধান ক্রয় করতে হবে। কৃষকদের সহায়তা দিতে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে বেসরকারি গুদাম ভাড়া করে সেখানে ধান চাল সংগ্রহ করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির (সোশ্যাল সেফটিনেট প্রোগ্রাম) আওতা বাড়িয়ে অধিক পরিমাণ চাল বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেন কৃষকের উদ্বৃত্ত উৎপাদনের সদ্ব্যবহার করা যায়।

৩. কৃষকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ ধান ক্রয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করছি। যা দিয়ে সরকার অতিরিক্ত প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিন টন ধান কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ বা ক্রয় করতে পারে।

৪. কৃষকদের হয়রানি কমিয়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান বা চাল কিনতে হবে।

৫. প্রান্তিক বা ক্ষুদ্র কৃষকরা উৎপাদন মৌসুমে অর্থের প্রয়োজনে তার ধান সস্তায় বিক্রি করে এবং কিছু দিন পর আবার নিজে বেশি দামে ক্রয় করে বাজার থেকে চাল কিনে খায়। সে কারণে প্রান্তিক চাষি ও ক্ষেত মজুরদের জন্য বিশেষ সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৬. ধান-চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অসৎ কর্মকর্তাদের জড়িত করা যাবে না এবং অসৎ কর্মকর্তাদের শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭. সরকারের দলীয়করণের কারণে খাদ্য বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি চাল কিনতে ৩ থেকে ৫ টাকা করে ঘুষ নিচ্ছে, যা পত্রিকায় এসেছে (প্রথম আলো-২২.৫.২০১৯)। দলীয় নেতাকর্মীদের পকেট ভারী করার জন্য তাদের ধান কেনার অনুমতি দিয়ে সরকার কৃষকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে।

৮. দেশে ধান উৎপাদন সম্পর্কে সরকার মিথ্যাচার করছে। সরকার বলছে, দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন, অথচ প্রতি বছর ২০ থেকে ৩০ লাখ মেট্রিন টন চাল আমদানি করছে। সরকার জনগণের সাথে মিথ্যাচার করে আসল সত্যকে আড়াল করছে।

৯. মৌসুমের আগেই ধান সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা করা এবং সংগ্রহ মূল্য অবশ্যই উৎপাদন খরচের চেয়ে যৌক্তিক পরিমাণ বেশি হতে হবে।

সম্মেলনে ফখরুল বলেন, শ্রমিকের ঘাটতি লাঘব ও কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীন কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। দেশের হাওর ও দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় ৫০-৭০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দিয়ে প্রকৃত কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য ছিল এ প্রকল্পটির। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সরকারের দলীয়করণ ও দুর্নীতির কারণে এই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কোটি কোটি টাকার এই প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে সরকারের দলীয় লোকজন, প্রকৃত কৃষক এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সরকারের দুর্নীতি ও অদূরদর্শীতার কারণে কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের কৃষি আজ ধ্বংসের মুখে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, বার বার গরিব কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এর সুদূরপ্রসারী পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি কৃষি খাতকে একটি আধুনিক ও টেকসই খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য আজ সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু নির্বাচনে মাধ্যমে জনগণের একটি সরকার বড়ই প্রয়োজন।

ই- বার্তা / রেজওয়ানুল ইসলাম