বরিশালে র‌্যাগিংয়ে প্রতিবাদ করায় ছাত্রীকে নির্যাতন, আত্মহত্যার চেষ্টা

ই- বার্তা ডেস্ক।।  বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) দ্বিতীয় বর্ষের ফিজিওথেরাপি বিভাগের ছাত্রী আমেনা (১৯) র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার রাতে ওই ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তবে ঘটনার পর থেকেই আইএইচটির অধ্যক্ষ ডা. সাইফুল ইসলাম বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন।

বিষয়টি জানাজানি হলে অনেকটা চাপের মুখে পড়ে শনিবার দুপুরে এ ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন অধ্যক্ষ ডা. সাইফুল ইসলাম ।

নির্যাতনের শিকার আমেনা বগুড়ার শেরপুর উপজেলার আব্দুল আজিজের মেয়ে। মেয়েদের আবাসিক হোস্টেলের নিচতলার একটি কক্ষে থেকে আইএইচটি পড়ালেখা করছেন আমেনা।

আবাসিক হোস্টেলের একাধিক ছাত্রী জানান, সিনিয়র ছাত্রীদের একটি দল রয়েছে, তারা মাঝে মধ্যেই জুনিয়র ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। ওই সিনিয়র ছাত্রীদের কয়েকজন জুনিয়রদের কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে সময় কাটান। তবে কিছুদিন আগে বগুড়া থেকে আমেনার অভিভাবক দেখা করতে আসেন। এসময় আমেনার অভিভাবকদের কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়। এছাড়া সিনিয়র ছাত্রীদের ওই দলটি মাঝে মধ্যে বিনাকারণে জুনিয়র ছাত্রীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। শুক্রবার আমেনা এসবের প্রতিবাদ করে। এতে সিনিয়র ওই দলটি আমেনাকে একটি কক্ষে ৬ ঘণ্টা আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান।

এরপর আমেনা লজ্জা অপমানে অতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাকে জুনিয়র ছাত্রীরা উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

তারা আরও অভিযোগ করেন, বিষয়টি অধ্যক্ষ স্যারকে জানানো হলেও তিনি নির্যাতনকারীদের পক্ষ নিয়ে নিরব ভূমিকা পালন করছেন। উল্টো কলেজ থেকে হুমকি দেয়া হচ্ছে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে নাম কেটে দেয়া হবে।

আইএইচটি’র একাধিক শিক্ষার্থী জানান, যাদের বাড়ি বরিশালে বা বরিশালের আশেপাশে তারাই আবাসিক হোস্টেলে প্রভাব খাটিয়ে আসছে। আর যারা অন্য বিভাগ বা দূর-দূরান্ত থেকে আইএইচটিতে পড়ালেখা করতে এসেছে তাদের নতজানু হয়ে থাকতে হচ্ছে। কারণে-অকারণে তাদেরকেই বেশি নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে।

শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমেনা জানান, সিনিয়র ছাত্রীরা টি-শার্ট পড়ে ডাইনিংয়ে খাবার-পানি আনতে যেতে পারবেন, তারা ক্যাম্পাসে ছেলে সহপাঠী কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারবেন, তাদের দেখলেই সালাম দিয়ে জুনিয়রদের বলতে হবে আপু ভালো আছেন, তারা ক্যাম্পাসে ছবি তুলতে পারবেন, তারা কোনো ছাত্রীর কক্ষে গেলে জুনিয়রদের উঠে দাঁড়াতে হবে অসুস্থ থাকলেও, তখন সে ফোন হাতে নিতে পারবে না, এমনকি হেডফোনও কানে দিতে পারবে না। বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড টেকনোলজির (আইএইচটি) ছাত্রী হোস্টেলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এ নিয়ম। সিনিয়রদের জন্য নিয়ম শিথিল হলেও জুনিয়ররা এর কোনো সুবিধাই পাবেন না।

আমেনা আরও জানান, গত শুক্রবার সকালে আইএইচটি শিক্ষার্থীদের ফেসবুকে ‘ডিপ্লোমা মেডিকেল স্টুডেন্ট এন্ড নেটওয়ার্ক’ ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিবাদ জানাই। এতে ক্ষুব্ধ হয় ল্যাবরেটরি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের জুঁই, মৌ ও ফাতেমা এবং একই বর্ষের ফিজিওথেরাপি বিভাগের লামমিমসহ অন্যান্যরা পোস্টদাতাকে খুঁজে বের করতে তারা শুক্রবার দুপুরের পর জুনিয়রদের সবার ফোন নিয়ে যাচাই-বাছাই করে। সন্ধ্যার পর তারা সবার ফোন ফেরত দিলেও তার ফোনটি আটকে রাখে। রাত ৮টার দিকে হলের সব মেয়েদের ডাইনিংয়ে ডেকে নেয় তারা। এ সময় সিনিয়ররা তাকে (আমেনা) অশালীন ভাষায় গালাগাল করে, এমনকি তার পরিবার তুলেও কটাক্ষ করে। এ দৃশ্য অনেকেই মুঠোফোনে ভিডিওধারণ করে ফেসবুকে ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেয়। বকাঝকার পর সবাই যে যার কক্ষে চলে গেলেও তাকে সিনিয়রদের কক্ষে রাত্রী যাপন করতে বলে। এসময় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার কথা বলে আমেনা অপমানে নিজের ১০৬ নম্বর কক্ষে গিয়ে হাতের কাছে পাওয়া একমুঠো ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। সহপাঠীরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে উদ্ধার করে রাতে তাকে উদ্ধার করে শের-ই- বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করেন।

তবে আইএইচটির অধ্যক্ষ ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, র‌্যাগিং নয়, এটা ছাত্রীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। পরে ওই ছাত্রী কয়েকটি প্যারাসিটামল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখন তার অবস্থা অনেকটাই ভালো।

ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।