অবৈধ রিকশা বাণিজ্য করে চালক থেকে কোটিপতি সোহরাব

ই-বার্তা ডেস্ক ।।  একসময় যিনি রিকশাচালক ছিলেন তিনিই এখন ঢাকায় একাধিক বাড়ির মালিক। টাকার গরমে ধরাকে সরা জ্ঞান করেন না। করেছেন একাধিক বিয়ে। আইন-আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বছরের পর বছর অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা বাণিজ্য করছেন। যার মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছেন তিনি।

এই ব্যক্তির নাম মো. সোহরাব, রাজধানীর লালবাগ এলাকার বাসিন্দা তিনি। সোহরাবের ছত্রছায়ায় ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ,লালবাগ , চকবাজার , বাবুবাজার এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশা। এতে নিয়মিত প্রাণহানীর মত ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। স্থানীয়রা বলছেন, রাজনৈতিক মদদে সোহরাব সিন্ডিকেট অবৈধ অটোরিকশা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।   

জানা যায়, সোহরাব চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে 20 হাজার রিকশা চালকের মাঝে কার্ড বিক্রি করেছেন। মাসে কার্ড প্রতি নেন ২-৩ হাজার টাকা। এতে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। সোহরাবের কার্ড দেখলে ট্রাফিক পুলিশ সংশ্লিষ্ট রিকশা আটকান না বলে জানিয়েছেন চালকরা। আর যে রিকশায় সোহরাবের কার্ড থাকে না সেটি ধরে ডাম্পিং করে পুলিশ। 

স্থানীয়রা বলেছেন, সোহরাবের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট এলাকাবাসী। তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও লালবাগ থানায় একাধিক ফোজদারী মামলা রয়েছে। সম্প্রতি চাঁদাবাজির মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি। জামিনে বের হয়েই পুনরায় শুরু করেন চাঁদাবাজি।

রিকশাচালকরা জানান, ২০০২-০৩ সালের দিকে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় রিকশাচালক ছিলেন সোহরাব। সেসময় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন সোহরাব। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে নিজেই ছোটখাটো নেতা বনে যান। ক্ষমতার দাপটে গড়ে তোলেন অবৈধ অটোরিকশা বাণিজ্য। চালু করেন কার্ড বাণিজ্য। এভাবে রিকশা চালক থেকে সোহরাব বনে যান বড় ব্যবসায়ী। চাঁদার টাকায় গড়ে তোলেন আলিশান বাড়ি। এমনকি ৩টি বিয়েও করেন সোহরাব। 

চালকরা জানান, সোহরাব নামের এক ব্যক্তির কাছে থেকে তাদের কার্ড নিতে হয়। পুলিশে ধরলে আম, কাঁঠাল, আনারস, আপেল, হরিনের ছবিযুক্ত এসব কার্ড দেখালেই অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালককে ছেড়ে দেন পুলিশ। একটি কার্ডের মূল্য ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা।

আবার প্রতি মাসে তা রিনিউ করতে হয় সমপরিমাণ টাকা দিয়ে। যখন-তখন, যেখানে-সেখানে পার্কিং, বেপরোয়া চলাচল এবং খারাপ আচরণ সবই করে বেপরোয়া এসব অটো চালকরা। এতে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনাও ঘটে।

রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার অলিগলিতে দিনকে দিন বেড়েই চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা। রাজধানীর পুরান ঢাকা, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, মাদারটেক, নন্দীপাড়া, বাসাবো, মুগদা, কদমতলা, বৌদ্ধমন্দির, বনশ্রী এলাকায় এই হার সবচেয়ে বেশি। মূলত জনসাধারণের সহজ ও কম ভাড়ায় যাতায়াতে সুবিধা দিয়ে থাকে এ অবৈধ যানটি। এ কারণে জনসাধারণ বিরক্ত হলেও কিছু বলতে চায় না। বেআইনি যানটি পুলিশি বৈধতা নিয়ে টিকে আছে রাজধানীহ সারা দেশে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার ২০ শতাংশই ঘটে ব্যাটারিচালিত রিকশায়। সারা দেশে দিনে অন্তত এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার পেছনে।

যেভাবে চলে এসব কার্ড বাণিজ্য

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক মুসা বলেন, প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা দিতে হয় সোহরাব নামের এক ব্যক্তিকে। বিনিময়ে রিকশায় লাগিয়ে দেওয়া হয় একটি মার্কাযুক্ত কার্ড। এ কার্ডের মেয়াদ এক মাস। কার্ড থাকলে পুলিশ তাদের কিছু বলে না। না থাকলে গাড়ি রেকার দিতে হয় নয়তো ডাম্পিং করে দিলে সেখান থেকে গাড়ি আনতে তিন -চার হাজার টাকা লাগে।

আরেক অটোরিকশা চালক হাসান উদ্দিন বলেন, সোরাভ ভাই প্রতিটি গ্যারেজের মালিকের কাছে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি কার্ড দিয়ে এসব ব্যাটারি রিকশা নিয়ন্ত্রণ করে। একেক কার্ডে একেকরকম সাংকেতিক চিহ্ন থাকে। যা থেকে বোঝা যায় এ রিকশা কোনো ব্যক্তির অধীনে। একেকটি গ্যারেজে সর্বনিম্ন ১০০টি ব্যাটারি রিকশা থাকলে প্রতি গ্যারেজ থেকে ৩ লাখ করে টাকা উঠে। আর 200 টা গ্যারেজ থেকে যা উঠে তা দিয়ে তো হয়েই যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা ও থ্রি-হুইলার অটোরিকশা নিষিদ্ধ। ফাঁক-ফোকর দিয়ে চলাচল করে। সোহরাব নামের এক ব্যক্তি এসব কাজ করছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। আমার জানা মতে কোনো পুলিশ সদস্য এর সঙ্গে জড়িত নয়। তবে প্রমাণ মিললে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা দেশে কমপক্ষে ৩০ লাখ এমন পরিবহন চলছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে সোহরাবকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।