সংসদেও থাকছে ব্যাপক চমক

ই-বার্তা ডেস্ক ।।  নবগঠিত মন্ত্রিসভায় ব্যাপক চমক দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  শোনা যাচ্ছে এবার সংসদেও ব্যাপক রদবদল আনছেন তিনি। সংসদ উপনেতা সহ সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোরতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। নবীন সাংসদদের প্রাধান্য নিয়ে স্থায়ী কমিটিগুলো গঠন হতে পার

৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। সংসদে সরকার দলীয় উপনেতা, চিফ হুইপ ও হুইপ কারা হচ্ছেন তা নিয়ে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে কারা থাকছেন, সংরক্ষিত মহিলা আসনে কে আসছেন তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। দলটির একাধিক নেতা মনে করছেন, মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, সংসদ উপনেতা কে হবেন সেটা নির্ধারণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। বাদ পড়া সিনিয়র নেতাদের নিয়েও চমকও থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

দলের একাধিক নেতা বলছেন, জাতীয় সংসদের বিভিন্ন পদে এবার গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এসব পদে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। এতদিন সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন তার চলাফেরা করা কষ্টকর। যদিও তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

রাজনৈতিক সুত্রগুলো জানায়, একাদশ সংসদে সংসদ উপনেতা হিসেবে দেখা যেতে পারে সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মতিয়া চৌধুরীকে। দলীয় সভাপতির আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত মতিয়া চৌধুরী এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরিচ্ছন্ন ইমেজ ও আস্থার কারণে এবার তিনি সংসদ উপনেতা হতে পারেন বলেও জানা যায়। তবে এর বাইরে বঙ্গবন্ধুর সহচর সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন আলোচনায় রয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোফায়েল আহমেদ সংসদ উপনেতা হচ্ছেন বলে ব্যাপক প্রচারণা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে শিরীন শারমিন চৌধুরীই থাকছেন। তবে ডেপুটি স্পিকার পদে পরিবর্তন আসছে। বর্তমান চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের স্থলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সদস্য সচিব নুরে আলম চৌধুরী লিটন আসার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া হুইপ পদেও নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। এই পদে আসতে পারেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। দশম সংসদের হুইপদের মধ্যে ইকবালুর রহিম, মাহবুব আরা বেগম গিনিকে এবারও এ পদে দেখা যেতে পারে।

এদিকে, এবারের মন্ত্রিসভায় দশম সংসদের স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সভাপতি ও সদস্য স্থান পেয়েছেন। এর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক কমিটির সভাপতি ছিলেন দীপু মনি, ডাক ও টেলিযোগাযোগের সভাপতি ছিলেন ইমরান আহমেদ চৌধুরী, অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন ড. আবদুর রাজ্জাক, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় বিষয়ক কমিটির সভাপতি ছিলেন হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন টিপু মুনশি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন তাজুল ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন জাহিদ আহসান রাসেল। এরা সবাই নতুন মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। এ জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এই ৬টি সভাপতির পদ ফাঁকা হয়েছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য কমিটিতেও কিছু নতুন মুখ দেখা যাবে এবার। স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের বলা হয় ‘ছায়ামন্ত্রী।’ সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় মন্ত্রণালয়গুলো সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।

জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করলে প্রথম বৈঠকে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে চিফ হুইপ ও হুইপবৃন্দ এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো গঠন করা হবে। এর আগেই সংরক্ষিত আসনে মনোনীত নারী সংসদ সদস্যদের নামের তালিকা সরকারি দল ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে স্পিকারের কাছে। এরইমধ্যে বুধবার বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ৪ জনকে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন দিতে স্পিকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে।

নেতারা জানান, সরকারি দলে আওয়ামী লীগের নামের তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন দলের নারী নেত্রীরা। প্রায় দেড় শতাধিক নারীনেত্রী সংরক্ষিত মহিলা এমপি পদ পেতে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। এছাড়া গত সংসদে এ পদে থাকা নেত্রীরাও পদ ধরে রাখতে তৎপরতা চালাচ্ছে।

>তবে সরকারি দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হাতেগোনা দুয়েকজন ছাড়া অধিকাংশ সংরক্ষিত এমপি বাদ পড়বেন। প্রধানমন্ত্রী দলের ত্যাগী নারীনেত্রীদের সবাইকে সংরক্ষিত এমপি হিসেবে সুযোগ দিতে চান। মহাজোট শরিকদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজনকে গত দুবারের মতো এবারও সংরক্ষিত এমপি করা হতে পারে।

নিয়ম অনুযায়ী, সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে প্রতি ছয় আসনের জন্য একটি দল ও জোট একজন করে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য পাবে। এ হিসেবে এবার আওয়ামী লীগ অন্তত ৪৩ জন সংরক্ষিত এমপি পাবে। জাতীয় পার্টি পাবে চারজনের মতো।

জানা গেছে, বর্তমানে থাকা সংরক্ষিত আসনের মধ্যে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মাহজাবিন খালেদ বেবী, নূরজাহান বেগম মুক্তা, সানজিদা খানম, ফজিলাতুননেসা বাপ্পি, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, জেবুন্নেছা আফরোজ সহ আরও বেশ কয়েকজন একাদশ সংসদেও থাকতে পা
রেন।

এছাড়া নতুনদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য পারভীন জামান কল্পনা ও মারুফা আক্তার পপি আসতে পারেন সংরক্ষিত আসনে। পাশাপাশি মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শাহিদা তারেক দীপ্তি, সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সাবেরা বেগম, সাধারণ সম্পাদক নারগিস রহমান, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি পারভীন খায়ের, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নারীবিষয়ক সম্পাদক লাবণ্য ভূইয়া, ইডেন কলেজের সাবেক নেত্রী নুরজাহান আক্তার সবুজ সংরক্ষিত নারী এমপি পদের জন্য আলোচনায় আছেন।

ফরিদপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের কাছে হেরে যাওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর স্ত্রী নিলুফার জাফর, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের স্ত্রী জাকিয়া পারভীন খানম, অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রয়াত এম এ আজিজের স্ত্রী রাবেয়া আজিজ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী প্রয়াত মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী নীলুফার আনজুম পপি, বঙ্গবন্ধুর চাচাত ভাই শেখ হাফিজুর রহমান টোকনের স্ত্রী শেখ এ্যানি রহমান, দুই দশকের বেশি সময় ধরে থাকা মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা সিদ্দিকী, সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী আদেলী এদিব খানও আলোচনায় রয়েছেন।

এছাড়া নাট্য অভিনেত্রী শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরীকেও একাদশ সংসদে সংরক্ষিত নারী এমপি হিসেবে দেখা যেতে পারে।

দশম সংসদের মতো এবার সংসদে বিরোধী দল হিসেবে থাকছে জাতীয় পার্টি। তবে গত সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের জায়গায় বসছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্বে থাকছেন এরশাদের ভাই জিএম কাদের। বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপের দায়িত্ব পালন করবেন মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ।

  তামান্না আলী প্রিয়া