মামলার বিষয়ে মুখ খুললেন ব্যারিস্টার সুমন

ই-বার্তা।।  সুপ্রিম কোর্টের আলোচিত আইনজীবী ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে সুমন লিখেছেন, সৎ পথে থাকলে আল্লাহ সহায় হোন। সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যাবে।

সোমবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারক আস-শামস জগলুল হোসেনের আদালতে সুমনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়।কিছুক্ষণের মধ্যেই এ মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। রাজধানীর ভাসানটেকের গৌতম কুমার এডবর নামে এক ব্যক্তি মামলাটি করেন।

তাকে আইনগত সহায়তা করেছেন অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায়। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সঞ্চয় কুমার দে দুর্জয়।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কটূক্তির অভিযোগ আনা হয়েছে ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে। বাদীপক্ষের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে। ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করা হয়েছে।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৮ মিনিটে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন ব্যারিস্টার সুমন। স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘আমার নামে ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে আমাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র হতে পারে চিন্তায় আমি বিগত ২৮-০৫-২০১৯ তারিখে ঢাকার শাহবাগ থানায় বিভিন্ন ভুয়া পেজের নাম উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি যার নম্বর হচ্ছে ১৭০৯। ভুয়া পেজ ব্যবহার করে আজকে যে মামলাটি আমার বিরুদ্ধে করা হলো এটি একটি বড় ষড়যন্ত্র বলে আমি মনে করি। আমার জিডির কাগজটি আপনাদের সম্মুখে দিলাম। আমার বিশ্বাস সৎ পথে থাকলে আল্লাহ সহায় হবেন এবং সকল ষড়য্ন্ত্র নস্যাৎ হবে।’

স্ট্যাটাসের নিচে সাধারণ ডায়েরির (জিডি) একটি কপি সংযুক্ত করে দিয়েছেন ব্যারিস্টার সুমন। ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৯ জুলাই ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমন ফেসবুকে বলেন, পৃথিবীর মধ্যে নিকৃষ্ট এবং বর্বর জাতি হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী, যাদের ধর্মের কোনো ভিত্তি নেই। মনগড়া বানানো ধর্ম। হয়তো দু-একটি খবর নিউজে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া আরও অনেক ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়, তাদের নৃশংসতার আড়ালে।

কিন্তু এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার সুমন আগে থেকেই বলে আসছেন তার নামে চালানো ওই ফেসবুক আইডিটি ভুয়া। তিনি গত ২০ জুলাই তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেন, ‘আমার নাম ব্যবহার করে একটি ফেক পেজ হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। আমি এ বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। আপনারা সচেতন থাকবেন। এটিই আমার একমাত্র পেজ যার ফলোয়ার ২০ লাখের বেশি।’

প্রসঙ্গত গত ১৬ জুলাই ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ১৬ দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে তিন কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।

এর পর তিনি বলেন, এখন সেখানে এক কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।

ভিডিওতে দেখা গেছে, একপর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতিশীল হয়ে ওই নারীর সঙ্গে হাত মেলান।

কারা এমন নিপীড়ন চালাচ্ছে? ট্রাম্পের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘দেশটির মৌলবাদীরা এসব করছে। তারা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে।’

প্রিয়া সাহার দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির বহু উদাহরণ সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরছেন নেটিজেনরা। বাংলাদেশ যেখানে ধর্মীয় সম্প্রতির মডেল হিসেবে সমাদৃত হচ্ছে, সেখানে বিদেশ গিয়ে প্রিয়া সাহার এমন নালিশ দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করছে বলেও মনে করেন তারা।

এ ঘটনায় রোববার প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আবেদন করেন ব্যারিস্টার সুমন। তিনি প্রিয়া সাহার কড়া সমালোচনাও করেন। এর একদিন পরই ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হল।