মূল্যবান জীবনের কী নির্মম পরিণতি!

ই-বার্তা ডেস্ক।।  এ জীবন কেন এত রঙ বদলায় গানের এই লাইনটির মতই বিসিএস ক্যাডার বিজ্ঞানী ড. মোজাফফর হোসেনের জীবন।  জীবনের রঙ বদলে গেলেও বদলায় নি মোজাফফর হোসেনের জীবনের শেষ অধ্যায়টুকু।  হায় জীবন, হায়রে জীবন! মূল্যবান জীবনের কী নির্মম পরিণতি! 

একটা শূন্য বাড়িতে দড়িতে বাঁধা মোজাফফর হোসেনের জীবন। অথচ স্ত্রী-সন্তান, সহায়-সম্পদ অভাব ছিল না কোনো কিছুরই ।সব থেকেও যেন কিছুই নেই তার।  মানসিক ভারসাম্য হারানোর কারণেই তার আজ এ অবস্থা।  খোঁজ খবর নেন না স্ত্রী সন্তানরা। তারা থাকেন ঢাকায়।  অন্যদিকে এক গৃহকর্মীর তত্বাবধানে এ বিজ্ঞানীর শেষ জীবনটা কাটছে চরম অবহেলা আর অনাদরে।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের প্রিন্সিপাল সাইন্টিফিক অফিসার ছিলেন ড. মোজাফফর হোসেন।  বিসিএস ক্যাডার মোজাফফর পিএইচডি করেন রসায়নের ওপর।  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবি ছাত্র ছিলেন তিনি।  চাকরিতে থাকা অবস্থাতেই তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। ২০১৪ সালে চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন মোজাফফর।  পরিবারের পক্ষ থেকে কিছুদিন চিকিৎসা করানো হলেও সুফল মেলেনি।  তাই গত জানুয়ারি মাসে তাকে মানিকগঞ্জ শহরের বান্দুটিয়া গ্রামের বাড়িতে রেখে গেছেন স্ত্রী-সন্তানরা।

তার স্ত্রীর নাম লিপি বেগম।  বড় ছেলে অর্ণব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ছোট ছেলে আরিয়ান এইচএসসিতে লেখাপড়া করেন।  প্রায় তিন মাস ধরে মোজাফফরকে গ্রামের বাড়িতে রেখে গেছেন স্ত্রী-সন্তানরা।  তার কোনো খোঁজ খবরও নেন না তারা।

বিশাল উঠানজোড়া বাড়িটিতে দুটি ঘর।  কিন্তু সেখানে কোনো লোকজন নেই।  বড় ঘরের বারান্দার একটি বেঞ্চে বসে আছেন মোজাফফর।  কোমরে তার দড়ি বাঁধা।  পরণে একটি গেঞ্জি এবং হাফপ্যান্ট। হাত-পা ফোলা। চারপাশে ভনভন মাছি উড়ছে।  মোজাফফরকে দেখাশুনাকারী গৃহকর্মী রেকেয়া বেগম জানান, মোজাফফর কাউকে ভালোমতো চিনতে পারেন না।

ড. মোজাফফরের অনেক সহায়-সম্পদ ছিল।  কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর মোজাফ্ফরের পেনশনের টাকাসহ সহায়-সম্পত্তি স্ত্রী আর দুই ছেলে লিখে নিয়েছেন।  এখন বিনা চিকিৎসায় তাকে গ্রামের বাড়িতে ফেলে রেখে গেছেন।  আর তারা থাকছেন ঢাকায়। ঘরে কোনো বিছানাপত্র না থাকায় রাতে মেঝেতেই ঘুমাতে হয় তাকে।

ই-বার্তা/ আরমান হোসেন পার্থ