ইডেন কলেজ ছাত্রী রাহিমার গল্প

ই-বার্তা ।। গোপালগঞ্জে বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে হাত বিচ্ছিন্ন বাস শ্রমিক হৃদয় মিনারের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন ঢাকা ইডেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী রাহিমা মনি।

মিনারের কোন স্বজন না থাকায় রাহিমা মনি ওই বাস শ্রমিককে উদ্ধার করে প্রথমে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার সময় হৃদয়ের রক্তের প্রয়োজনে চিৎকার করে গলা ফাটিয়েছিলেন রাহিমা। অবস্থার অবনতি হলে শেষে তাকে ঢাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ সময়ও হাসপাতলে আসেনি হৃদয়ের কোন স্বজন। শেষমেশ হৃদয়ের এ্যাম্বুলেন্সে নিজেই উঠে পড়েন রাহিমা মনি।

হৃদয়কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি করেন মিনার। রাতেই হৃদয়ের জ্ঞান ফিরে আসে। স্বজনরা হাসপাতালে গেলে তাদেরকে চিনতেও পারেন হৃদয়। গভীর রাত পর্যন্ত হৃদয়ের পাশেই ছিলেন রাহিমা। বুধবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরেও রাহিমা হৃদয়ের কাছে গিয়েছেন। খোঁজ খবর নিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসায় হৃদয় দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠেবে বলে রাহিমা মনি জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার কাজীপাড়া গ্রামের রাহিমা মনি টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের বাসে করে ঘটনার দিন মঙ্গলবার সকালে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকা উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ওই গাড়িতেই বাস শ্রমিক হৃদয় একেবারে পেছনের ছিটে বসে ঢাকা যাচ্ছিলেন। তাদের বাসটি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রামে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক বাসকে অতিক্রম করার সময় বাসের পেছনের অংশে সজোরে ধাক্কা মারে। বাসের পেছনের অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সাথে সাথে বাস শ্রমিক হৃদয়ের ডান হাত বাহু থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে যায়।

রাহিমা মনি বলেন, একই বাসে করে আমরা ঢাকা যাচ্ছিলাম। হৃদয়ের কোন স্বজন তার সাথে ছিল না। তার বিপদে মানবিক কারণে আমি এগিয়ে আসি। ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় তাকে আমি একাই উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক বিভাগে ভর্তি করি। সার্বক্ষণিক আমি তার সাথে আছি। ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। রাতেই তার জ্ঞান ফিরেছে। চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। আশা করছি দ্রুত হৃদয় সুস্থ্য হয়ে উঠবে।

হৃদয়ের বাবা রবিউল মিনা বলেন, রাহিমা মনি মেয়ে হয়েও সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। আমার ছেলের প্রাণ বাঁচাতে সে ত্রাণ কর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে সে মানবতাবাদী মানুষ। এ কারণে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সে এ কাজটি করেছে। তাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর মত ভাষা আমার জানা নেই। আমি তার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সাফল্য কামনা করি।