খেলাপি ঋণ আরও বাড়লো

ই-বার্তা ডেস্ক।। খেলাপি ঋণ কমার পরিবর্তে বেড়ে যাচ্ছে। বছরের শুরুতে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ থাকবে না।

তবে তেমনটা ঘটেনি। নতুন অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আরো প্রায় চার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ। দেশের শিল্পকারখানায় গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা, উৎপাদন খরচ অনেক বেশি ও বেশি সুদ দিয়ে কারখানা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন শিল্প মালিকরা। এতেও বাধ্য হয়ে অনেকে খেলাপি হয়ে গেছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের এক গবেষণায় ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম বিষয়ে বলা হয়, একজন বড়ো ব্যবসায়ীকে অনেকগুলো ব্যাংক মিলে ঋণ প্রদান করে, এতে অনেক সময় চাহিদার বেশি ঋণ চলে যায়। এটা গ্রাহকদের অন্য খাতে ঋণ ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। এর ফলে ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ পায় না। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। তিন মাস আগে (জুন শেষে) মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপির ঋণ ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা বেড়েছে। সর্বশেষ ১৭ নভেম্বর মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৯ শতাংশ সুদহারে ঋণ পুনঃতপসিলের (রিশিডিউলিং) সুবিধার সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আরো ৯০ দিন সময় পাবেন আবেদনকারীরা। সূত্রমতে এই সুবিধায় ঋণ পুনঃতপসিল করে ইতিমধ্যেই প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিত করা হয়েছে। তারপরেও এই পাহাড় সমান খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যর্থ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১০ জানুয়ারি সব ব্যাংকমালিকের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেছিলেন, আজ থেকে খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না। তবে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর এ নয় মাসে খেলাপি ঋণ ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়েছে।

বাংলাদেশের আর্থিক খাত বিশ্লেষণ করে আইএমএফ বলেছে, এখানে খেলাপি ঋণ আড়াল করে রাখা আছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি দুর্বল, ব্যাংক পরিচালক ও ব্যবস্থাপকদের আচরণ বেপরোয়া। নিয়ম ভাঙলে শাস্তিও পান না তারা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় এবং বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে।