ঘুষ না নিয়ে সংবাদ প্রকাশে সাংবাদিককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

ই-বার্তা ডেস্ক ।।  বরগুনার এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। ইমরান হোসেন (টিটু) নামের ওই সাংবাদিক একাত্তর টিভি ও রাইজিংবিডি ডটকমের বরগুনা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা যায়, চলতি বছরের ১ মার্চ পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ইয়ার উদ্দিন খলিফার মাজারের দুর্নীতি নিয়ে ইমরান হোসেন টিটুর অনুসন্ধানি রিপোর্ট প্রচার হয় একাত্তর টিভিতে। প্রতিবেদনটি করার সময় মাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মল্লিকের ভাগিনা বাদল ওরফে বাক্স বাদল প্রতিবেদনটি না করার জন্য একাত্তর টেলিভিশনের বরগুনা অফিসে এসে ঘুষ দিতে চান। তবে প্রতিবেদক ইমরান হোসেন তা ফিরিয়ে দেন। পরে ঘুষ দিতে চাওয়ার ভিডিওসহ প্রতিবেদনটি একাত্তর টিভিতে প্রচার হলে বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড় ওঠে।এরপর এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন বাদল। বিষয়টি জানাজানি হলে তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একইসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়।

বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন ফসল বলেন, সাংবাদিক ইমরান হোসেন টিটুকে হয়রানি করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলা করা হয়েছে। এর আগেও টিটু বিভিন্ন দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। মামলা করে কখনও সাংবাদিকদের লেখা বন্ধ করা যায়নি, যাবে না। সাংবাদিকরা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লিখবে, এটাই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে একাত্তর টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি ও বরগুনার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ইমরান হোসেন টিটু বলেন, প্রতিবেদন করার সময় বাদল নামে একজন গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে আমার বরগুনা অফিসে দেখা করতে আসেন। এ সময়ে তিনি প্রতিবেদন বন্ধ করার জন্য ঘুষের প্রস্তাব দেন । আমি এসব কথোপকথন ভিডিও রেকর্ড করে প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত করে প্রচার করি। এর একমাস পরে বাদল বাদী হয়ে বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালে আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। আমি একটি সূত্রের মাধ্যমে মামলার বিষয়ে জানতে পারি। এরপর আমি সাইবার ট্রাইব্যুনালে খোঁজ নিয়ে মামলার সত্যতা জানতে পারি। তিনি বলেন, এই বাদল আমাকে প্রতিবেদন বন্ধ করার জন্য ঘুষ দিতে চেয়েছে, আমি ঘুষ না নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করি। এটা কি আমার অন্যায়? তিনি ঘুষ দিতে চেয়েছেন এটা কি অন্যায় নয়? আমি তদন্তকারী পুলিশ প্রশাসন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখি। আমি আশা করি পুলিশ সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবে এবং এই মামলা থেকে আমি মুক্তি পাবো।

মির্জাগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, কথিত সাংবাদিক বাদল বিগত দিনে বিভিন্ন সময়ে চাঁদাবাজি ও নারী কেলেঙ্কারিসহ নানান ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। তার চাঁদাবাজির একটি কল রেকর্ড অনেক আগেই ভাইরাল হয়েছে। নামধারী সাংবাদিক বাদলের এমন কর্মকাণ্ডে আমরা লজ্জিত। দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

বরগুনা অনলাইন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আবু জাফর মো. সালেহ বলেন, টিটুর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে ষড়যন্ত্রমূলক মামলার প্রত্যাহারের দাবি জানাই। একইসঙ্গে এই মামলার ইন্ধনকারীদের তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে মির্জাগঞ্জ থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন তালুকদারের ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এদিকে হয়রানিমূলক মামলার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বরগুনা জেলা অনলাইন সাংবাদিক ফোরাম, বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বরগুনা রিপোর্টার্স ইউনিটি, আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন, আমতলী প্রেসক্লাব, তালতলী প্রেসক্লাব, তালতলী সাংবাদিক ফোরাম ও মির্জাগঞ্জ প্রেসক্লাব।