পদ্মফুলের রাজ্য নাটোরের চিনিডাঙ্গা বিল

তারিকুল হাসানঃ স্বচ্ছ পানির নিচে সোনালী শ্যাওলাগুলো চিকচিক করছে। ছোট ছোট মাছ ছুটে বেড়াচ্ছে এদিক-ওদিক। পানির নিচে থেকে চোখ তুলতে তুলতেই সরু কাঠের নৌকা ঢুকে পড়ে পদ্মের রাজ্যে। গোলাকার সাদাটে সবুজ পাতায় ছেয়ে গেছে চারপাশে, গোল পাতার মধ্যে সাদা ও গোলাপি আভা নিয়ে পাপড়ি ছড়িয়ে অসংখ্য পদ্মফুল ছড়াচ্ছে শোভা, সৌন্দর্য্য ও শুভেচ্ছায় যেন বলছে স্বাগতম পদ্মবিলে!

অনন্য সৌন্দর্য্যের জন্য নাটোরের চলনবিলের নাম অজানা আছে, এমন মানুষ খুজে পাওয়া দায়। তবে, জেলার বড়াইগ্রাম থানার চিনিডাঙা বিল যে পদ্মফুলে ভরে প্রকৃতির প্রকৃত নির্যাসে চোখকে শান্তির স্বর্গ দেখাচ্ছে তা অনেকের অজানা।

কিন্তু ভ্রমণপিয়াসু মানুষগুলো এরইমধ্যে সেই পদ্মবিলের অকৃত্রিম আবহাওয়ার কথা হয়তো জেনে গেছে, সে পদ্ম, পাতা ও ফুল ছুয়ে যেতে, দূর-দুরান্ত থেকে পাড়ি দিচ্ছে চিনিডাঙার পদ্মবিলে।

প্রাইভেট কার, মটরসাইকেল, অটোভ্যান, ভ্যান ও রিক্সাযোগে আশেপাশের থানা ও জেলা হতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ছুটে আসছে পদ্মবিলে প্রাণখুলে নিশ্বাস নিতে। নাটোর সদর থেকে বাবা-মায়ের সাথে পদ্ম বিল দেখতে এসেছে শ্রাবণ। কেমন লাগছে জানতে চাইলেই বলেন, এত সবুজ পাতা আর এত পদ্মফুল একসাথে এর আগে কখনও দেখেননি তিনি।

ঢাকা রাজশাহী মহাসড়কের বড়াইগ্রাম থানা মোড় থেকে ২ থেকে ৩ কিলোমিটার পরেই পারকুল বাজার। সেখান থেকে আর দুই কিলোমিটার ভেতরে গেলেই চিনিডাঙ্গা বিল। আধা-পাকা রাস্তা গিয়ে থেমেছে বিলের মাঝখানে, সেখান থেকে কাঠের ছোট-বড় নৌকায় ১০-১৫ মিনিটেই পৌছে যাওয়া যাবে বহুল আকাঙ্খিত গন্তব্যে।

চিনিডাঙ্গার আদি-পুরুষেরা সবাই মৎস্যজীবি ছিলেন, যা এখনও প্রধান পেশা ১৬৫ জেলে পরিবারের। পদ্মবিলের ইতিহাস অনেক পুরোনো, ২শ বছর আগে থেকেই পদ্মের সমাহার ছিল এ বিলে। তবে, মাত্র দু-তিন বছর আগে থেকে দেশব্যাপী এ বিলের পরিচিতি ছড়িয়েছে। পদ্মবিলের জনপ্রিয়তা ঘিরে এ গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হতে শুরু করেছে। নৌকায় প্রতিদিন দর্শনার্থীদের পদ্মবিলে ঘুরিয়ে ১ হাজার থেকে ১৫শ টাকা আয় করেন একজন মাঝি। পর্যটনকারিদের সুবিধার জন্য ২৫ থেকে ৩০ টা নৌকা সবসময় ঘাটে থাকে, ৩শ, ৫শ, ৭শ দরদাম মিটে গেলেই সারি থেকে ছাড়া হয় সেসব নৌকা। এসব কথা বলে স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মাদ ইসলাদ উদ্দিন বলেন, এখানে পদ্মফুল ছেড়া নিষেধ তবুও কিছু কিছু দর্শনার্থীরা ফুল ছিরে ফেলেন। পযর্টনকারীদের জন্য যদি বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের সুব্যবস্থার করা যায় পদ্মবিলের পরিবেশ ও প্রতিবেশ আর সুন্দর হবে বলে জানান তিনি।

ছোট্র সংসার আম্বিয়া বেগমের, তাও, অভাব যেন যায় না। ঘাটের পাশেই বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন তিনি। এখন খরচবাদে প্রতিদিন ৮শ থেকে ১হাজার টাকা আয়ে অভাব কেটে সংসার খুব ভালোই চলছে। ঋণ যেন আর না করতে হয়, সুদ যেন আর না দিতে হয়, গরীবের এ আয় যেন অব্যহত থাকে, তাই তিনি বিশেষভাবে পদ্মবিলের উন্নয়ন চান।
আম্বিয়ারমত আরও শত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে পদ্মবিলকে ঘিরে, স্বল্প সে আয়ে সুখে-শান্তিতে দিন কেটে যাচ্ছে তাদের বলে জানান, চানাচুর বিক্রেতা আল-আমিন।

গুরুদাসপুর উপজেলার প্রকৃতিপ্রেমী চেয়ারম্যান মো: আনোয়ার হোসেন পদ্মফুলের মেলা দেখতে স্বপরিবারে গিয়েছেন পদ্মবিলে, কেমন দেখলেন জানতে চাইলেই তিনি বলেন, “সত্যিই সুন্দর, প্রকৃতি যেন রূপের চাদর বিছিয়ে রেখেছে। পদ্মফুলের রঙিন আভা মনকে নিমিষেই যেন রাঙিয়ে দিল। তবে, এই বিলের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। এই পদ্মবিলের অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আমি সর্বাত্বক সহযোগিতা করবো, পযর্টনকারীরা এসে বিশুদ্ধ বাতাসে যেন প্রাণখুলে নিশ্বাস নিতে পারেন”।