মঙ্গলের আগমনী বার্তা নিয়ে শুরু মঙ্গল যাত্রা

‘চৈত্রের বিষন্ন রাত্রি তার/দিয়ে গেল শেষ উপহার/প্রসন্ন নবীন/বৈশাখের ঝলোমলো দিন।/পুরাতন গত হোক! যবনিকা করি উন্মোচন/তুমি এসো হে নবীন! হে বৈশাখ! নববর্ষ!/এসো হে নতুন!’ কবি সুফিয়া কামাল এভাবেই আবাহন করেছেন বাংলা নতুন বছরকে।

আজ শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪২৫। সব অশুভ ও অসুন্দরকে পেছনে ফেলে নতুনের কেতন উড়িয়ে আগমন ঘটেছে নতুন বছরের।রাজধানীর রমনা উদ্যানের অশ্বত্থমূলে পহেলা বৈশাখের ভোরে বাঁশিতে আহীর ভৈরব রাগালাপের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছরের আবাহন।ছায়ানট এ প্রভাতী আয়োজন করেছে। এটি ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণের ৫১তম আয়োজন।

 

ভোর ৬টা ১০ মিনিটে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘অরুণকান্তি কে গো যোগী ভিখারি’ গানে শিল্পী মর্তুজা কবির মুরাদ তার বাঁশিতে তুলেছেন আহীর ভৈরব রাগ। ১৫ মিনিট ধরে চলা বাঁশির সুরের মুর্ছনা ছড়িয়ে পড়ে রমনার চারপাশে।

 

এর পরেই শুরু হয় প্রথম সম্মেলক গান ‘ঐ পোহাইল তিমির রাত্রি’। খায়রুল আনাম শাকিল পরিবেশন করেন একক গান ‘কল্যানী শুভ প্রভাত, প্রথম আলোর চরন ধ্বনি’।

 

শাশ্বত বাঙালি হবার প্রত্যয়ে ছায়ানটের এবারের প্রভাতী বর্ষবরণের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিশ্বায়নের বাস্তবতায় শিকড়ের সন্ধান’। অনুষ্ঠানে দেড় শতাধিক শিল্পীর অংশগ্রহণ করেছেন।

 

এ আয়োজন শেষ হবে সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ। এতে একে একে পরিবেশন করা হয়েছে ১৬টি একক গান, ১২টি সম্মেলক গান, দুটি আবৃত্তি। ছায়ানটের সভাপতি সাঞ্জিদা খাতুনের নতুন বছরের আবাহনী বক্তব্যে শেষ হবে অনুষ্ঠান।

 

ছায়নটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের রমনা এলাকায় নিরাপত্তায় সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আজ বর্ষবরণকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরসহ বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত অনুষ্ঠানমালাতেও কড়া নিরাপত্তার আয়োজন করেফে ডিএমপি।

 

প্রতিবারের মতো চারুকলার আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রায় এবার লালন সাঁইজির গানের অমিয় বাণী ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ প্রতিপাদ্য হচ্ছে। যাতে আবহমান বাংলার লোকজ মোটিফের মধ্য দিয়ে সোনার মানুষ হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। সকাল ৯টার পরপরই বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।

 

বিভিন্ন লোকজ শিল্প কাঠামো নিয়ে এ শোভাযাত্রা চারুকলার সামনে থেকে বের হয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (সাবেক রূপসী বাংলা) চত্বর ঘুরে চারুকলার সামনে এসে শেষ হবে। এ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এবারের শোভাযাত্রায় মোট বড় শিল্প কাঠামো থাকছে সাতটি। এগুলো হলো বক ও মাছ, মা ও পাখি, সূর্য, হাতি, জেলে, মহিষ, সাইকেলে চড়া ট্যাপা পুতুল।

 

এদিকে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক। বৈশাখের সাজে সাজানো হয়েছে পুরো শপিংমল। শপিংমলের বাইরে খোলা জায়গায় বৈশাখী মেলা ও ভেতরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেহেদী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হয়ে মেলা একটানা চলবে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত। মেলায় থাকছে লোকজ সংস্কৃতির বানর নাচ, টিয়া পাখির মাধ্যমে ভাগ্য গণনার মতো আয়োজন। এ ছাড়াও বৈশাখের দিন সকালে মেলায় রাজধানীবাসী ঐতিহ্যবাহী পান্তা-ইলিশের স্বাদ নিতে পারছেন। আর বিকালে থাকবে দেশবরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় সঙ্গীতানুষ্ঠান।

 

বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও সব উপজেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনসহ আলোচনা সভা ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ইউনেস্কো কর্তৃক মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অবস্তুগত/অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকে গুরুত্বারোপ করে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে এবারও।

 

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করছে। সেই সঙ্গে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় জাদুঘর ও প্রত্নস্থানসমূহ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়ে (শিশু-কিশোর, প্রতিবন্ধী ও ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা টিকিটে)।

 

 

 

ই-বার্তা/ডেস্ক