মা–বাবার ভিক্ষাবৃত্তি, সন্তানদের ডেকে পাঠালেন নির্বাহি কর্মকর্তা

ই-বার্তা ডেস্ক ।।।  দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের দক্ষিণ হরিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা জানো বালা (৬৫)। অনেক আগেই মারা গেছেন তাঁর স্বামী।  জানো বালার তিন ছেলে। তিন ছেলেই বিভিন্ন গ্রামে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন।  স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে কোনো সন্তানই তাঁকে কাছে রাখেননি।  বাধ্য হয়ে তাই অন্যের জায়গায় থাকেন তিনি।  জীবন চালান ভিক্ষাবৃত্তি করে।

জানো বালার মতো একই অবস্থা ওই গ্রামের খির বালা (৭০) ও নিদ বালার (৬৩)।  সন্তানেরা খোঁজখবর না নেওয়ায় তাঁরা ভিক্ষা করে জীবন চালান। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুর রহমান কাটলা ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে জানো বালা, খির বালা ও নিদ বালাকে তাঁদের সন্তানসহ ডাকেন। সেই সঙ্গে কাটলা ইউনিয়নে ভিক্ষা করেন এমন ২৫ জন নারী এবং চারজন পুরুষকে তাঁদের সন্তানসহ ডেকে পাঠান।  

দক্ষিণ কেশবপুর গ্রামের রহিমা খাতুন (৬২) এসেছিলেন ভাতিজা আলম মিয়ার সঙ্গে। ইউএনওকে রহিমা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘খায়ে না খেয়ে চার ছলকে বড় করেচ্ছি।  চার ছলের মধ্যে তিন ছলে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে। আরেক ছেলে ঢাকায় চালায় রিকশা। বড় ছেলের মেয়ের বিয়ের সময় হামার ভাগের জমিটুকু নিয়া বিক্রি করে দিছে। তা–ও ছলের কাছে হামার ঠাঁই হইল না।’ পরে ভাতিজার দেওয়া একটি ভাঙাচোরা ঘরে কোনো রকম ঠাঁই পেয়েছেন রহিমা।  কিন্তু জীবন বাঁচাতে ভিক্ষার ঝুলি আর ছাড়তে পারেননি।

এ সময় ভিক্ষুক মা–বাবাদের সঙ্গে আসা সন্তানদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয় মা–বাবার খাবার, চিকিৎসাসহ আনুষঙ্গিক খরচের জন্য মাসে কত টাকা প্রয়োজন? সন্তানদের কাছ থেকে খরচের হিসাব নেওয়ার পর উপস্থিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেনের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন সুবিধাজনক প্রকল্পের আওতায় ওই মা–বাবাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।  এ ছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিস্তিতে বেশ কিছু ভ্যানগাড়ি কিনে দেওয়ার উদ্যোগ নেন ইউএনও। সন্তানদের মা–বাবাদের প্রতি নৈতিক দায়িত্ব সম্পর্কে বোঝান তিনি।  মা–বাবাদের সঙ্গে আসা সন্তান, স্বজনেরা তাঁদের মা–বাবা ও স্বজনদের আর ভিক্ষা করতে দেবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

ই-বার্তা / শাহাদাত ছৈয়াল