সতর্কতা দরকার, বিশেষ সতর্কতা!

পুলিশ গিয়ে যেখানে বিরক্ত করতে পারবে না, এমন জায়গা বেছে নিয়েছে গ্রামের আড্ডাপ্রিয় মানুষেরা, পৃথিবীর অনুভূতি প্রকাশ হচ্ছে সেখানে। কেউ হয়তো পাশাপাশি বসে, কেউ দাড়িয়ে। রাস্তার একটু পাশে, যেখানে অন্ধকার অথবা ভালোভাবে না তাকালে বোঝা মুশকিল কেউ আছে, সেখানে চলছে আড্ডা আর গল্প।

সাধারণ মানুষের চলাফেরা দেখে খুবই স্বাভাবিক মনে হয়েছে, তবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপারে সবাই সচেতন, কখন যে আসে? ভ্যান চালক ভ্যান চালাচ্ছেন প্যাসেনজ্যারদের সাথে হাঁসিমুখে কথা বলেছেন, বাজারের বন্ধ চাঁ স্টলের বেঞ্চে বসে তিন, চারজন একসাথে গল্প করছেন। সেসব মানুষের সচেতনতা বলতে, আমাদের এলাকায় কেউ তো এখনো আক্রান্ত হয়নি!

গতকাল লেবু কিনতে বাজারে গিয়েছিলাম। যাওয়া ও আসার পথে এসব দৃশ্যের সাক্ষী হই।

অন্যদিকে, সরকারের পাশাপাশি, মানবতাকামী মানুষেরা এরই মধ্যে জনস্বার্থে এগিয়ে এসেছেন। তারা বিভিন্ন ধরণের সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন মানুষ, সমাজ ও দেশের কল্যাণে। অনেকে, নিজের জীবন বাজি রেখে মানুষের জন্য কাজ করছেন, সমাজে সচেতনতা তৈরি করছেন, গরীব ও অসহায় মানুষদের খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবাদি দিয়ে সাহায্য ও সহযোগিতা করছেন। সত্যি, তাদের কাজের প্রশংসা সর্বসাধারণের করতেই হবে। আমি অন্তরের অর্ন্তস্থল থেকে সেসব বিবেকবান এবং মানবতাকামী মানুষদের ভালবাসা ও শুভকামনা জানাচ্ছি।

তবে, ভাই, যারা জনসচেতনতা ও জনকল্যাণে কাজ করছেন, তাদের অনেক সময় দলবেঁধে এবং নিদিষ্ট্য দুরত্ব বজায় না রেখে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। তাদের কি আরও বেশি সতর্কতা জরুরী নয়?

আর, এই বিপদের মধ্যে যারা মনের সুখে গাঁয়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাদের মনে কি কোন দয়া, মায়া, ভালোবাসা, কিচ্ছু নাই। বুঝলাম, আপনার ও আপনার আব্বার কোনো রোগ নাই, কিচ্ছু হবেও না আপনাদের কিন্তু আপনার সেই কাছের বন্ধুর বাবার তো থাকতে পারে ডায়েবেটিকস, মায়ের থাকতে পারে কিডনির জটিলতা। কিভাবে, তারা এই মরণঘাতি ভাইরাসের সাথে মোকাবিলা করবে, বলতে পারেন, ভাই?

বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের বসবাস করেন। বাংলাদেশ রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে খুব সীমিত আকারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। তবে বিষেশজ্ঞরা বলছেন, মানুষ সচেতন, সতর্ক ও নিরাপদে ঘরে না থাকলে এই ভাইরাসের খুব দ্রুত ম্যাসিভ ট্রান্সমিশন ঘটবে।

জন হপকিন্স ইউনিভার্সটির তথ্যনুসারে, বিশ্বের মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১১ লাখ ২৮৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৮ হাজার ৯২৯ জন।

বাংলাদেশ রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, বাংলাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে মোট আক্রান্ত ৭০ জনের মধ্যে ৮ জন মারা গিয়েছেন।

উন্নত দেশগুলোতে যখন প্রতিদিন শত শত মানুষ মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিচ্ছেন, কি হবে আমাদের দেশের, যদি এখনও আমরা সচেতন না হই!

জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও স্থানীয় সরকারের পাশাপাশি শিক্ষক, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিবর্গ, সচেতন মানুষ এবং সবাই এক হয়ে ঘরে ঘরে বার্তা পৌছে দেওয়া দরকার, সতর্কতা প্রয়োজন, বিশেষ সতর্কতা। সুস্থ ও নিরাপদে থাকতে হলে সবার সচেতনতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

যারা বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করছেন, তাদের আরও বেশি সতর্কতা জরুরী। সবসময় খেয়াল রাখবেন…ত্রাণ বিতরণ, পাড়া বা মহল্লায় স্প্রে ছিটানো, মাস্ক বিতরণ, বিভিন্ন জায়গায় সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করার সময় যেন অবশ্যই আপনাদের নিদিষ্ট্য দুরত্ব বজায় থাকে। …ভুলে যাবেন না, আপনার কিছু হলে, এই দুর্যোগের সময় দেশের একজন সেবক কমে যাবে।

সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন ও নিরাপদে থাকবেন সেই প্রত্যাশা রইলো।

লেখকঃ তারিকুল হাসান, সম্পাদক, বার্তা