সুস্থ করতে খালেদা জিয়াকে সিটিস্ক্যান ও এমআরআই করানো লাগতে পারে

ই-বার্তা ডেস্ক ।। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে তুলতে সিটিস্ক্যান ও এমআরআই করানো লাগতে পারে। কারণ তার শরীরে নতুন কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাকে রক্ত ও এক্সরে করানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

দুটি পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনে এসব বিষয় উল্লেখ রয়েছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

তিনি বলেন, ‘আমরা রোববার খালেদা জিয়াকে দেখতে কারাগারে গিয়েছিলাম। কারাগারের যে পর্যন্ত গিয়েছিলাম, সেখান থেকে ৫০ গজ দূরে থাকেন খালেদা জিয়া। তিনি আমাদের কাছে হাঁটুতে ভর দিয়ে আসেন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে যখন ব্যবস্থাপত্র লেখা হয়, তখন তিনি (খালেদা জিয়া) ডাক্তারদের জানান, জেলখানা থেকে আমাকে যেসব ওষুধ দেয়া হয়েছিল সেসব খেয়ে কোনো কাজ হয়নি।’

এদিকে মঙ্গলবার বিকালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রতিবেদন (খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সংক্রান্ত) হাতে পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল  বলেন, ‘খালেদা জিয়ার অসুস্থতার মাত্রা খুব একটা তীব্র নয়।

 

আগে থেকে তার শরীরে যেসব সমস্যা ছিল ওইসব সমস্যাই রয়েছে। নতুন করে কোনো রোগে তিনি আক্রান্ত হননি। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনে ব্লাড টেস্টের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া কিছু ওষুধের কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদন ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী তার চিকিৎসা চলছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আদালত বা সরকারের নির্দেশে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বিশেষজ্ঞ বোড গঠন করা হয়নি। কেউ অসুস্থতা বোধ করলে কারাবিধি অনুযায়ী তার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়ার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।’

 

খালেদা জিয়া আগে থেকেই হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, আথ্রাইটিজ (শরীরের জয়েন্টে ব্যথা) এবং কন্ডোলাইসিসে ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশ পাঠাতে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের চিকিৎসকরা এখনও মনে করছেন না যে, তাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠাতে হবে।’

 

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শামসুজ্জামান শাহীন জানান, আগের সমস্যাগুলোর পাশাপাশি খালেদা জিয়ার নতুন কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। অপাতত তার রক্ত পরীক্ষার পাশপাশি দুই হাঁটুতে এক্সরে করাতে হবে। পরীক্ষার পরই বোঝা যাবে তার অসুস্থতা গুরুতর কিনা। এরপরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।

 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলকে খালেদা জিয়া সহযোগিতা করেছেন উল্লেখ করে ডা. শাহীন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা। তার হাঁটুতে এখন যে ব্যথা তা বয়স থেকে হতে পারে। আগের অপারেশনের জেরে হতে পারে, আবার নতুন হতে পারে।

 

তার কোমর ও ঘাড়ে বড় ধরনের কোনো সমস্যা আছে কিনা তা জানতে সিটিস্ক্যান বা এমআরআই করানো লাগতে পারে। তার ব্যথা কেবল শিনশিন-ঝিনঝিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নাকি হাড় পর্যন্ত পৌঁছেছে তা জানতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।’

 

এক প্রশ্নের জবাবে ডা. শাহীন বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) রোগের দুই-তিনটি উপসর্গ বেড়েছে। হাত, পা এবং কোমরে ব্যথা বেড়েছে। হাত ঝিমঝিম করে। তিনি আগে যেসব ওষুধ সেবন করতেন, তার সঙ্গে আরও কিছু ওষুধ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তাকে ব্যায়াম করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আমরা যেসব ওষুধ দিয়েছি তিনি সেসব খাবেন। তবে এর আগে তিনি ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।’

 

জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাছির উদ্দিন সাংবাদিকদের  বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন মঙ্গলবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আমার দফতরে দিয়েছেন।

 

এতে কারা মহাপরিদর্শককে এড্রেস করা হয়েছে। পরে কারা অধিদফতর থেকে একজন কর্মকর্তা দুপুরে আমার কাছে এলে প্রতিবেদনটি সিলগালা অবস্থায় কারা মহাপরিদর্শকের কাছে পাঠিয়ে দিই। পরে প্রতিবেদনটি পাওয়ার বিষয়টি কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন আমাকে নিশ্চিত করেন।’

 

কারা মহাপরিদর্শকের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবেদনটি পাওয়ার পর সেটি নিয়ে বেলা আড়াইটার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান কারা মহাপরিদর্শক। এরপর প্রতিবেদনটি তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে হস্তান্তর করেন।

 

প্রতিবেদনে কী উল্লেখ করা হয়েছে, জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। যা বলার মন্ত্রী মহোদয় বলবেন।’ ডিআইজি (প্রিজন্স) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খুবই সেনসেটিভ। তাই এ নিয়ে কারা কর্মকর্তাদের কথা বলতে বারণ করা হয়েছে।’

 

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসক ডা. বিপ্লব বিশ্বাস সাংবাদিকদের  বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভালো আছেন। মাঝে তার শরীরে ব্যথা বেড়েছিল। ওষুধ খাওয়ার পর ওই ব্যথা কমেছে।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেয়া ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করবেন না বলে সোমবার খালেদা জিয়া কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

 

ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তিনি নতুন কোনো ওষুধ নেবেন না বলেও জানিয়েছেন। প্রশ্ন হল, কারাবন্দি থাকা অবস্থায় কেউ ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন কিনা? এ বিষয়ে ডা. বিপ্লব বিশ্বাস বলেন, ‘বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের ওপর।

 

সরকার চাইলে ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়েও চিকিৎসা করাতে পারে।’ উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয় খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে। রায় ঘোষণার পরই খালেদা জিয়াকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার রাখা হয়েছে।

 

 

সূত্র/যুগান্তর