ডিম্বাশয়ের যত্নে সচেতন হোন
প্রতিটি মানুষের জন্ম ছোট্ট একটা ভ্রূণ থেকে। আর ভ্রূণ তৈরি হয় নারী-পুরুষের মিলনের মাধ্যমে। মিলনের সময় পুরুষের শুক্রাণু আর নারীর ডিম্বাণু মিলিত হয়। মিলিত হওয়ার কিছুদিন পর ভ্রূণ তৈরি হয়। ডিম্বাণু আসে ডিম্বাশয় থেকে। ডিম্বাশয় নারীর জননতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
পুরুষের শরীরে কোনো ডিম্বাশয় থাকে না। ডিম্বাশয় মেয়েদের তলপেটের নিচের দিকে এবং জরায়ুর দুই পাশে (তলপেটের ভেতরের দিকে) থাকে। ডিম্বাশয় দেখা যায় না। এটি ছোট একটি মাংসল অঙ্গ। সংখ্যায় এক জোড়া। দেহের বাঁ ও ডান দিকে এদের অবস্থান। ডিম্বাশয়ের দৈর্ঘ্য তিন সে.মি. ও প্রস্থ দুই সে.মি. এবং পুরুত্ব এক সে.মি.। মাংসল থলেটা ধূসর গোলাপি ও ডিম্বাকৃতির। ডিম্বাশয়কে ইংরেজিতে বলে ওভারি।
গর্ভাবস্থার আগে ডিম্বাশয়ের ওপরের ত্বক মসৃণ থাকে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় ডিম্বাশয়ে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন দেখা যায়। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ হওয়া পর্যন্ত ডিম্বাশয়ের ওপরের ত্বকে পরিবর্তন চলতেই থাকে।
দুটো ডিম্বাশয়ের সঙ্গে লাগানো থাকে ওভারিয়ান টিউব বা ইউটেরাইন টিউব। মিলনের সময় এই নালির মাধ্যমে ডিম্ব ডিম্বাশয় থেকে জরায়ুতে আসে। জরায়ুকে বলা হয় ভ্রূণ সৃষ্টির কারখানা। ডিম্ব হচ্ছে সেই কারখানার কাঁচামাল। বয়ঃসন্ধিকালের আগে ওভারি লালচে থাকে। কিন্তু বয়ঃসন্ধিকালের পরে তা ধূসর হয়ে যায়। প্রথম সন্তান জন্মদানের পর ডিম্বাশয় আর কখনো আগের অবস্থায় ফিরে যায় না। ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বস্খলন হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলে ওভুলেশন।
জন্মগত ত্রুটি হিসেবে ডিম্বাশয় না থাকলে ঋতুস্রাব হবে না, গর্ভধারণও হবে না কিন্তু একজন নারী বেঁচে থাকবে।
ডিম্বাশয় থেকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসৃত হয়। এগুলো হলো ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন, এন্ড্রোজেন, রিলাক্সিন।
১। ইস্ট্রোজেনের কাজ
– ডিম্বাশয়ে ফলিকিউলার গ্রোথে (গর্ভাবস্থায় যা ভীষণ জরুরি) সাহায্য করে এবং গর্ভস্থ শিশুর ডিম্বাশয় গঠনে ভূমিকা রাখে।
– গর্ভস্থ শিশুর জননতন্ত্রের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।
– ইউটেরাইন টিউবের তৎপরতা বাড়ায়।
– গর্ভাবস্থা ও সন্তান জন্মের সময় জরায়ুকে আকারে বড় করে এবং বুকের অভ্যন্তরীণ গঠনে সাহায্য করে।
– ঋতুস্রাব তৈরি করে এবং রক্ত জমাট বাঁধায়।
– মেয়েদের থাই, বুক, নিতম্বে চর্বি জমায় এবং সারা শরীরে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ায়।
– ত্বক নরম ও মসৃণ করে।
২। প্রজেস্টেরনের কাজ
– শিশুর জন্য বুকের দুধ তৈরি করে।
– দেহের সব জননতন্ত্রের ওপর ভূমিকা রাখে এবং গর্ভনিরোধক হিসেবে কাজ করে।
– ভ্রুণের পুষ্টি জোগায় এবং শরীরের কোষে সামান্য পরিমাণ লবণ ও পানি জমায়।
– যোনিতে নিঃসরণে ভূমিকা রাখে।
ডিম্বাশয়ের যত্নে যা করবেন
– গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না।
– ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া জš§নিরোধক ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খাবেন না। দীর্ঘদিন ধরে গর্ভনিরোধক বড়ি সেবন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
– ঋতুস্রাবের সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকুন। ঋতুস্রাব হতে বিলম্ব হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
– প্রসবের পর দীর্ঘ সময় ধরে নিচে বসে থাকবেন না।
– মোটা হওয়ার আশায় স্বেচ্ছায় স্টেরয়েড বা হরমোন-জাতীয় ওষুধ খাবেন না।
– অপরিণত বয়সে বিয়ে ও সন্তান জন্মদান থেকে বিরত থাকুন।
– জন্মনিরোধক বড়ির প্যাকেটে ব্যবহারের নিয়মকানুন দেওয়া থাকে। তা সঠিকভাবে মেনে চলুন।
ডাঃ ফারহানা মোবিন
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।
এম.পি.এইচ, সিসিডি (বারডেম হাসপাতাল)
সি-কার্ড (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন)
কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট (কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন)