সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মানকে আটক করেছে পুলিশ

ই-বার্তা ডেস্ক  ।।   শিক্ষার্থীদের আলটিমেটামের ৬ ঘণ্টার মধ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার প্ররোচনায় সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মানকে আটক করেছে পুলিশ।

বি: সংগৃহীত।

শনিবার রাতে ঢাকা মহানগর লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল তাদের আটক করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশের লালবাগ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র। এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই এ দুজনকে নজরদারিতে রেখেছিল পুলিশ। ছাত্রদের আন্দোলন তীব্র হওয়ায় অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের আটক করা হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে শিক্ষক দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মানকে অভিযুক্ত করে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেছেন। শনিবার রাত ৮টায় কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় এ মামলা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন। তিনি বলেন, অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেছেন। শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীর দ্বারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকা। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে লিখিতভাবে অভিযোগও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উলটো তাকে ছাত্রত্ব হারানোর ভয়ভীতি দেখানো হয়।

অপরদিকে তার বিরুদ্ধে বিভাগের কয়েকজন সহপাঠী শিক্ষকদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। সেখানে সামাজিক মাধ্যমে তাদের হয়রানির অভিযোগ করা হয়। উভয় পক্ষের অভিযোগ ও পালটা অভিযোগ নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন অবন্তিকা। এরই মধ্যে মারা যান তার বাবা। এতে তিনি আরও ভেঙে পড়েন। অপরদিকে প্রক্টর অফিসে দেওয়া অভিযোগেরও কোনো নিষ্পত্তি হয়নি। উলটো তাকে এমন সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে, যার কারণে চরম হতাশ হয়ে পড়েন অবন্তিকা। বেছে নেন আত্মহননের পথ। পরিবার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী, শিক্ষক এবং পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা যায়  । 

শুক্রবার রাতে কুমিল্লার বাড়িতে একটি ফেসবুক পোস্টে দুজনকে দায়ী করে সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহনন করেন অবন্তিকা। এ দুজন হলেন জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম এবং সহপাঠী আম্মান। এর আগে দ্বীন ইসলামকে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অভিযুক্ত ছাত্রকে গ্রেফতারের নির্দেশনা দেন উপাচার্য। পাশাপাশি এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে অবন্তিকার আত্মহনন প্ররোচনায় জড়িতদের গ্রেফতারসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামও দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, ছাত্রদের দাবির মুখে আটক হয়েছেন অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর ও শিক্ষার্থী। অবন্তিকার আত্মহত্যার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। শুক্রবার রাত ৩টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তারা।

শনিবার সকালে বিক্ষোভ এবং বিকালে মানববন্ধন করে দায়ীদের শাস্তি দাবি করেন তারা। ঘটনাটি নির্মোহভাবে তদন্ত করে এর পেছনে যাদেরই দায় থাকুক, তাদের খুঁজে বের করারও দাবি জানান তারা। এজন্য ছয় দফা দাবি পেশ করেন তারা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবিগুলো মানা না হলে সোমবার বেলা ১১টায় উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দেন তারা। শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- হত্যার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা; আম্মানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা এবং দ্বীন ইসলামকেও অবিলম্বে গ্রেফতার ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা; জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এছাড়া আরও তিনটি দাবি জানিয়েছেন তারা। এর মধ্যে রয়েছে- অভিযুক্তদের বহিষ্কার করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করা। 

এদিকে শনিবার কুমিল্লা শাসনগাছা এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে বাবার পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। এর আগে অবন্তিকার লাশের গাড়ি দেখে জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন মা তাহমিনা শবনম। শুক্রবার রাতে তার মৃত্যুর পর শনিবার বেলা ১টার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে তার লাশ আনা হয় নিজ বাড়িতে।