চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আদ্যোপান্ত (১৯৯৮-২০১৩)


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২৯শে মে ২০১৭, সোমবার  | সন্ধ্যা ০৭:০৪ ক্রিকেট

দেখতে দেখতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বয়স প্রায় বিশ বছর হতে চলল। মর্যদার দিকে থেকে বিশ্বকাপের পরেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অবস্থান। এবার আমরা মর্যাদাকর এ টুর্নামেন্টের ইতিহাসে চোখ বুলাবো।

ক্রিকেটের উন্নয়নে তহবিল গঠনের লক্ষ্যে আয়োজিত এ টুর্নামেন্টের প্রাথমিক নাম ছিল মিনি বিশ্বকাপ’। ঢাকায় ১৯৯৮ সালে টুর্নামেন্টের প্রথম আসর অনুষ্ঠিত হয়। লন্ডনের ওভালে ১ জুন বাংলাদেশ ও স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াবে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসর। ইংল্যান্ডের মাটিতে ১-১৮ জুন তৃতীয়বার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মর্যাদার এ টুর্নামেন্ট। ২০০৬ সালের পর বাংলাদেশ প্রথমবার অংশ নিচ্ছে এ টুর্নামেন্টে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গত সাত আসরের চিত্র :

প্রথম আসর
১৯৯৮ সালে আয়োজক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এ টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। ৫০ ওভারের টুর্নামেন্টটির প্রথম দুই আসরের নাম ছিল আইসিসি নকআউট’।
প্রথম আসরের শিরোপা জয় করে দক্ষিণ আফ্রিকা। যা এ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ও শেষ আইসিসি ইভেন্টের শিরোপা জয়। হ্যান্সি ক্রোনিয়ের নেতৃত্বাধীন প্রোটিয়ারা সেমিফাইনালে বৃষ্টি আইনে শ্রীলংকাকে ৯২ রানে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে। এরপর জক ক্যালিসের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে উদ্বোধনী আসরের শিরোপা জয় করে দক্ষিণ আফ্রিকা। তিন ম্যাচে ১৬৪ রান ও ৮ উইকেট শিকার করে ম্যাচ ও টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার লাভ করে ক্যালিস।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:
টুর্নামেন্ট সেরা ইনিংস-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শচিন টেন্ডুলকারের ১৩ চার ও ৩টি ছক্কায় ১৪১ রানের ইনিংসটি ।

দ্বিতীয় আসর
২০০০ কেনিয়োতে এ আসরের আয়োজন করা হয়।
এক নাগারে দ্বিতীয়বার ভারতের প্রথম ম্যাচ ছিল অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর নেতৃত্বাধীন শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ভারতের হয়ে অভিষেক হওয়া যুবরাজ সিংয়ের ৮০ বলে ৮৪ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংসে ভর করে অপ্রত্যাশিতভাবে ২০ রানের জয় পায় টিম ইন্ডিয়া এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে।

সেমিফাইনালে নতুন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির ১৪১ রানের (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) সুবাদে ফাইনাল নিশ্চিত করে ভারত। অপরদিকে সেমিতে শেন ও’কনর ও রজার টুজের অসাধারণ নৈপুণ্যে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ড।

ফাইনালে সৌরভ গাঙ্গুলির ১১৭ রানের একটি ঝলমলে ইনিংসের পর ক্রিস কেয়ার্নসের অপরাজিত ১০২ রানের সুবাদে প্রথমবারের মত আইসিসির কোন ইভেন্টের শিরোপা জয় করে কিউইরা।

তৃতীয় আসর
২০০২ সালে শ্রীলংকাকে বেছে নেওয়া হয় আয়োজক দেশ হিসেবে।
গ্রুপ পর্বে দারুণ ফর্মে ছিল শ্রীলংকা দল। সেমফিাইনালে তারা অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর দ্বিতীয় আইসিসি টুর্নামেন্ট জয়ের হাতছানি ছিল উপমহাদেশের দলটির সামনে।

অন্যদিকে গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়ে ও ইংল্যান্ডকে হারানোর পর সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল দ্বিতীয়বার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ওঠে। ফাইনালে স্বাগতিক শ্রীলংকার মোকাবেলা করে ভারত।

কিন্তু ফাইনালে বিঘ্ন ঘটায় বৃষ্টি। নির্ধারিত দিনের পর রিজার্ভ দিনেও বৃষ্টির কারণে শেষ র্পন্ত ভারত-শ্রীলংকাকে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে আইসিসি। ভারতের বীরেন্দার শেবাগ টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ২১ রান করেন। পক্ষান্তরে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ১০ উইকেট শিকার করেন শ্রীলংকার মুত্তিয়া মুরলিধরন।

চতুর্থ আসর
২০০৪ সালে ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ডকে এ আসর আয়োজন করা হয়। ১২টি দলের অংশ গ্রহণে ১৫ ম্যাচের আসরটি চলে ১৫ দিন। ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ মুখোমুখি হয়।

মার্কাস ট্রেসকোথিকের ১০৪ এবং এ্যাশলে গাইলসের ৩১ রানের সুবাদে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২১৭। জবাবে খেলতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে এবং এক পর্যায়ে ১৪৭ রান তুলতেই ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে। এমন অবস্থায় দলের ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান কোর্টনি ব্রাউন ও ইয়ান ব্র্যাডশ। তাদের অপরাজিত ৭১ রানের জুটিতে সাত বল হাতে রেখেই মাইকলে ভনের নেতৃত্বাধীন ইংলিশদের হারিয়ে প্রথমবার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয় করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

পঞ্চম আসর
বর্তমানে ক্রিকেটের পরাশক্তি ভারতে ২০০৬ সালে আয়োজন করা হয় এ টুর্নামেন্ট।

অজিদের ভরপুর ট্রফি কেবিনেটে না থাকা একমাত্র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিরর পুরস্কার জয় করে এ আসরে। গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করার পর রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন দলটি সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে। ফাইনালে শিরোপাধারী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি লাভ করে অস্ট্রেলিয়া। বল হাতে ২ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ৫৭ রান করে ফাইনালে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান শেন ওয়াটসন।

টুর্নামেন্টে বির্তক
টুর্নামেন্ট ছিল বিতর্কে ঢাকা। নিষিদ্ধ ঘোষিত শক্তি বর্ধক মাদক ব্যবহারের কারণে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে পাকিস্তানী ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার ও মোহাম্মদ আসিফকে নিষিদ্ধ করা হয়।

ফাইনাল শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিজয় মঞ্চে তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড প্রধান শারদ পাওয়ারকে ধাক্কা মারার অভিযোগ ওঠে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে। কেউ কেউ চাইছিলেন চ্যাম্পিয়ন দলটির বিপক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হোক। তবে পাওয়ারের কাছে অসি অধিনায়ক পন্টিং ক্ষমা চাওয়ায় বিষয়টি সেখানেই শেষ হয়ে যায়।

ষষ্ঠ আসর
২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বেছে নেওয়া হয় এ আসরের আয়োজক দেশ হিসেবে।

এটা ছিল নিউজিল্যান্ডের শিরোপা জয়ের আরেকটা সুযোগ। কিন্তু সেটা হতে দেননি অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসন। প্রায় বছর জুড়েই ব্যাটে খড়া থাকলেও ফাইনালে সেঞ্চুরি করে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা অক্ষুন্ন রাখতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন ওয়াটসন। রিকি পন্টিংয়ের অসাধারণ নেতৃত্ব ও মিচেল জনসন, পিটার সিডল এবং টিম পাইন অস্ট্রেলিয়া দলকে চ্যাম্পিয়নের তকমা জুড়ে দেয়।
সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হিসেবে (৫ ম্যাচে ২৮৮) টুর্নামেন্ট শেষ করেন অসি অধিনায়ক। সর্বোচ্চ উইকেট (১১) শিকারী হন দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েন পারনেল।

সপ্তম আসর
২০১৩ আবার ইংল্যান্ডে আয়োজন করা হয় এ মিনি বিশ্বকাপ।
অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির দুর্দান্ত ফর্মেও সুবাদে ভারতীয় দল দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয় করে।

ইংল্যান্ডের কন্ডিশন অধিকতর ব্যাটসম্যান সহায়ক ছিল। তথাপি ভুবনেশ্বর কুমার ও রবীন্দ্র জাদেজা ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন। শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মার যুগল পারফরমেন্সে পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতেই জয়ী ভারত।

টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বড় মুহূর্তটি আসে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে বৃষ্টির কারণে ২০ ওভারে নেমে আসা। ম্যাচের শেষ দিকে ধোনি যখন ১৮তম ওভারে ইশান্ত শর্মার হাতে বল তুলে দেন। মুলত ধোনি একটি জুয়া খেলেছেন ইশান্তকে নিয়ে। কেননা এর আগে ওভার প্রতি বেশি রান খরচ করা এ পেসার যখন বল হাতে নেন তখন ক্রিজে ছিলেন ইয়োইন মরগান ও রবি বোপারা। কিন্তু তিনি দুই উইকেট শিকার করলে ম্যাচ ভারতের দিকে হেলে পড়ে। জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন বাকি কাজটা করে দলকে শিরোপা এনে দেন।

সর্বশেষ সংবাদ

ক্রিকেট এর আরও সংবাদ