কেন শান্তিতে নোবেল পাওয়ার যোগ্য শেখ হাসিনা


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২২শে সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার  | বিকাল ০৩:৩০ রাজনীতি

ই-বার্তা ।। আশেক আহমেদ ।। নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রবর্তনের পেছনের উদ্দেশ্য ছিল, বিশ্বজুড়ে হানাহানি আর সংঘাত বন্ধে সত্যিকার অর্থে যাঁরা অবদান রেখেছেন বা রাখছেন, তাদের পুরস্কৃত করার মধ্য দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা। ফলে অশান্তি সৃষ্টির পেছনে সামষ্টিক যে কাঠামো সব সময় কাজে লাগানো হয়, সেই সামরিক বাহিনীর বিলুপ্তিতে সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণের কাজও পুরস্কৃত করার বিষয়টি আলফ্রেড নোবেল তাঁর রেখে যাওয়া দলিলে উল্লেখ করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০০৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক কূটনীতি শক্তিশালী করা এবং মানুষের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ এবং এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সংশ্লিষ্ট করতে ওবামার ভূমিকাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে নোবেল কমিটি।
নোবেল পুরস্কার যে ছয়টি বিষয়ে দেয়া হয়, সেখানে পরিবেশ নেই। তবে জাতিসংঘের পরিবেশ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ আখ্যা পেয়ে থাকে পরিবেশের নোবেল হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছর পরিবেশ বিষয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ সেই পুরস্কার পেয়েছেন।

২০১৪ সালে নারী ও শিশু শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘শান্তিবৃক্ষ পদক’ পুরস্কারে ভূষিত করে। খাদ্য উৎপাদন ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি প্রধানমন্ত্রীকে এই সম্মাননা সার্টিফিকেট প্রদান করে।

২০১১সালের ২৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন ব্রেক্রো এমপি প্রধানমন্ত্রীকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দূরদর্শী নেতৃত্ব, সুশাসন, মানবাধিকার রক্ষা, আঞ্চলিক শান্তি ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে অনবদ্য অবদানের জন্য গ্লোবাল ডাইভারসিটি এ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন।

২০১০ সালে ২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য এসটি. পিটার্সবার্গ ইউনিভার্সিটি প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করে। ১২ জানুয়ারি বিশ্বখ্যাত ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক-২০০৯’-এ ভূষিত হন প্রধানমন্ত্রী।

২০০৫ সালের জুন মাসে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তির পক্ষে অবদান রাখার জন্য শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া।

২০০০ সালে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকন ওমেনস কলেজ ‘পার্ল এস বাক পদক’ প্রদান করে। একই বছর ৪ ফেব্রুয়ারি ব্রাসেলসের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় ডক্টর অনারিয়াস কসা এবং ৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ‘ইউনিভার্সিটি অব বার্ডিগ্রেপোট’ বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নে অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে ‘ডক্টরর্স অব হিউম্যান লেটার্স’ প্রদান করে।

১৯৯৮ সালে নরওয়ের রাজধানী অসলোয় মহাত্মা গান্ধী ফাউন্ডেশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এম কে গান্ধী ’ পুরস্কারে ভূষিত করে। একই বছরের এপ্রিলে নিখিল ভারত শান্তি পরিষদ শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে ‘মাদার তেরেসা পদক’ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদান রাখার জন্য ইউনেস্কো শেখ হাসিনাকে ‘ফেলিঙ্ হুফে বইনি’’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।

একই বছর ২৮ জানুয়ারী শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতী এক আড়ম্বরপূর্ণ বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মানমূচক ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে।

এ ছাড়াও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি শান্তি, গণতন্ত্র ও উপমাহদেশের দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপনে অনন্য ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে ‘নেতাজী মেমোরিয়াল পদক ১৯৯৭’ প্রদান করে।

বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বড় সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। বাংলাদেশে নতুন করে বর্তমানে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সাহায্য নেই সহযোগিতা নেই- এক একখানা বড় বড় স্টেটমেন্ট দেবে, সেটা আমরা চাই না। ১৬ কেটি মানুষকে আমরা খাবার দিই। তার সাথে এরকম আরও দুই, চার, পাঁচ লাখ লোককে খাবার দেওয়ার মতো শক্তি বাংলাদেশের রয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “রোহিঙ্গারা সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রয়ের আশায় ছুটে আসছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি তাদের সহযোগিতা করতে।”

তিনি বলেন, “সব থেকে অমানবিক অবস্থা হচ্ছে; এই নারী ও শিশুরা যে কষ্ট পাচ্ছে। দুধের শিশুরা মারা যাচ্ছে, নারীরা মারা যাচ্ছে। এটা শুনতেই কষ্ট লাগে। এটা সহ্য করা যায়


না।”

এর আগ গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তুর্কি ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোগান। সাক্ষাৎকালে তিনি মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এদেশের জনগণের কাছেও কৃতজ্ঞ বলে জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশ যে মানবিক আচরণ করেছে এর প্রশংসা করে ফার্স্ট লেডি বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্ক মিলে এই সমস্যার সমাধান করবে। এছাড়া দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে তারা পরস্পরে আলোচনা করেন। রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখতে ছুটে আসায় তুর্কি ফার্স্ট লেডির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিকতা এবং শান্তির অনন্য নজির স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করার প্রস্তাব করেছেন বিশ্বের খ্যাতিমান চিন্তাবিদ এবং শিক্ষাবিদরা।

অক্সফোর্ডের দুজন শিক্ষাবিদ ড. লিজ কারমাইকেল এবং ড. অ্যান্ড্রু গোসলার মনে করেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন, তা সারা বিশ্বের জন্য এক অনুকরণীয় বার্তা। তাদের মতে, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো যখন শরণার্থী নিয়ে নানা সমস্যায় জর্জরিত, তখন বাংলাদেশ দেখাল কীভাবে এই সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। তারা দুজনই শেখ হাসিনাকে ‘মানবিক বিশ্বের প্রধান নেতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস স্টাডিজ বিভাগের তিন অধ্যাপক যৌথভাবে শেখ হাসিনাকে বিশ্ব শান্তি দূত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ড. অলডো সিভিকো, ড. দীপালী মুখোপাধ্যায় এবং ড. জুডিথ ম্যাটলফ যৌথভাবে বলেছেন, ‘নোবেল শান্তিজয়ী অংসান সু চি আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যক্রম পাশাপাশি মূল্যায়ন করলেই বোঝা যায় বিশ্ব শান্তি নেতা কে।’

তাদের মতে, ‘সুচি মানবতার চরম সীমা লঙ্ঘনকারী বার্মার সামরিক জান্তাদের রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো পৈশাচিকতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতি এবং নিরাপত্তার চরম ঝুঁকি নিয়েও তাদের আশ্রয় দিচ্ছেন।’ তারা মনে করেন, ‘শেখ হাসিনা শান্তি নতুন বার্তা দিয়েছেন গোটা বিশ্বকে।’

হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হাভার্ড ডিভাইনিটি স্কুলের ডিন ডেভিড এন হেম্পটন মনে করেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শান্তির নতুন মাত্রা দিয়েছে। কেবল শান্তির স্বার্থে দেশটি চরম অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছে।’ তার মতে, ‘এতোগুলো শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য মানবিক হৃদয় লাগে। জার্মানি যা করতে পারেনি, শেখ হাসিনা তা করে দেখিয়েছেন।’

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইন ক্যানবেরার অধীনে পরিচালিত ‘পিস অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট‘। এই ইন্সটিটিউটের প্রধান ড. হেনরিক উরডাল মনে করেন, ‘বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকেই বিশ্ব শান্তির নেতার মর্যাদা দেয়া উচিত। সত্যিকার অর্থেই যদি শান্তিতে অবদানের জন্য কোনো পুরস্কার থাকে তাহলে সে পুরস্কার পাবার একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি হলেন শেখ হাসিনা।’

সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংসদীয় কার্য প্রণালী-বিধির ১৪৭ (১) বিধি অনুযায়ী সাধারণ প্রস্তাব বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর অব্যাহত নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ, তাদেরকে নিজ বাসভূমে থেকে বিতাড়ন করে বাংলাদেশে পুশইন করা থেকে বিরত থাকা এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিকত্বের অধিকার দিয়ে নিরাপদে বসবাসের ব্যবস্থা গ্রহণে মিয়ানমার সরকারের উপর জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের জোরালো কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানানো হউক।’

এই প্রস্তাবে উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, সারাবিশ্বের সঙ্গে আমিও অবাক বিষ্ময়ে দুই নারীর পরস্পর বিরোধী আচারণ দেখছি। একজনকে বিশ্ব খুব আদর করে নোবেল পুরস্কার দিয়েছিলো। তাও আবার শান্তিতে, গণতন্ত্রের জন্য। উনি (সুচি)এই দুইটা বিষয়ের যে কি, বারোটা বাজিয়েছেন, তা বিশ্ব দেখছে। একই ভাবে দেখছি আরেকজন নারী তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বুক পেতে দিয়েছেন প্রায় ৮ লাখ লোকের জন্য। এখানেই পরিস্কার, কে যোগ্য।

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, শান্তির জন্য মানবতার, মানবতার নেত্রী ব্ঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই নোবেলের যোগ্য। তিনিই আগামিতে নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন।

মানবতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য বলে দাবি করেছেন সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। একই সঙ্গে আগামিতে প্রধানমন্ত্রীকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ারও দাবি জানান তারা।

সর্বশেষ সংবাদ

রাজনীতি এর আরও সংবাদ