কোনটা ধর্ষণ...


ই-বার্তা প্রকাশিত: ১২ই অক্টোবর ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার  | বিকাল ০৩:২৬ প্রতিক্রিয়া

আশিকুর রহমান সরকার ।। সময় দুপুর ১২টা, স্বভাবতই একটু দেড়িতে ঘুম থেকে উঠলাম তারপর একটু অলস সময় দিচ্ছিলাম নিজের বিছানাটাকে আর পত্রিকাগুলো ঘাটাঘাটি করছিলাম। চোখ আটকে গেলো একটি সংবাদে। শিরোনাম “অপ্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রীর সাথে যৌন সম্পর্কও ধর্ষণ: ভারতের আদালত”। শিরোনাম পড়ে একটু ভালই লেগেছিল তারপর পুরো রিপোর্ট টাই পড়লাম। বলতে গেলে সংবাদটি হচ্ছে বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে। ভারতে নতুন একটি আইন পাশ হয়েছে যেখানে বলা আছে, বিবাহিত স্ত্রীর বয়সও যদি আঠারো বছরের কম হয়, তার সাথে যৌন সম্পর্ক করলে, সেটাও ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে।

তখনই শুন্য মাথায় কিছু ব্যাপার আসতে থাকলো। ধর্ষণকে কেনো বয়সের সাথে মাপা হবে, কেনোই বা ধর্ষণ হবে, কেনো ১৮, ১৫, ২৫ এমন সংখ্যায় একটি মেয়ের যৌন চাহিদাকে বন্দী করে দেয়া হবে!

প্রথমত আমি একজন ছেলে, নিজেকে দিয়ে ছেলেদের যৌন অভিজ্ঞতাটা আগে বলি, কারন আমি মনে করি বেশিরভাগ ছেলেরই যৌন অভিজ্ঞতা আমার মতই। ছেলেরা খুব কম বয়সেই যৌনতার ব্যাপারে অনেক কিছুই জেনে যায় কারন আমাদের সমাজে ছেলেদের জায়গাটা হয়তো সমুদ্রপৃষ্ঠের একটু উপরে। তারা খুব কম বয়সেই যৌন চিন্তা ভাবনা, যৌন আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে নিজের মধ্যে। হয়তো মাঝে মাঝে এমন কোন মানুষকে নিয়ে যে তার খুব আপনজন। যা সকল সমাজেই নিষিদ্ধ। এমন ভাবনা থেকেই ছেলেদের যৌন জীবনের শুরুটা হয়। আর বয়সটা তখন খুব বেশি থাকে না হয়তো ৬/৭ বছরেই। বয়সটা ভাবলে খুব কম মনে হয় জানি, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছে এবং আমার চেনাজানা অনেক ছেলের কাছ থেকে এমনই কিছু আঁচ পেয়েছি।

এখন আসি মেয়েদের যৌন জীবন নিয়ে। ঠিক সব মেয়েদের না, বাংলাদেশ বা পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোর মেয়েদের নিয়ে। খুব কম জানি তাদের যৌন জীবনের ব্যাপারে, কারন সমাজে তাদের যৌন জীবন বা অভিজ্ঞতা তাদের মধ্যেই থাকে। অনেক গভীরে অনেক গোপনে। সমাজের চাহিদা যে বিয়ের পরেই উদ্বোধন হোক তার যৌন জীবন। স্বামীর চাহিদাটাও কিন্তু সমাজের বিরুদ্ধে না। এসব চাহিদা ছোটবেলা থেকে দেখতে দেখতে তাদের চাহিদাটা কখনোই জানা হয় নি।

এখন ফিরে আসি ওই সংবাদটাতে, ধর্ষণ। কাকে বলে ধর্ষণ? এক কথায় ধর্ষণ হচ্ছে কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে যৌন সম্পর্ক করা বা তার চেষ্টা করা। কিন্তু ভারতের নতুন আইনে বলা আছে যে ১৮ এর কম বয়সী মেয়ের সাথে যৌন সম্পর্কই ধর্ষণ। কিন্তু কেনো? যেহেতু একটা ছেলে ১০ বছরের মধ্যেই যৌন আকাঙ্ক্ষায় ভুগে, সে ক্ষেত্রে একটি মেয়ের বেলায় কেনো তা হতে পারবে না। কেনো তার যৌন জীবন দৈহিক বয়সে আর সমাজের চাহিদায় বন্দী থাকবে!

এমনও তো হতে পারে একটি মেয়েও ছেলেদের মত ওই বয়সেই যৌন চিন্তা ভাবনায় ভুগে। হতেই তো পারে তারও কোন কাছের মানুষকে নিয়ে যৌন চিন্তা আসে মাথায়। কারন নারী পুরুষের শরীরী ভিন্নতাটা আছে আমরা জানি, কিন্তু বিবেক বুদ্ধিতে তো থাকার কথা না। তবে কেনো যৌনতার ক্ষেত্রে থাকবে!

আমার মতে যদি মেয়ে নিজে বুঝে সে নিজেই তার যৌন জীবনের অভিজ্ঞতা নিতে চায় সেটাকে কেনো ধর্ষণ বলা হবে! এখন অনেকেই বলতে পারেন যে এভাবে ধর্ষণের প্রবনতা বাড়বে বা মেয়েদের শারীরিক সমস্যা হবে। সেক্ষেত্রে আমার উত্তর হবে এখনও কি আমাদের আইন, আমাদের সংস্কৃতি কমাতে পেরেছে ধর্ষণ! আমরা জানি মানবের স্বভাবই হচ্ছে নিষিদ্ধ কাজ করা। আর আমাদের সমাজে যৌনতা নিষিদ্ধ।

এখন যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে সমাজের কথা না মেনে আমি কি চাই? আমার উত্তর হবে ছোটবেলা থেকে গ্রুমিং। ছেলেকে ছেলে, মেয়েকে মেয়ে ভাবা বন্ধ করা দরকার। তাদের যৌনতা সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া দরকার। আর আমার বিশ্বাস যৌনতা কোন জোরে খাটানো ব্যাপার না, এটা দুইজন মানুষের সম্মতিতে একটা দৈহিক মিলন যেখানে একজন অপরজনকে ভালোবাসার সাথে সাথে শ্রদ্ধার সাথে মিলিত হবে। সেখানে দুইজনের সম্মতিটাই আসল, বয়সটা নয়। ধর্ষণ তাকেই বলবো যখন একটা মেয়ে “না” শব্দটি উচ্চারণ করার পরেও তাঁর সাথে জোর করে শারিরিক সম্পর্ক করা হবে। সেই মেয়ের বয়স হোক দশ বছর, হোক বারো বছর, হোক চল্লিশ বছর।

সর্বশেষ সংবাদ

প্রতিক্রিয়া এর আরও সংবাদ