যেভাবে পরকীয়ায় বলি হলেন বাবা মেয়ে


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৫ই নভেম্বর ২০১৭, রবিবার  | দুপুর ০১:৪৩ অপরাধ

আরজিনা-জামিল দম্পতি তাদের ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাড্ডায় একটি বাড়িতে থাকতেন। সেই বাড়িতে শাহীনও তার স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। নিচতলায় থাকতেন আরজিনারা আর তৃতীয় তলায় থাকতেন শাহীন-মাসুমা দম্পতি।ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ রোববার এস সংবাদ সম্মেলনে আরজিনা-শাহীনের গোপন অভিসারের কথা বিস্তারিত জানান।

তিনি জানান, আরজিনার স্বামী জামিল ড্রাইভার ছিলেন। তিনি সারাদিন বাইরে থাকতেন। সেই সুযোগে আরজিনার সঙ্গে শাহীনের নানা কারণে ভাব জমে। শাহীনের বিভিন্ন প্রশংসায় আরজিনা তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। কিছুদিন পর জামিল ও আরজিনা দম্পতি ওই বাসা ছেড়ে ৩০৬ নম্বর ময়নারবাগের বাসার ৩ তলার ছাদে ৭ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নেন। নতুন বাড়িতে উঠেও শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন আরজিনা। তার সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা বলেন।
এক পর্যায়ে শাহীনকে কাছে পেতে নতুন কৌশল অবলম্বন করেন আরজিনা। সংসারের খরচ কমানোর জন্য তিনি স্বামী জামিলকে পরামর্শ দেন শাহীনের পরিবারকে সাবলেট দেয়ার। শাহীন পূর্বপরিচিত হওয়ায় তার পরিবারকে ৩ হাজার টাকায় সাবলেট দেন জামিল।

নতুন বাড়িতে উঠে আরজিনা এবং শাহীনের সম্পর্ক আরও গভীর হতে থাকে। এক পর্যায়ে আরজিনা জামিলকে তালাক দিয়ে শাহীনের সঙ্গে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে শাহীন তাকে তালাক না দেয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে দুইজন মিলে জামিলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

ঘটনার দিন বুধবার রাতে একই বিছানায় শুয়ে ছিলেন জামিল, আরজিনা, মেয়ে নুসরাত ও তার ছোট ভাই। আরজিনা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘরের গেট খুলে ঘুমান। তখন শাহীন বাড়ির নিচ থেকে একটি কাঠের টুকরা এনে ঘরে ঢুকে জামিলের মাথায় আঘাত করেন। প্রথম আঘাতের পর জামিল উঠে যান এবং জিজ্ঞেস করেন কেন তাকে আঘাত করা হচ্ছে। এরপর শাহীন কোনো কথা না বলে আরও কয়েকটি আঘাত করে তাকে হত্যা করেন। এসময় ঘুম থেকে জেগে উঠে মেয়ে নুসরাত। সে শাহীনের কাছে বাবাকে কেন হত্যা করা হল জানতে চায় এবং চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে থাকে।

তখন নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শাহীন। তবে প্রথমবার এতে আরজিনা সম্মতি দেননি। পরবর্তীতে বিপদে পড়ার আশঙ্কায় মেয়েকে হত্যার সম্মতি দেন মা আরজিনা। তখন নুসরাতকে ঘরের বিছানায় ফেলে গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করেন শাহীন। তবে নুসরাত চিৎকার করায় তার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়।

দুই হত্যাকাণ্ডের পর ছাদে শাহীন ও আরজিনা গল্প সাজাতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা সিদ্ধান্ত নেন যে কেউ জিজ্ঞেস করলে ডাকাতরা জামিল ও তার মেয়েকে হত্যা করেছে বলে জানাবেন। এছাড়াও ডাকাতরা যাওয়ার সময় তাকে ধর্ষণ করেছে বলে দাবি করবেন আরজিনা। এই নাটক বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য সারারাত ছাদের সিঁড়ির সামনে মুখ গোমড়া করে বসেছিলেন আরজিনা। পরদিন সকালেও পুলিশ গিয়ে তাকে সিঁড়ির সামনে বসে থাকতে দেখে। আর সেই রাতেই স্ত্রী মাসুমাকে নিয়ে খুলনায় পালিয়ে যান শাহীন।

ডিসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আশপাশের অনেকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা শিশুও কিছু তথ্য দিয়েছে। সবমিলে এ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই দুইজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ সংবাদ

অপরাধ এর আরও সংবাদ