উপলব্ধি -পুনম মায়মুনী


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২০শে নভেম্বর ২০১৭, সোমবার  | বিকাল ০৫:০২ গদ্য

অণুগল্প।। আজ পুতুলের বিয়ে। চারিদিকে সবাই ব্যস্ত, ছুটাছুটি।
কেউ যাচ্ছে কমিউনিটি সেন্টার সাজাতে, কেউ পার্লারে বৌ সাজাতে আবার কেউ বা হাই ভলিয়মে মিউজিক এর সাথে কোমর দোলাচ্ছে। আর বাবা শাহেদ?
এক বুক কষ্ট নিয়ে পিছনের বারান্দায় নিশ্চুপ, নিথর হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, তার একমাত্র আদরের মেয়ে পুতুলের কথা। ডল পুতুলের মতোই ছোট্ট ফুটফুটে হয়েছিল বলে, ওর নাম রাখা হয়েছিল পুতুল। সেই ছোট্ট পুতুল সোনা মেয়েটি কখন যে এতো বড় হয়ে বৌ সেজে, আজ চলে যাচ্ছে অন্যের ঘরে। তারপর থেকে তাঁর বাস হবে সেই শশুড়বাড়িতে, সে ঘরই হবে আপন ঘর। যার জন্ম, লালনপালন, স্নেহ, মায়ামমতায় বেড়ে উঠলো আমার ঘরে। সে কিনা নিমেষেই সবকিছু মুছে দিয়ে, হয়ে যাবে অন্যের।
শাহেদের মনটা বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠতে থাকে, একটা কষ্টের দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। নিলাভ আকাশে উড়ন্ত পাখীদের উপর দৃষ্টি পরতেই, মনটা আরো হু হু করে কেঁদে উঠে। তার পুতুলও যে, এমনই স্বাধীনভাবে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়িয়েছে বাবার বাড়িতে। মেয়ের ইচ্ছা অনিচ্ছার মূল্যই ছিল সবার থেকে আগে। কিন্তু আজ মেয়ে তাঁর সবকিছু বিসর্জন দিয়ে চলতে হবে স্বামী, শশুড়বাড়ীর সকলের মন যুগিয়ে। যেমনটি দেখেছে সে তাঁর মা, বোন ও স্ত্রী রিম্পাকে। এটাই যে নিয়ম।

কিন্তু নিজের মেয়ের বেলায় এই নিয়মটা একেবারেই যেনো মেনে নিতে পারছেনা বাবা শাহেদ, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বুকের পাজড়গুলোয়। পরক্ষণেই রিম্পার মুখটা ভেসে উঠে। রিম্পাও একদিন নিজ পরিবারের সবাইকে ছেড়ে এসেছিল তাঁর এই সংসারে। সে নিজেই দেখেছে রিম্পা ওর নিজের অনেক কিছুই ত্যাগ করেছে শুধুমাত্র এ


পরিবারের মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটাতে, সকলের মন যুগিয়ে চলতে। তবুও কি পেয়েছিল রিম্পা, ওর এই ত্যাগের মূল্যায়ন? সে নিজেও তো স্ত্রীর অনেক ইচ্ছা, আবদার উপেক্ষা করে গেছে। কখনো অভিমান করে রিম্পা না খেয়ে রাতের পর রাত কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছে। কোনদিন হয়তো সোহাগ করে, অভিমান ভাঙ্গিয়ে বুকে টেনে নিয়েছে। আবার কখনোবা আমলই দেয়নি স্ত্রীর মান অভিমানকে। কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পরেছে রিম্পা। সংসার জীবনে স্বামী হিসেবে সেও বা কতোটুকু গুরুত্ব দিয়েছে রিম্পার চাওয়া পাওয়াকে?

তুসের আগুনের মতো জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠে শাহেদের কষ্টটা। নিজেকে বড্ড বেশী অপরাধী লাগছে আজ। আসামীর মতো যেন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে, জবাবদিহি করছে নিজের বিবেকের সাথে। এমন সময় ব্যতিব্যস্ত হয়ে রিম্পা এসে দাঁড়ায়
-“ও, তুমি এখানে? আর আমি সারা বাড়ি তোমায় খুঁজে খুঁজে বেড়াচ্ছি”। শাহেদের মুখোমুখি এসে দাঁড়াতেই রিম্পার চোখে পরে, বুকের পাঞ্জাবি পুরোটাই ভিজে গেছে শাহেদের নোনা জলে।
-“একি, শাহেদ কাঁদছ? তুমি এভাবে ভেঙ্গে পরলে, মেয়েটা যে খুব কষ্ট পাবে গো"।
কোন উত্তর না দিয়ে রিম্পার হাত দুটো চেপে ধরে, বুকের কাছে টেনে নেয় শাহেদ।
-“এতোদিন আমি তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছি রিম্পা। তোমার অনেক আশা, আকাঙ্ক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়েছি এই আমি। পারলে আমায় তুমি ক্ষমা করো প্লিজ”।
একটু অবাক হয়ে,
-“তোমার কি হয়েছে বলতো, আজ এতো বছর পর, এমন করে কেন বলছ শাহেদ”?
কান্নাজরিত কন্ঠে শাহেদ রিম্পার হাত দুটো আরো শক্ত করে ধরে।
-“হ্যাঁ রিম্পা, এতোটা বছর পর আজ মেয়ের বিদায় লগ্নে এই প্রথম উপলব্ধি করলাম, কতোটা অবহেলা করেছি আমি, তোমায়”।

সর্বশেষ সংবাদ

গদ্য এর আরও সংবাদ