স্মৃতির মণিকোঠায় শের-এ-বাংলা


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২৭শে এপ্রিল ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার  | বিকাল ০৩:৪৩ বিশেষ প্রতিবেদন

ই-বার্তা ডেস্ক।। বাংলার আকাশে যতগুলো নক্ষত্র দ্যুতি ছড়িয়েছে, শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হক তাঁদের মধ্য অন্যতম। ১৮৭৩ সালে ২৬ অক্টোবর বরিশাল জেলার রাজাপুর থানার সাতুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ এবং সাইদুন্নেসা খাতুনের একমাত্র পুত্র ছিলেন আবুল কাশেম ফজলুল হক।

১৮৮৯ সালে ফজলুল হক প্রবেশিকা পরীক্ষায় তৎকালীন ঢাকা বিভাগে মুসলমানদের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেন। এরপর উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্যে কলকাতায় যান। ১৮৯৩ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে বি.এ. পাশ করেন। একই ফল করেন এম.এ. তেও।

১৮৯৭ সালে রিপন কলেজ থেকে বি.এল. পাশ করে স্যার আশুতোষ মুখার্জির শিক্ষানবিশ হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে যোগদান করেন এ. কে. ফজলুক হক। পিতার মৃত্যুর পর ১৯০১ সালে তিনি বরিশালে ফিরে আসেন এবং বরিশাল আদালতে যোগদান করেন। ১৯০৬ সালে আইন ব্যবসা ছেড়ে সরকারি চাকরি গ্রহণ করেন তিনি। পূর্ব-বাংলার গভর্ণর ব্যামফিল্ড ফুলার তাঁকে ডেকে সম্মানের সাথে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেন। সরকারি চাকুরিতে কিছুদিন ঢাকা ও ময়মনসিংহে কাজ করার পর তাঁকে জামালপুর মহকুমার এস.ডি.ও হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। সেসময় বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে জামালপুরে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা চলছিল। ফজলুল হকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সেখানে দাঙ্গা বন্ধ হয়।

বৃটিশ আমলে ফজলুল হকের রাজনীতি এক কথায় শেষ করার মতন নয়। তিনি একাধারে বঙ্গীয় আইন পরিষদ, নিখিল ভারত মুসলিম লীগ, নিখিল ভারত কংগ্রেস, খেলাফত আন্দোলন এবং কৃষক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলীম লীগের অধিবেশনে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের উপস্থাপক ছিলেন তিনি।
পাকিস্তান গঠিত হবার পর থেকে হক সাহেব ঢাকা হাইকোর্টে পুনরায় আইন ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সমর্থন দেন।
১৯৫৩ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের সময় এ. কে. ফজলুক হকের বাস ভবনে কৃষক-প্রজা পার্টির কর্মীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে দলের নাম থেকে প্রজা শব্দটি বাদ দিয়ে ‘কৃষক শ্রমিক পার্টি’ গঠন করেন এবং এই পার্টির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি নিজেই।
১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর এ. কে. ফজলুক হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। ১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শের-এ-বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক।
শিল্প সাহিত্যের সাথেও যুক্ত ছিলেন বাংলার এই বাঘ। বরিশালে কিশোরদের জন্য এ সময় তিনি নিজের সম্পাদনায় “বালক” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এর কিছুদিন পর তিনি “ভারত সুহৃদ” নামে যুগ্ম সম্পাদনায় আরো একটি সাপ্তাহিক প্রত্রিকা প্রকাশ করেন।

১৯৬২ সালের আজকের দিনে (২৭ এপ্রিল) পৃথিবী ছেড়ে চলে যান এই অসীম সাহসী মানুষটি। মৃত্যুর ৫৫ বছর পর আজও বাংলার মানুষ শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে মানুষের প্রতি তাঁর ভালবাসা ও বাংলার প্রতি তাঁর অবদানের জন্য ।

সর্বশেষ সংবাদ

বিশেষ প্রতিবেদন এর আরও সংবাদ