মৃত্যুর আগে মানুষের যে নির্দয়তার কথা বলে গেলেন রোজিনা

ই-বার্তা ।।  ‘দুবার আমার ওপর দিয়ে চাকা চলে গেছে। আমি শুধু বলছিলাম- আমাকে একটু হসপিটালে নিয়ে যান। এর পর আর কিছু জানি না। অনেক মানুষকে বলছি- আমাকে একটু হসপিটালে নিয়ে যেতে। অনেক মানুষকে বলছি। সার্জেন্টও ছিল। কিন্তু ধরে নাই।

মৃত্যুর আগে এভাবেই মানুষের নির্দয়-নিষ্ঠুর চরিত্রের কথা বলে গেলেন রাজধানীর বনানীতে বাসের চাপায় পা হারিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো রোজিনা আক্তার।

গত ২০ এপ্রিল রাতে বনানীতে রাস্তা পার হওয়ার সময় বিআরটিসির বাসের চাপায় তিনি পা হারান।

দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রোজিনা জানান, রাস্তা পার হওয়ার সময় প্রথমে একটি গাড়ির ধাক্কায় তিনি পড়ে যান। ওই সময় কেউ তাকে উদ্ধার করেনি। ফলে রাস্তায় পড়ে থাকাবস্থায় তার ওপর দিয়ে বিআরটিসির একটি দোতলা বাস চলে যায়।

রোজিনা দাবি করেছিলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশসহ অন্য যেসব লোকজন ছিল, তারা যদি তাকে উদ্ধার করতেন এবং বাসটি থামাতেন তা হলে তার এই পরিণতি হতো না।

দুর্ঘটনার পর প্রথমে পাঁচ দিন পঙ্গু হাসপাতালে ও পরে চার দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন রোজিনা।

৯ দিন পর রোববার মৃত্যুর কাছে হার মানেন রোজিনা। সকাল ৭টা ২০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানার মেয়ে রোজিনা। তার বাবা কৃষক রুসুল মিয়া ও রাবেয়া খাতুন। ছয় বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রোজিনা দ্বিতীয়।

পরিবারের হাল ধরতে বাবার পাশাপাশি রোজিনা ও তার বড় বোন কাজ করতেন।

রোজিনা মাত্র ১১ বছর বয়সে ঢাকায় চলে আসেন। এর পর থেকে তিনি নিকেতনের ১২ নম্বর সড়কে বেসরকারি টেলিভিশন জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন।

২০ এপ্রিল রাত ৯টায় এক বান্ধবীর বাসা থেকে ফেরছিলেন রোজিনা। বনানীর সৈনিক ক্লাব থেকে মহাখালীর মাঝামাঝি স্থানে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন। বিআরটিসির একটি দোতলা বাস তার পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে তার ডান পা গুরুতর জখম হয়।

পরে তাকে উদ্ধার করে পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে দুই দফা অস্ত্রোপচার করে তার ডান পা উরুর গোড়া থেকে ফেলে দেয়া হয়।

পরে অবস্থার অবনতি হতে থাকায় গত ২৫ এপ্রিল রোজিনাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করে হাইডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রাখা হয়।

পরে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল তার মৃত্যু হয়।

রোজিনার মৃত্যুর জন্য অভিযুক্ত বিআরটিসির বাসচালক শফিকুল ইসলাম মুন্নাকে এরই মধ্যে আটক করেছে পুলিশ। একদিনের রিমান্ড শেষে তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন। সূত্র: যুগান্তর