২০১৮ সালে দূর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৭৭৯৬ জনের

ই-বার্তা ডেস্ক ।।   গত বছর বাংলাদেশে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪৬৬ জন। সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথের মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা ৬ হাজার ৪৮টি। এসব দুর্ঘটনায় মোট নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ৭৯৬ জন। আহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৮০।

এসব তথ্য বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০১৮’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

এ বিষয়ে তিনি জানান, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ২০১৮ সালের পাঁচ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ২২১ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে রেলপথের ৩৭০টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৯৪ জন, নৌপথের ১৫৯টি দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১২৬ এবং আকাশপথে পাঁচটি দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৫৫ জন।

অন্যদিকে, ১৫ হাজার ৪৬৬ জন আহতদের মধ্যে ১২৫২ জন চালক-শ্রমিক, ৮৮০ জন শিক্ষার্থী, ৩২১ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৭৮৭ জন নারী, ৪৮৭ জন শিশু, ১০৬ জন শিক্ষক, ৪৩ জন সাংবাদিক, ৩৩ জন চিকিৎসক, ৯ জন প্রকৌশলী, ২ আইনজীবী, ১৯২ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মী রয়েছেন।

যাত্রীকল্যাণ মহাসচিব জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৭ হাজার ৩৫০টি যানবাহনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এসব যানবাহনের মধ্যে ১৮.৯২ শতাংশ বাস, ২৮.৬৮ শতাংশ ট্রাক ও কাভ্যার্ডভ্যান, ৭.৯৩ শতাংশ কার জিপ ও মাইক্রোবাস, ৯.৬১ শতাংশ অটোরিকশা, ২৫.৩০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৩.৭২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৫.৮০ শতাংশই ছিল নছিমন, করিমন ও হিউম্যান হলার।

তিনি আরও জানান, এসব দুর্ঘটনাগুলো ৪১.৫৩ শতাংশ গাড়ি চাপায়, ২৯.৭২ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষে, ১৬.১৮ শতাংশ খাদে পড়ে, ০.৫৫ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ০.৮৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটেছে।

২০১৮ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান অনুযায়ি, গত বছরের জানুয়ারি মাসে ৪৯৯ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫১৪ জন, আহত ১৩৫৩ জন। ফেব্রুয়ারিতে ৪৩৯ দুর্ঘটনায় ৪৫৯ জন নিহত, আহত ১৫২১ জন; মার্চে ৪৯১ দুর্ঘটনায় নিহত ৫০৩ জন ও আহত ১৫০৬ জন; এপ্রিলে ৪৫১ দুর্ঘটনায় ৪৭১ জন নিহত ও আহত ১২২৩ জন; মে মাসে ৪৫৮ দুর্ঘটনায় ৪৮৪ জন নিহত ও আহত ১১২৭ জন; জুনে ৫২২ দুর্ঘটনায় নিহত ৬১৫ জন নিহত ও আহত ১৭৯০ জন; জুলাইয়ে ২৭৬ দুর্ঘটনায় নিহত ৪২৫ জন ও আহত ১১২২ জন; আগস্টে ৪৯১ দুর্ঘটনায় নিহত ৫১৯ জন ও আহত ১৬৩৮ জন; সেপ্টেম্বরে ৪২৩ দুর্ঘটনায় নিহত ৫১৪ জন ও আহত ১১৬৬ জন; অক্টোবরে ৩৯৫ দুর্ঘটনায় ৪৯৫ জন নিহত, ৭৭০ জন আহত; নভেম্বরে ৪৩২ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৩ ও আহত ৯৭৯ জন এবং ডিসেম্বরে ৫৩৭ দুর্ঘটনায় ৫৮৪ জন নিহত ও আহত হন ১২৭১ জন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে মহাসচিব বলেন, ‘বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো, রেল ক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা সহ আরও বেশ কয়েকটি কারণে এসব দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদের আলোকে সমিতির প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ি, ২০১৮ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়লেও হতাহতের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরেছে সংগঠনটি। সেখানে বলা হয়েছে- ট্রাফিক আইন, মোটরযান আইন ও সড়ক ব্যবহার বিধিবিধান সম্পর্কে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। একইসঙ্গে টিভি-অনলাইন, সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সড়ক সচেতনতামূলক বা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা, জেব্রাক্রসিং দেওয়া, চালকদের পেশাগত প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, যাত্রীবান্ধব সড়ক পরিবহন আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন, গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতিগত উন্নয়ন-আধুনিকায়ন, জাতীয় মহাসড়কে কমগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা এবং লাইসেন্স নবায়নের সময় চালকদের জন্য ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করার কথা এসেছে তাদের সুপারিশে।

সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানানোর পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে সড়ক নিরাপত্তা তহবিল গঠনের সুপারিশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সাবেক বিআরটিএর চেয়ারম্যান

 

ই-বার্তা /  তামান্না আলী প্রিয়া