সাদা মনের মানুষ সুব্রত ভট্টাচার্য-তৃতীয় পর্ব


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২০শে মে ২০১৭, শনিবার  | দুপুর ০২:০৩ দেশ

শিক্ষক হিসেবে সুব্রত ভট্টাচার্য ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। ছাত্রদের শুধু ভালোবাসতেন, করতেন না কোনো বেত্রাঘাত। যদিও সেসময়ে শিক্ষকগণের মাঝে ছিল ছাত্রকে বেত্রাঘাতের তীব্র প্রতিযোগিতা। হয়তো ছাত্রদের প্রতি তাঁর এই ভালোবাসাই তাঁকে আজ মহীয়ান করে তুলেছে। প্রিয় পাঠক, এখানে ছোট্ট একটি ইতিহাস আছে। ইতিহাসটি না বললে আমার এই লেখা কিছুটা অসম্পূর্ণ থাকবে। সুব্রত ভট্টাচার্য যেদিন শিক্ষক হয়ে প্রথম ডি এম একাডেমিতে ঢুকবেন, সেদিন ডি এম এর গেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রায় ৮০ বছরেরে একজন বৃদ্ধ। এই বৃদ্ধ মহৎ মানুষটি তাঁকে হঠাৎ ডেকে বলেছিলেন, "বাপোই মাস্টার হোছিস্ ভাল্ কতা। শোন্, ছাওয়া গুল্যাক ব্যান ডাংগাইস? ডাংগাইস ন্যা । বুচ্ছিস্? মহব্বত করিস"।পাঠকদের উদ্যেশ্যে সহজ করে লিখছি। ওই আঞ্চলিক কথাগুলো শুদ্ধ ভাষায় এরকম, “বাবা মাস্টার হয়েছিস ভালো কথা। বাচ্চাগুলোকে মারিস না। ভালবাসিস”। নাম না জানা এই বৃদ্ধটিই তাঁর ভালোবাসা ও মহব্বত গুরু।

অবশেষে ২০০৫ সালে তাঁর চাকুরিজীবনের সমাপ্তি ঘটলেও তৎকালীন সরকার ‘বাহাদুর’ পুরস্কার স্বরুপ তাঁর চাকুরির মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়িয়ে দেন। কিন্তু, "যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়"। শুরু যার আছে শেষ তার থাকবেই । ২০০৭ সালে বিদায়ের শেষ ঘন্টাটি বেজে উঠলো, তাঁর চাকুরি জীবনেরও ইতি ঘটলো। দীর্ঘ ৪৩ বছর যে মানুষটি ডি এম একাডেমিতেই তাঁর সমস্ত মেধা, শ্রম, অগ্নিদীপ্ত যৌবনের যবনিকাপাত ঘটালেন বিদায়ের দিনে সেই মহৎ মানুষটিকে একটা সামান্যতম সংবর্ধনাও ডি এম একাডেমি দিতে পারেনি। যদিও সুব্রত ভট্টাচার্যের এতে কোনোপ্রকার অনুযোগ কিংবা অনুরাগ নেই। তবে আবেগাপ্লুত সুব্রত ভট্টাচার্যের ভক্তহৃদয় মহৎ মানুষ ও ছাত্রগণ ডি এম স্কুলকে এ ব্যাপারে প্রশ্নবিদ্ধ না করে ছাড়বেন না।

স্বভাব । একটি ছোট্ট নাম । কিন্তু গুরুত্ত্ব অনেক । স্ব - মানে নিজ । স্ব- মানে বিবেক । স্ব- মানে আল্লাহ্ । স্ব- মানে সৃষ্টিকর্তা । আর ভাব - মানে ভালোবাসা । ভাব -মানে মিলন । ভাব - মানে সাধনা । অর্থাৎ নিজ, বিবেক, আল্লাহ্ বা সৃষ্টিকর্তার সাথে ভালোবাসা, মিলন এবং সাধনা করাই হচ্ছে স্বভাব । সুব্রত ভট্টাচার্য সাইকেলে চড়ে ভবের গান গেয়েই যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত । যে গানের কথাটি এরকম, "জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জলিয়াত খেলছে জুয়া । ছুঁলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতের নয়তো মোয়া”। যে গানের অমিয় সুর হয়তো এরকমও হতে পারে, "ওরে মুসলমানে বলে আল্লা, হিন্দু বলে ভগবান - সবার মাঝে বিরাজ করে সবাইকে দেখে সমান”। আবার এসব ধর্মজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক গানকে এক গ্লাসে গুলিয়ে খেয়ে সুব্রত ভট্টাচার্য বলছেন, "আঁধার পারেনা দিতে বিদায় আঁধারে - দিতে পারে শুধু আলো , ঘৃণাও পারেনা দিতে বিদায় ঘৃণারে তাই প্রেমাগ্নী জ্বালো”। স্বভাব দ্বারা সিদ্ধ আলোকিত সুব্রত ভট্টাচার্য জগতের কোনো মানুষকে যাতে ঘৃণার দৃষ্টিতে না দেখা হয় বারংবার এই আবেদনটুকু কথায় , কবিতায় , গানে ও গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরছেন । এজন্যেই তো তিনি সকলের অতি আপনজন ও শ্রদ্ধাভাজন একজন খাঁটি মানুষ হয়ে উঠছেন । আর খাঁটি মানুষ নাহলে কি এভাবে কেউ বলতে পারেন , "আমার স্বভাব এইতো"।

মোঃ রেজাউল করিম রেজা
(লেখাটি চলবে, চোখ রাখুন)

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ এর আরও সংবাদ