ধন্যবাদ গল্পের যাদুকর


ই-বার্তা প্রকাশিত: ১৩ই নভেম্বর ২০১৭, সোমবার  | দুপুর ০২:০৭ দেশ

ই-বার্তা।। তুমি আমার প্রথম সকাল, একাকী দুপুর, ক্লান্ত বিকেল বেলা। তুমি আমার সারাদিন, তুমি আমার সারাবেলা। লতিফুল ইসলাম শিবলীর গান থেকে চুরি করলাম দুটি লাইন, কাউকে উৎসর্গ করবো বলে। এই কেউ টা কোনো মানুষ নয়, আবার বলা যায় মানুষ। এই কেউ টা হোলো গল্পের বই। আর মানুষটি হলেন গল্পের যাদুকর। তিনি হুমায়ুন আহমেদ। যে গল্পের বইয়ের কথা বলছি, সেগুলো যে তাঁরই লেখা।

ঠিক গানের লাইনদুটির মতোই সকাল থেকে সারাদিন, সারাবেলা যে মানুষটি আমাকে বইয়ের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে পেরেছেন, তিনি একমাত্র হুমায়ুন আহমেদ। স্কুল-কলেজের ফাঁকে যেদিনই ছুটি থাকতো, আমার সারাটা দিন কাটতো এই মানুষটির যাদুকরী গল্পের সাথে। আর লম্বা ছুটি মানেই আমার পড়া বইয়েরও লম্বা তালিকা। বলছি আজ থেকে ছয় বছর আগের কথা।

মাত্র কয়েক বছর আগেই যে দিনরাত হুমায়ুন আহমেদের বইয়ে ডুবে থাকার জন্য মায়ের কাছে বকা খেতো, আজকাল সে একেবারেই বই পড়েনা। আর পড়লেও একেকটা বই শেষ করতে করতে মাস পেরিয়ে যায়। যে আমাকে নেশার মতো বই পড়তে শিখিয়েছে, তিনি হুমায়ুন আহমেদ। আবার যে আমাকে বই থেকে একেবারেই দূরে ঠেলে দিয়েছে, তিনিও হুমায়ুন আহমেদ। ছয় বছর আগেও প্রতিটি বইমেলার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। নিউজপেপার থেকে তালিকা করতাম এবারে নতুন কি কি বই কিনবো। বইয়ের তালিকায় একজন বা দুজন ছাড়া সবকটি লেখকের নামই এক। তিনি হুমায়ুন আহমেদ। আর এখন? বইমেলা কবে শুরু হয়ে কবে শেষ হয়ে যায় মনেই থাকেনা।

জানি, খুব স্বার্থপরের মতো বলা হয়ে যায়। অন্য লেখক কি দোষ করলো? অন্যরা কি ভালো লেখেনা? অবশ্যই লেখে। আমাদের দেশে ভালো লেখেন এমন অনেক


লেখক আছে। কিন্তু যার লেখা বইয়ের সাথে প্রেম হয়েছিলো আমার, তিনি লেখা বন্ধ করে দেয়ায় খুব অভিমান জমেছে মনে। এই অভিমান একটুও কমেনি আজো। খুব অসময়ে চলে গিয়ে আমার বই পড়ার অভ্যাস যিনি কেড়ে নিয়েছেন, তাঁর উপর তো অভিমান হবেই। যিনি আজ আমার বইমেলায় না যাওয়ার কারণ, তাঁর উপড়ে অভিমান তো হবেই।

হুমায়ুন আহমেদ চলে যাওয়ার পর তাঁর সর্বশেষ “দেয়াল” বইটি অনেকদিন মাথার কাছে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম। পাতা ওল্টাইনি অনেকদিন। কারণ ওই একটাই। এটিই তো শেষ। এরপর আর নতুন কোনো বই আসবেনা যার উপড়ে প্রিয় লেখকের নামটি থাকবে। মনে আছে হুমায়ুন আহমেদ মারা যাবার পর যেদিন “ঘেটুপুত্র কমলা” সিনেমাটি আবার দেখি, সিনেমার শেষে ঘেটুদল রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো আর গান হচ্ছিলো, “শুয়া উড়িলো উড়িলো জীবেরও জীবন”। বলা বাহুল্য এই দৃশ্যে দেখে কান্না আটকে রাখতে পারিনি। নিজের সর্বশেষ সিনেমার সর্বশেষ দৃশ্যে কেন জানি মনে হচ্ছিলো হুমায়ুন আহমেদ নিজের চলে যাওয়াই দেখিয়েছিলেন।

আজ এই গল্পের যাদুকরের ৬৯ তম জন্মদিন। সকাল থেকেই বারবার মনে পরছে তাঁর কথা। কখনো সামনা সামনি না দেখলেও তাঁর বইয়ের পাতা যখন ওল্টাতাম, মনে হতো হুমায়ুন আহমেদ আমার সামনেই বসে আছেন। আর ওনার মুখেই আমি শুনতে পাচ্ছি গল্পটি। খুব ইচ্ছা ছিলো একবার সত্যি সত্যি হুমায়ুন আহমেদের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে বলি, “ধন্যবাদ গল্পের যাদুকর, আমাকে বই পড়তে শেখানোর জন্য। ধন্যবাদ গল্পের যাদুকর, জীবনের সকল খারাপ সময়কে উপভোগ্য করবার জন্য। ধন্যবাদ গল্পের যাদুকর, পারিবারিক বন্ধনের আসল অর্থ বোঝানোর জন্য”।

শুভ জন্মদিন হুমায়ুন আহমেদ। যোজন যোজন দূরে থেকেও অনেক ভালো থাকুন, এই কামনা।

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ এর আরও সংবাদ