চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শেষ দেখা যেতে পারে যে সকল ক্রিকেটারদের


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২৯শে মে ২০১৭, সোমবার  | রাত ০৯:৫৯ ক্রিকেট

আর মাত্র কয়েকদিন পরই শুরু হচ্ছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০১৭। অংশ গ্রহণকারী আটটি দলই বহুল প্রতীক্ষিত এ টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশের মাটিতে ১৯৯৮ সালে আইসিসি নকআউট ট্রফি নামে শুরু হয়েছিল এ মর্যাদাকর টুর্নামেন্ট। এরপর ২০০২ আসর থেকে টুর্নামেন্টের নামকরণ হয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। যার শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে র্যাকিংয়ের শীর্ষ দলগুলো একে অপরের মোকাবেলা করে। টুর্নামেন্টের পরবর্তী আসরের আয়োজক ভারত। ২০১৯ বিশ্বকাপের দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হবে টুর্নামেন্টের নবম আসর। দুঃখজনক হলেও সত্যি অনেক খেলোয়াড়ই আছেন মূলত বয়সের কারণে এবারই শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলছেন।

এবারের আসরই শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হতে পারে এমন ছয় ক্রিকেটার:

১. মাশরাফি বিন মর্তুজা (বাংলাদেশ)
২০১৪ সালের শেষের দিকে পুনরায় বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব পান মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার নেতৃত্বে প্রথম সিরিজেই দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়েকে ৫ ম্যাচের সিরিজ হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। এরপর বিশ্বকাপের মঞ্চে কোয়ার্টারফাইনাল খেলে টাইগাররা। বিশ্বকাপে এটি ছিলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন।

ঐ অর্জনে রোমাঞ্চিত হয়ে মাশরাফির নেতৃত্বে দেশের মাটিতে টানা পাঁচ ওয়ানডে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। পাকিস্তান-ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা-জিম্বাবুয়ে-আফগানিস্তানকে হারায় টাইগাররা। এতে নবম থেকে র্যাংকি-এ সপ্তমস্থানে উঠে সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। আজ সেই মাশরাফির নেতৃত্বেই আগামী পহেলা জুন থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ।

ইনজুরির কারণে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অনেক আগেই বহুদূরে সড়ে গেছেন মাশরাফি। সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকেও বিদায় বলেছেন তিনি। বাকী ওয়ানডে। এটিকেও বিদায় বলে দিবেন কোন একদিন। সেই একদিন নিশ্চিতভাবেই ২০১৯ বিশ্বকাপের পর অথবা তার আগে। তবে এবারের আসরই হতে পারে মাশরাফির শেষ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তাই বিশ্বকাপের পরই দ্বিতীয় মর্যাদাকর আসর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তার বিদায়টা স্মরণীয় হোক, তা মনে প্রাণে চাইবে ১৬ কোটি বাঙ্গালি এবং ম্যাশ নিজেও।

২. মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)
গত এক দশক ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম ভরসার নাম মহেন্দ্র সিং ধোনি। ভারতীয় দলে প্রধান তিনটি দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করেছেন তিনি। ব্যাটিং-উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব ছাড়াও অধিনায়কত্ব করে বুদ্ধিমত্তার সাথে। তার নেতৃত্বে আইসিসি টেস্ট র্যাংকিং-এর শীর্ষে, ২৮ বছর পর ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয় এবং টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে ভারত। বাকী ছিলো আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়। সেটিও গতআসরে পূর্ণ করেছেন ধোনি। গত আসরের ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করে টিম ইন্ডিয়া। ফলে আইসিসির সকল ইভেন্টই ধোনির নেতৃত্বে জয় করে ভারত। তাই ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক এখন ধোনিই।
আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বিরাট কোহলির নেতৃত্বে খেলবেন ধোনি। তাই ব্যাটিং ও উইকেটরক্ষকের দায়িত্বটাই এখন মুখ্য বিষয় ধোনির কাছে। তারপরও কোহলিকে অধিনায়কত্বের সকল টিপস ঠিকই দিবেন ধোনি। যা আগেও দেখা গিয়েছিলো, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। ৩৫ বছর বয়সী ধোনি, ব্যাটসম্যান হিসেবে সব সময়ই ভয়ংকর। খাদের কিনারা থেকে ভারতকে অনেক ম্যাজে জয় এনে দিয়েছেন তিনি। তবে এবারই তার ক্যারিয়ারের শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তাই শেষ টুর্নামেন্টকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যাট হাতে ধোনির বিধ্বংসী ধারাবাহিকতা প্রত্যাশা ভারতবাসীর।

৩. যুবরাজ সিং (ভারত)
ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম এক সেরা যোদ্ধা ভারতের যুবরাজ সিং। শুধুমাত্র ২২ গজেই নয়, জীবন যুদ্ধেও জয়ী তিনি। মরণব্যাধি ক্যান্সারের বিপক্ষে লড়াই করে জয় নিয়ে মাঠে ফিরেছেন এবং নিজেকে বড় ম্যাচে হিরো হিসেবে প্রমাণ করেছেন মৃত্যুঞ্জয়ী খেলোয়াড় যুবরাজ। ২০০০ সালে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে নামেন যুবরাজ। এর পরের তিন আসরেও খেলেন তিনি। তবে ইনজুরি এবং অন্যান্য কারণে ২০০৯ ও ২০১৩ সালের আসরে খেলা হয়নি তার। যুবরাজ সবসময়ই প্রমাণ করেছে বড় আসরের বড় ধরনের পারফর্মার এবং দলের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২১ সালে পরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আর নাও দেখা যেতে পারে যুবরাজকে। কারণ তার বয়স এখন ৩৫। ২০১৯ বিশ্বকাপের পরই ক্রিকেট বিদায় জানানোর পরিকল্পনা হয়তো করে রেখেছেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান।

৪. লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলংকা)
ডেথ বোলার হিসেবে শ্রীলংকার পেসার লাসিথ মালিঙ্গার সুখ্যাতি ক্রিকেট বিশ্বে আকাশ ছোয়া। গেল কয়েক বছর ধরে লংকান জার্সি গায়ে সেটিই দেখিয়ে আসছেন তিনি। ২০০৪ সালে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে নামেন মালিঙ্গা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় বর্তমানে তৃতীয়স্থানে রয়েছেন তিনি। ১৩ ম্যাচে ২২ উইকেট শিকার করেছেন মালিঙ্গা। বর্তমান শ্রীলংকার অনভিজ্ঞ স্কোয়াডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড় মালিঙ্গা। তবে আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাকে আর দেখা যাবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ তরুণদের নিয়েই দল গড়তে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে শ্রীলংকা। তাই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে মালিঙ্গার বিদায়টা রঙ্গিন করতে চাইবে বর্তমানের তারুণ্য-নির্ভর দলটি।

৫. শোয়েব মালিক (পাকিস্তান)
একসময় পাকিস্তানের মিডল-অর্ডারে ভরসার নাম ছিলেন সাবেক অধিনায়ক শোয়েব মালিক। মিসবাহ-উল-হক ও ইউনিসর খানের পরই তাকে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু নিজেকে সেভাবে প্রমাণ করতে পারেননি তিনি। তবে সম্প্রতি সময়ে ব্যাট হাতে দারুন সাফল্য পাওয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে আছেন তিনি। তবে আগামী আসরে তাকে নাও দেখা যেতে পারে। কারণ ২০১৯ বিশ্বকাপের পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন মালিক। পাকিস্তানের হয়ে এখন পর্যন্ত ২৪৭ ওয়ানডেতে ৯টি সেঞ্চুরি ও ৩৯টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৬৭১১ রান করেছেন মালিক।

৬. এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা)
আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দিবেন বিশ্বের অন্যতম মারকুটে ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স। তার নেতৃত্বে ১৯ বছর পর আবারো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছে প্রোটিয়ার। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম আসর, অর্থাৎ আইসিসি নক-আউট টুর্নামেন্টে হ্যান্সি ক্রনিয়ের নেতৃত্বে বাজিমাত করেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর কখনো আইসিসির কোন ইভেন্টেই সেরা সাফল্য পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। তাই ‘চোকার্স’ শব্দটি প্রোটিয়াদের গায়ের সাথে এঁটে গেছে শক্তপোক্তভাবে।

তবে চোকার্স’ শব্দটি এবারাই মুছে ফেলতে ব্যাকুল ডি ভিলিয়ার্স। কারণ এবারের আসরটিই তার শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ২০১৯ বিশ্বকাপের পরই ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চান ডি ভিলিয়ার্স। দক্ষিন আফ্রিকার হয়ে ২১৭টি ওয়ানডে ম্যাচে ২৪টি সেঞ্চুরি ও ৫২টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৯২২০ রান করেছেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুত সেঞ্চুরির অনন্য রেকর্ডের মালিক এই ডি ভিলিয়ার্স। ২০১৫ সালে জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৩১ বলে দ্রুত সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স।

সর্বশেষ সংবাদ

ক্রিকেট এর আরও সংবাদ