বৃষ্টি পড়ে টাপুড় টুপুড় নদে এলো বান


ই-বার্তা প্রকাশিত: ১৪ই জুন ২০১৭, বুধবার  | রাত ০৮:৩৩ দেশ

আফিফা মোহসিনা অরণি।। আজ পহেলা আষাঢ়। বর্ষার প্রথম দিন। বাংলার বুকে তীব্র গরমের পর স্বস্তির বৃষ্টি নামার সময়। তবে এবারে বর্ষা অনেক আয়োজন করে বেশ আগে থেকেই তার উপস্থিতি জানান দিয়েছে। আকাশে মেঘের আনাগোনা তো আছেই, সেইসাথে বর্ষা শুরুর আগেই ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে সারা দেশে কয়েকবার।

ঋতু বৈচিত্রের বাংলাদেশে ছয় ঋতুর মধ্যে বর্ষার স্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আষাঢ় ও শ্রাবণ এ দু’মাস বর্ষাকাল। মেঘের গুরু গর্জন, চকিত বিদ্যুৎ, একটানা ঝম ঝম বৃষ্টি, উদ্দাম বাতাস, চারদিকে থৈ থৈ পানি, সতেজ গাছপালার সবুজ রূপ বাংলাদেশকে অপরূপ সাজে সাজায়।

ধুলিকণাময় বাংলাদেশকে ধুয়ে মুছে করে পবিত্র। নদী-নালা, খাল-বিল কানায় কানায় হয় পূর্ণ। কদম, কেয়া, জুঁই, চামেলী ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা হয় ফুলবন।

প্রকৃতি নববধুর সাজে সজ্জিত হয়। বৃষ্টির পানিতে খাল-বিল, নদী-নালা ভরে যায়। বর্ষা বাংলাদেশে কৃষকের ঘরে এনে দেয় নতুন কর্মব্যস্ততা। আমন ধানের বীজ বুনতে লেগে যায় কৃষকেরা। বৃষ্টির প্রাচুর্য আর পথ-ঘাটের কাদা উপেক্ষা করে চলে জীবন যাপন।


এই অপরুপ সাজের বাইরেও বর্ষার একটি করুণ রুপ আছে। একটানা বর্ষণে ডুবে যায় মানুষের ঘর-বাড়ি, ফসলের মাঠ, পথ-ঘাট। দেশের নিম্নাঞ্চলগুলোতে দেখা দেয় বন্যা। এর ফলে গৃহহীন হয় অনেক অসহায় মানুষ। ফসলের ক্ষতি হয় গরীব কৃষকের। প্রায় ডুবন্ত ঘরবাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করে তাঁরা।


এই তো গেলো গ্রামের বর্ষার চিত্র। আসা যাক নগর জীবনে। বর্ষায় ঢাকার অসংখ্য রাস্তায় পানি জমে যাওয়া একটি নিয়মিত চিত্র।

অবিরাম টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট যানজট নগরবাসীর দুর্দশা কল্পনাতীতভাবে বাড়িয়ে দেয়। জলাবদ্ধতা ও যানবাহন সঙ্কটের ফলে সকাল থেকেই নগরবাসীকে চলাফেরায় পোহাতে হয় দুর্ভোগ। ভোগান্তিতে জনজীবন হয়ে পড়ে প্রায় স্থবির। খানাখন্দে ভরা রাস্তাগুলো যেন দুর্ঘটনার অদৃশ্য ফাঁদ। নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে যেখানে রাস্তা-ঘাট কাটা হয়েছে, ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি গেছে, সেখানে পানির নিচে অদৃশ্য হয়ে যায় গর্তগুলো। এতে যত্রতত্র রিক্সা ও সিএনজি পড়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। শত শত যাত্রী আহত হয়।

সুযোগ বুঝে যানবাহনের ভাড়াও এক লাফে দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যায় শুধু তাই নয়, চালকেরাও চলে তাদের মেজাজ মর্জি মতো। ফলে গন্তব্যে যেতে চাইলে নাগরিকদের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। এ সমস্যার কোনো সুরাহা হয় না। নগরীর বিভিন্ন এলাকার পানি নিষ্কাশনের যেসব ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলোতে এখনও অনেক প্রতিবন্ধকতা। অধিকাংশ ড্রেনই নানারকম ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।

সাম্প্রতিক কিছু কাজে দুর্ভোগ কিছুটা কমার কথা থাকলেও কমছেনা। এতে করে বর্ষা যেন নগরবাসীর কাছে এক আতঙ্কের নাম হয়ে গেছে।

বাংলার এমন কোনো কবি, গল্পকার বা গীতিকার নেই যে তাঁর লেখায় বর্ষার বন্দনা করেনি। বর্ষার অপরুপ রুপ অন্য সব ঋতুকে হার মানায়। একটু সহযোগিতা ও সচেতনতা থাকলে নগরবাসীও সাদরে গ্রহণ করবে বর্ষাকালকে।

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ এর আরও সংবাদ