জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৩রা আগস্ট ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার  | সকাল ১১:৫১ দেশ

ই-বার্তা।। জলবায়ু পরিবর্তন কথাটি মানুষের কাছে আর নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশ যে এই জলবায়ূ পরিবর্তনের অন্যতম ভুক্তভোগী তা বুঝতে কারোর বাকি নেই। এটি বোঝার জন্য খুব বেশি নয়, আজ থেকে মাত্র ২০ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশের আবহাওয়া তুলনা করলেই তা বোঝা যাবে। ষঢ়ঋতুর দেশ হিসেবে পরিচিত এই দেশটির ঋতুচক্রকে এখন চেনাই যায়না। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের স্থায়ীত্বকাল ও রুক্ষতাও যেন বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপিয়ান এনজিও “জার্মান ওয়াচের” মতে গত ২০ বছরে বাংলাদেশ প্রকৃতির সবচেয়ে বেশী কোপানলে পড়ে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লোক শুধুমাত্র না খেতে পেরে মারা যাবে। শিশুদের অপুষ্টির পরিমাণ হবে ৬৭ ভাগ, যা বর্তমানে শতকরা ৪৬ ভাগ। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে যে দশটি দেশ খাদ্য-স্বল্পতার হুমকির মুখে আছে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে একটি।

সমুদ্রের উচ্চতা মাত্র ১ মিটার বাড়লে দেশের মোট আয়তনের শতকরা ১৮ ভাগ ক্ষতিগ্রস্থ হবে ও দেশের শতকরা প্রায় ১১ ভাগ লোক সরাসরি ক্ষতির মধ্যে পড়বে। ইতিমধ্যেই কোথাও কোথাও সাগরের উচ্চতা বেড়ে গেছে। কক্সবাজার থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরে ২৫০ কিলোমিটার কুতুবদিয়া গ্রাম গত একশো বছরে সংকুচিত হয়ে ৩৭ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। ইউএনডিপির হিসেব মতে এই হারে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়তে থাকলে দেশের ১৫-১৮ শতাংশ আয়তন পানির নীচে তলিয়ে যাবে ও প্রায় ৩০ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে যেতে পারে। সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ায় সমুদ্রতীরবর্তী জেলাগুলোর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। চিংড়ি চাষ দ্বারা কিছু লোক হয়ত উপকৃত হচ্ছে, কিন্তু বেশীরভাগের জন্যই এই লবণাক্ততা অভিশাপ বয়ে এনেছে।

গ্রীনহাউজ গ্যাস কমানোর জন্য বিশ্বব্যাপী একধরণের সচেতনতা তৈরী হলেও শেষপর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না কেউ। এর জন্য দায়ী প্রধাণত উন্নত দেশগুলো। গ্রীন হাউস গ্যাস কমানোর জন্য ১৯৯০ সালে বিশ্বনেতৃবৃন্দ কিয়োটো প্রটোকলকে গ্রহণ করতে সন্মত হলেও শেষপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র তাতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে। তারপর ২০০৯ সালেও কোপেনহেগেন সন্মেলনে গ্রীনহাউস গ্যাস কমানোর ব্যাপারে একটি সমাধানে আসতে নেতৃবৃন্দ ব্যর্থ হয়। কানাডার স্টিফেন হারপারের সরকারও কোপেনহেগেনের কিয়োটো প্রটোকল থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। কানাডার সরিয়ে নেবার কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী কার্বন নিঃসরণকারী যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এই প্রটোকলে না থাকা।

উন্নত দেশগুলোতে জলবায়ুর পরিবর্তনকে অস্বীকার করার একটা মানসিকতা বিরাজ করে। নিজেদের লাগামহীন সম্পদের ব্যবহার অস্বীকার করে উলটো দরিদ্র দেশগুলোকেই এই কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী করে। তাদের যুক্তি অন্যযায়ী দরিদ্র দেশগুলোর বর্ধমান জনসংখ্যা এই জলবায়ুর বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। দরিদ্র দেশগুলোতে উন্নত দেশগুলোর চেয়ে জনসংখ্যার বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে বেশী এবং তা যে জলবায়ুর পরিবর্তনে ভুমিকা রাখছে না তা বলার উপায় নেই। কিন্তু তারপরও এই জনসংখ্যার বৃদ্ধির প্রভাব উন্নত দেশগুলোর করা প্রভাবের চেয়ে কমই হবে। কারণ, উন্নত দেশগুলোতে জনপ্রতি এনার্জি গ্রহণের হার অনেক বেশী যা প্রায় ২০ গুণ বেশী। অপরদিকে জলবায়ূ পরিবর্তনের ক্ষতি সবচেয়ে বেশী বহন করছে দরিদ্র দেশগুলোই। প্রাকৃতিক দূর্যোগের শতকরা ৯৫ ভাগ ঘটে দরিদ্র দেশগুলোতে যাতে জলবায়ূর পরিবর্তন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী।

তবে আশার কথা এই যে, পরিবেশের এই বিপর্যয়কে রুখতে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ১৫০,০০০ ইউ এস ডলার দিয়ে সাইক্লোন শেল্টার তৈরী করেছে ও সাথে যোগ করেছে সতর্কতামূলক পূর্বাভাস। লবণাক্ততা সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন ধান উৎপাদন করেছে বাংলাদেশের ধান গবেষণাকারী বিজ্ঞানীরা। জলবায়ুর এই পরিবর্তনের কারণে সহ্যশক্তি বাড়ানোর জন্য গত তিন দশকে বাংলাদেশ প্রায় ১০ বিলিয়ন ইউএস ডলার খরচ হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ এর আরও সংবাদ