ভালো নেই, কারন এখানে বাবা নেই : রোহিঙ্গা শিশু


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার  | দুপুর ১২:৫৮ অন্যান্য

ই-বার্তা ।। মিয়ানমার থেকে আসা লাখো রোহিঙ্গা শরণার্থী যারা অমানিবিক অত্যাচার নির্যাতনের মুখে তাদের দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসেছে তাদের মধ্যে একজন নূর কাজল, বয়স ১০। তার নতুন ঠিকানা হয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে।

নূর কাজল আল-জাজিরার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ক্যাটি আর্নল্ডেকে একটি ইন্টার্ভিউ দেয়। সেখানে সে এমন কিছু তথ্য জানায় যা একটি ১০ বছরের শিশুর জানা উচিত না এবং একটি শিশুর অভিজ্ঞতা এতোটা ভয়াবহ হতে পারে তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়ে যায়। কাজলের সেই কথা গুলো দেয়া হল ই-বার্তার পাঠকদের জন্য -

“আমার নাম নূর কাজল, বয়স ১০ বছর। সপ্তাহ খানেক আগে আমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসি। পুরাতন গ্রামে আমরা খুব সুখে ছিলাম। আমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছিলাম। পবিত্র কোরআন শরিফ শিখতে পছন্দ করতাম। আমি চেয়েছিলাম পবিত্র কোরআন মুখস্ত করতে। আমি পরিবারের সঙ্গেই বসবাস করছিলাম। পরিবারে সদস্য ছিল সাতজন। বাড়িটা খুব বেশি বড় ছিল না; কিন্তু আমি বাড়িতে থাকতেই পছন্দ করতাম। সেনাবাহিনী গুলিবর্ষণ করার কারণে বাড়ি ছেড়ে আমাদের পালাতে হয়। যখন তারা ঘরের জানালার মধ্যদিয়ে বাবাকে গুলি করে, তখন আমি বাড়ির ভেতরে বাবার সঙ্গে ছিলাম। মাথায় বুলেটের আঘাতে বাবা মাটিতে পড়ে যান এবং প্রচুর রক্ত তার মাথা থেকে বের হয়ে আসে। এতে অমি খুবই ভয় পেয়েছিলাম। অনেক কেঁদেছি। জীবন বাঁচাতে আমরা বাবাকে ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে যাই। বাবা ঘরের ভেতর থাকা অবস্থায় সেনাবাহিনী আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। পালিয়ে আমরা কয়েকটি গাছের আড়ালে যাই।”

নূর কাজল আরও বলে, “তারপর আমরা তিনদিন হেঁটে বাংলাদেশে আসি। এটা ছিল আমার জন্য ভয়ংকর এক কাজ। কারণ আমি ভীষণ ক্ষুধার্ত ছিলাম এবং বার বার বাবার কথা মনে পড়ছিল। সীমান্ত পার হওয়ার সময় কিছু মানুষ আমাদের সহযোগিতা করে। তারা টাকা ছাড়াই নদী পার করে দেয়। আমরা একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পাড়ি জমাই। নৌকায় চড়ে আমার ভালো লাগেনি। কারণ তখনও বাবার কথা মনে পড়ছিল বার বার। বাবা ছিলেন কাঠুরে। সবাই তাকে পছন্দ করতেন। তিনি খুবই ভালো স্বভাবের মানুষ ছিলেন। আমাকে অনেক ভালবাসতেন।”

নূর কাজল বলে বাংলাদেশে সে ভালো নেই। “কারণ এখানে আমার বাবা নেই। তাছাড়া এখানে কোনো টয়লেট নেই, বাথরুম নেই, খুবই নোংরা অবস্থা। আমি চাই আমাদের দেশে ফিরে যেতে। অথবা অন্য কোনো দেশে যেতে, যেখানে অন্তত আমরা বসবাস করতে পারব”- বলে নূর কাজল।

সর্বশেষ সংবাদ

অন্যান্য এর আরও সংবাদ