নববর্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী


ই-বার্তা প্রকাশিত: ১৪ই এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার  | রাত ১২:৪০ বিশেষ প্রতিবেদন

নতুনের আবাহনে হাজির হলো বাংলা নতুন বছর ১৪২৪ । সকল জীর্ণতা ভুলে আজ শুধুই চিরসবুজ আর নতুনকে স্বাগত জানানোর দিন। নববর্ষের প্রথম ভোরে সুরে সুরে বৈশাখকে স্বাগত জানাবে গোটা বাংলাদেশ।যার সূচনা রমনা বটমূল থেকে। ক্ষণে ক্ষণে তা ছড়িয়ে পড়বে নগর থেকে নগরে।

বৈশাখ বরণের প্রাক্কালে পৃথক পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো: আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা বাসসের সৌজন্যে তা ই-বার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো ।

রাষ্ট্রপতির বাণী
‘বাংলা নববর্ষের মধ্যে নিহিত রয়েছে বাঙালির আত্মপরিচয়, উত্থান এবং জাতিসত্তা বিকাশের শেকড়।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘স্বাধীনতা পূর্বকালে আমাদের সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভিন্নধারায় প্রবাহিত করতে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ভিনদেশি সংস্কৃতি। কিন্তু বাঙালি জাতি তা কখনো মেনে নেয়নি। তাই তো প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা বিকাশের প্রবল শক্তি নিয়ে উপস্থিত হয়।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সর্বজনীন এই উৎসবটি বাঙালির জীবনাচার, চিন্তা-চেতনা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে একাকার হয়ে। বাংলা নববর্ষ তাই কেবল আনুষ্ঠানিকতানির্ভর কোনো উৎসব নয়; তা বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শেকড় সন্ধানের মহান চেতনাবাহী দিন।’
মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাঙালির লোকসংস্কৃতির সাথে বাংলা নববর্ষ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বাংলার লোকজ-সংস্কৃতির মূল্যবান অনুষঙ্গ যেমন- যাত্রাগান, পালাগান, পুতুলনাচ, হালখাতা, অঞ্চলভিত্তিক লোকসংগীত, খেলাধুলাসহ গ্রামীণ মেলা যেমন প্রাণ ফিরে পায়, তেমনি বাংলার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প হয়ে ওঠে উজ্জীবিত। ব্যবসা বাণিজ্যেও এর ইতিবাচক প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষের এই বর্ণিল উদযাপন মানুষের মাঝে অনাবিল আনন্দ, উৎসাহ-উদ্দীপনা আর সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত। পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ২০১৬ সালে জাতিসংঘের ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে, যা বাঙালি হিসেবে বিশ্বের বুকে আমাদের মর্যাদাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।’
মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাংলা নববর্ষের চেতনা অব্যাহত রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে প্রেরণা এবং শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। অতীতের গ্লানি, দুঃখ, জরা মুছে, অসুন্দর ও অশুভ পেছনে ফেলে নতুন কেতন উড়িয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ জাতীয় জীবনে আরো সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক-এ প্রত্যাশা করি।’

প্রধানমন্ত্রীর বাণী
‘বাঙালি জাতি বর্ষবরণ উৎসবকে ধারণ করেছে তাদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হিসেবে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা প্রগতি এবং অগ্রগতির দিকে ধাবিত হচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিগত বছরটি ছিল বাংলাদেশের জন্য প্রভূত সাফল্যময়। বাংলাদেশ আজ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশ্বের ‘রোল মডেল’।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অতীতের ভুলত্রুটি এবং গ্লানি ভুলে জীবনের সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় আমরা আশায় বুক বাঁধি নতুন বছরের প্রথম দিনে। দেনা-পাওনা চুকিয়ে নতুন করে শুরু হয় জীবনের জয়গান। পয়লা বৈশাখ তাই যুগ যুগ ধরে বাঙালির মননে-মানসে শুধু বিনোদনের উৎস নয়, বৈষয়িক বিষয়েরও আধার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলা নববর্ষের উন্মেষ মূলত গ্রামীণ জীবন ঘিরে। হালখাতা উৎসব এবং গ্রামীণ মেলা ছিল একসময়ের মূল আকর্ষণ। হালখাতা এবং মেলাকে কেন্দ্র করে জারি, সারি, পালাগানের আসর বসত এবং গ্রামীণ পণ্যের বেচাকেনা হতো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামীণ বৈশাখী উৎসব কালক্রমে প্রবেশ করেছে নগর জীবনে। দেশের প্রতিটি শহরেই পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ ঘিরে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। রাজধানী ঢাকায় আটের দশকে সংযোজন হয়েছে বাড়তি আয়োজন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’, যা গত বছরের ৩০ নভেম্বর জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে পণ্যের বিকিকিনি, হালখাতা উৎসব, নতুন পোশাক এবং মিষ্টান্নসহ হরেক রকমের খাবারের জমজমাট ব্যবসা- সব মিলিয়ে বাংলা নববর্ষ বিনোদনের পাশাপাশি আজ দেশের অর্থনীতিতে সঞ্চার করেছে নতুন গতি। বাঙালির এই শাশ্বত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে বর্তমান সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাংলা নববর্ষ উৎসব ভাতা প্রবর্তন করা হয়েছে।’

সর্বশেষ সংবাদ

বিশেষ প্রতিবেদন এর আরও সংবাদ