সাদামাটা এক রাষ্ট্রপতির গল্প


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৪ঠা নভেম্বর ২০১৭, শনিবার  | দুপুর ০২:০৫ আন্তর্জাতিক

ই-বার্তা।। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে একজন প্রেসিডেন্টের জীবন ধারা কেমন হতে পারে, তা সবারই জানা। প্রথাগত এসব ঠাটবাটের বালাই নেই। জীর্ণ খামার নিয়ে খুব সাধারণ এক মানুষের মতো দিন গুজরান করছেন তিনি। আরাম-আয়েশের সরকারি সব সুযোগ দূরে ঠেলে বেছে নিয়েছেন সাধারণ মানুষের জীবন। বলা হচ্ছিলো লাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে মুজিকার কথা।

সরকার প্রেসিডেন্ট হোসে মুজিকার জন্য বিলাসবহুল সরকারি বাসভবন বরাদ্দ করেছিল। তবে তিনি সেই বাড়িতে যাননি। প্রেসিডেন্ট হলেও তিনি থাকেন রাজধানী মন্টেভিডিও থেকে বেশ দূরে স্ত্রীর খামারবাড়িতে। স্ত্রীর সঙ্গে ফুলের চাষ করেন। আয়ের বেশির ভাগ অংশই ব্যয় করেন দাতব্য কাজে। মুজিকার বাড়ির বাইরে কাপড় কাচার ঘর। মাঠের এক কূপ থেকে পানি তোলা হয়। কূপের চারপাশটা আগাছায় ভরা। প্রেসিডেন্টর এই বাসভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে মাত্র দুজন পুলিশ। আর রয়েছে কুকুর ম্যানুয়েলা।

২০১০ সালে প্রেসিডেন্ট হোসে মুজিকা তাঁর সম্পদের বিবরণ দেন। এতে দেখা যায়, তাঁর সম্পদের পরিমাণ মাত্র এক হাজার ৮০০ ডলার। এ বছর তিনি তাঁর স্ত্রীর অর্ধেক সম্পদও এই বিবরণে যোগ করেন। এতে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই লাখ ১৫ হাজার মার্কিন ডলার। তবে তাঁর এই সম্পদ দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট দালিনো অ্যাস্ত্রোরির ঘোষিত সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ। আর মুজিকার পূর্বসূরি প্রেসিডেন্টের সম্পদের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। মুজিকা তাঁর মাসিক আয়ের ৯০ শতাংশই দাতব্য কাজে দেন। এর মূল্যমান প্রায় ১২ হাজার মার্কিন ডলার।

মুজিকা বলেন, আমাকে বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট বলা হয়। আমার তা মনে হয় না। যারা শুধু ব্যয়বহুল জীবনযাপনের জন্য কাজ করে, সব সময় আরও বেশি বেশি চায়; তারাই গরিব। তিনি আরও বলেন, অনেক বেশি বিত্তবৈভব না থাকলে সারাজীবন শুধু দাসের মতো কাজ করার কোনো দরকার নেই; বরং ওই সময়টা নিজেকে দিন। আমাকে পাগল বা পালগাটে বৃদ্ধ মনে হতে পারে। কিন্তু এটা আমার নিজের পছন্দ।

মুজিকা ষাট ও সত্তরের দশকে উরুগুয়ের গেরিলা সংগঠন তুপামারোসের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। কিউবার বিপ্লবে অনুপ্রাণিত হয়ে উরুগুয়ের বামপন্থীরা এই গেরিলা সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। গেরিলা জীবনে তিনি ছয়বার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং ১৪ বছর কারাভোগ করেছেন। কঠোর শর্ত আর একাকিত্বের মধ্যেই বন্দিজীবন কাটাতে হয়েছে তাঁকে। দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরলে ১৯৮৫ সালে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে বন্দিজীবন তাঁকে এমন জীবনদর্শন শিখিয়েছে বলে জানালেন মুজিকা। প্রায় ৭৮ বছর বয়সে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেন।

সর্বশেষ সংবাদ

আন্তর্জাতিক এর আরও সংবাদ