ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বেড়া ভেঙে ফেলার হুমকি


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৭ই নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার  | সকাল ১০:৩২ এশিয়া

ই-বার্তা।। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানো নিয়ে দীর্ঘদিনের যে বিতর্ক, সেই বেড়া ভেঙে ফেলার হুমকি দিলো মেঘালয়ের সাউথ গারো হিলস জেলার একদল গ্রামবাসী। তারা সরকারকে রীতিমতো স্মারকলিপি দিয়ে জানিয়েছে যে, বেড়া বসানোর জন্য তাদের যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তার ক্ষতিপূরণ না পেলে এ সপ্তাহের মধ্যেই বেড়া ভেঙে দেওয়া হবে।

‘ইন্দো-বাংলা বর্ডার ফেন্সিং ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (ইবফ্লোয়া) নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে সম্প্রতি এই হুমকি দেওয়া হয়। ইবফ্লোয়া’র সদস্যরা প্রায় সবাই মেঘালয়ের সাউথ গারো হিলস জেলার বাঘমারা এলাকার বাসিন্দা। ওই এলাকার ডাবরামে রীতিমতো বৈঠক ডেকে সংগঠনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সরকারের কাছ থেকে টাকা না মিললে সীমান্তের বেড়াও আর থাকতে দেওয়া হবে না।

ওই অঞ্চলের গ্রামবাসীদের কাছ থেকে ভারত সরকার বেড়া বসানোর জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছিল প্রায় চব্বিশ বছর আগে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসাতে জিরো পয়েন্ট থেকে অন্তত দেড়শো মিটারের দূরত্ব রাখতে হয়। সে কারণেই ওই এলাকার কৃষকদের বেশ কিছু ধানি জমি বেড়ার ওপারে চলে যায়। কিন্তু সেই জমির জন্য চাষীদের যে আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, ভারত সরকার আজও তা পরিশোধ করেনি।

ইবফ্লোয়া’র সম্পাদক ক্রসবেল এন সাংমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। ন্যায্য পাওনার জন্য আর কত বছর আমাদের অপেক্ষা করতে হবে? আমাদের ধৈর্য শেষ, আর সে কারণেই আমরা স্থির করেছি বুধবারের (৮ নভেম্বর) মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা না পেলে আমরা সীমান্তের বেড়া ভেঙে দেবো।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সদস্য যে কৃষকরা, তাদের কাছে চাষ করার জমি নেই। অনেকে দারিদ্র্য সইতে না পেরে শেষ সম্বল জমিটুকুও বেচে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বেড়ার বাইরের পাশে আমাদের উর্বর কৃষিজমি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এ কারণেই আমরা বেড়া ভেঙে ওই জমির দখল নেবো বলে স্থির করেছি।

বাঘমারা এলাকায় বাতলাবন, কানাই, চেংনি, গুলপানি, রোঙ্গারা, ডাম্বুকাপাল, পান্ডাসহ অনেকগুলো গ্রামের কয়েকশ’ কৃষক এই জমি উদ্ধারের অভিযানে শামিল হবেন বলেও জানানো হয়েছে। এই গ্রামগুলোর প্রায় সবই বাঘমারার কাছে গাসুয়াপাড়া সীমান্ত রুট বরাবর অবস্থিত, যার অন্য দিকে রয়েছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলা।

সাউথ গারো হিলসের পুলিশ সুপার এ টি সাংমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও গ্রামবাসীর হুমকি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। এই কারণেই সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জেলার পুলিশ প্রধান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আমি বলতে পারবো না। সেটা জেলা প্রশাসন দেখছে। তবে সীমান্ত এলাকায় গণ্ডগোল বাঁধানোর চেষ্টা হচ্ছে এটা সত্যি। আর সে কারণেই সেখানে পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। আমরা কোনও কোনও জায়গায় বিএসএফ বা সীমান্তরক্ষীদের সাহায্য নিচ্ছি।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যখন কাঁটাতারের বেড়া বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন সেই সিদ্ধান্ত ছিল পুরোপুরি দিল্লির। ঢাকার তাতে যে খুব একটা সায় ছিল- তা বলা যাবে না। দুই দেশের মধ্যকার চার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা সীমান্তের যেসব জায়গায় বেড়া বসানো হয়েছে, তার পুরো খরচ তাই ভারতই বহন করেছে।

কাঁটাতারের বেড়া বসানোর জন্য বহু জায়গাতেই ভারতীয় কৃষকদের চাষের জমি হারাতে হয়েছে। অনেক জায়গাতে স্থানীয় বাসিন্দারা তীব্র বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। কিন্তু মেঘালয়ে যেভাবে কৃষকরা এবার কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে ফেলার কথা ঘোষণা করেছেন, সেই নজিরবিহীন হুমকিতে রীতিমতো দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে প্রশাসনের কপালে।

সর্বশেষ সংবাদ

এশিয়া এর আরও সংবাদ